প্রবীর সিকদার


সাধারণ অর্থে পিস কমিটির কি কাজ ছিল তা সবার জানা। জানা রাজাকারের কাজও। রাজাকার ও পিস কমিটির সদস্য সমার্থক হয়ে গেছে। যদিও একাত্তরে রাজাকার ও পিস কমিটির কোনো কোনো সদস্য ব্যতিক্রমী ভূমিকা রেখে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকাও রেখেছেন।

তবে তাদের এই সংখ্যাটি এতো নগন্য যে, সেটা সাধারণ অর্থে টেনে পিস কমিটির সদস্য ও রাজাকারের সম্মান বাড়ানো বা তাদেরকে দায় মুক্ত করবার সুযোগ নেই।

এখন আসা যাক বাস্তব কথায়। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে অর্থাৎ যখন দেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাজা হচ্ছে, আমরা কাদেরকে রাজাকার বলবো? আমি মনে করি, এখন সময় এসেছে রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী- এই শব্দ দুটিকে সমার্থক করে ফেলবার।

যাকে তাকে রাজাকার বলে রাজাকারের সংখ্যা বৃদ্ধি করবার কোনো প্রয়োজন নেই এবং সেটা উচিতও হবে না। বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ জঘন্য অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তারা সাধারণ ক্ষমার আওতার বাইরে। অর্থাৎ একাত্তরে খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ জঘন্য অপরাধে জড়িতদের বিচার করা হবে। অনেকেই এই সত্যটি জানেন না বা ধূর্তের মতো এড়িয়ে যান, সেই সত্যটি হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর সময়েই সারাদেশে ৭২ টি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী তথা রাজাকারের বিচার শুরু হয়েছিল। সেই সব ট্রাইব্যুনালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হাজার হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছিল, চলছিল বিচারও। সারাদেশেই প্রস্তুতি ছিল আরও মামলা দায়েরের।

দুর্ভাগ্য আমাদের, জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই সব বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন এবং যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের অব্যাহতির ব্যবস্থা করেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু খুনের ভেতর দিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন না হলে ইতিহাস অন্যভাবেই লেখা হতো।

আমার এতো কথা বলবার উদ্দেশ্য, একাত্তরে খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ জঘন্য অপরাধের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে, এখন আমরা যেন শুধু তাদেরকেই রাজাকার তথা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিত্রিত করি এবং তাদেরকে অবশ্যই চলমান বিচার প্রক্রিয়ায় সোপর্দ করি; এর বাইরে আমরা যেন আর যাকে তাকে রাজাকার বলে চলমান ঐতিহাসিক বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ না করি।

(ওএস/অ/মে ১৫, ২০১৬)