সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জে মানব দেহে আবারও অ্যানথ্রাক্স রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার উল্লাপাড়ায় অ্যানথ্রাক্স  রোগে সোমবার বিকেল পর্যন্ত মোট ৪০ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর আগে ৬ মে জেলার কামারখন্দে ২৯ নারী- শিশু পুরুষ এবং শাহজাদপুরে ৮ মে ১৮জন আক্রান্ত হয়।

এ নিয়ে জেলায় মোট ৮৭ জন অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত রোগীরা স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, এ রোগে এখনও কারো মৃত্যু হয়নি, শঙ্কিত হবারও কোন কারন নেই।

উল্লাপাড়ায় তড়কা রোগে আক্রান্ত ৫টি গরু জবাই করে মাংস খেয়ে একই গ্রামের ৪০ ব্যক্তি অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের থেকে এক দল চিকিৎসক খবর পেয়ে রবিবার দুপুরে কয়ড়া সরাতলা গ্রামে আক্রান্তদের সনাক্ত করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে। ওই গ্রামে গত কয়েক দিনে ১৮টি গরু অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত মারা গেছে। মরা গরুগুলোকে গ্রামবাসী মাটির নিচে পুতে রেখেছে। ওই এলাকায় অ্যানথ্রাক্স রোগ দেখা দিলেও উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঠ পর্যায়ে কোন সহযোগিতা ছিলনা। গ্রামবাসী জানান বিষয়টি উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগকে জানানোর পরেও তারা গরু গুলোকে চিকিৎসা দিতে আসেনি, কিন্তু উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের ভেটেনারী সার্জন ডাঃ শেখ এম এ মতিন বলছেন, জানা মাত্রই সরাতলা গ্রামে গিয়ে যথা সময় গরুগুলোকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে রোগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

জানা যায়,গত দুই সপ্তাহে উপজেলার কয়ড়া ইউনিয়নের সরাতলা গ্রামের আলী আহমেদ, শাহেদ আলী, আকছেদ আলী, হযরত আলী এবং ফজেল প্রামানিকের ৫টি গরু তড়কা রোগে আক্রাস্ত হয়ে পড়ে। গ্রামের লোকেরা ওই অসুস্থ গরু জবাই করে গোস্ত ভাগ করে নিয়ে খায়। এর কয়েকদিন পর থেকে যারা ওই অসুস্থ গরুর গোস্ত খেয়েছিল তাদের বেশির ভাগইঅ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোঁসকা পড়ে ক্ষত ঘাঁয়ের সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমে আক্রন্তরা স্থানীয় পল্লী চিৎিসকদের কাছে চিকিৎসা নিলেও তা না সারায় কয়েকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের চিকিৎসা নেওয়ার জন্য যায়। সে সময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাদের অ্যানথ্রাক্স রোগ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ওই গ্রামের এমন আরো অনেক রোগী আছে জানতে পেরে বিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স থেকে একদল চিকিৎসক সরাতলা গ্রামে সরেজমিনে পরির্দশনে যায়। তারা ওই গ্রামে অস্তত ৩৯ জন অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় এবং আরো সনাক্তের চেষ্টা চলছে। আক্রান্তের সংখ্যা আরো বারতে পারে। আক্রান্তরা হচ্ছে সরাতলা গ্রামের-গরুর মালিক আলী আহম্মদ(৫০), শাহেদ আলী(৫৫), হযরত আলী(৫০), মরম আলী (১৭), মনিজা(৭), বরাত আলী(৩৫), মাছুম(১১), আসমাইল হোসেন(৪৫), সিহাব(১০), আব্দুল কাদেও (৬০), আয়শা(১২), কমেলা খাতুন(৪০), আকছেদ আলী(৫৫), ফাহিমা(৫), রবিউল(৩০), কল্পনা (৬), মাজেদা(২৫), বেল্লাল(১২), রজিনা খাতুন(২৫), মীম(৬), শামীম(১২), সনেকা খাতুন(৬০), জাহের আলী(৮০), হয়দার আলী(৫৫), ছানোয়অর হোসেন(৫৫), রবিউল(১৬), রহিমা খাতুন(৪৫), অলিউল্লাহ(৩), রিপন(২৫), ময়মন খাতুন(৪৫), জাকারিয়া(৮), মনিররুল(২৫), আম্বিয়া খাতুন(৪০), কেফাত আলী(৩৮), নবিরুল(৯) সহ বেশ কয়েকজন। এদের মধ্যে গরু মালিক আলী আহম্মেদের অবস্থা গুরুতর। তার চোখ মুখ অসাভাবিক ফুলে গেছে। পুরো গ্রামে ওই রোগের আতংক বিরাজ করছে।

উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডাঃ সুকুমার সুর রায় জানান, অসুস্থ গরুর গোস্ত খেয়ে ওই রোগী গুলো অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাদেরকে প্রাথমিকভাবে ৫ দিনের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এতে তারা সুস্থ হয়ে উঠবে। বাকীদের সনাক্তের কাজ চলছে। সিভিল সার্জন ডাঃ মহিদ মোঃ সাদেকুল ইসলাম জানান এর আগে ৬ মে জেলার কামারখন্দে ২৯ নারী- শিশু পুরুষ এবং শাহজাদপুরে ৮মে ১৮জন আক্রান্ত হয়। তবে এ রোগ নিয়ে শঙ্কিত হবার কোন কারন নেই।

(এলকেএস/এএস/মে ১৭, ২০১৬)