সে পথে হারিয়েছি

পথিকের পথ চলা হয়না শেষ। ক্লান্তি আসে ক্ষণিকের, আবারো সেই পথ, অজনার পথে ছুটে চলে অবিরত। জীবন চলে সেভাবেই কখনো ভুলে, কখনো ভালোবাসায় আবার কখনো অশ্রুতে ভাসে দু‘নয়ন। স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠে মনে জমা থাকা সুখ স্বপ্ন গুলো। পথে যেতে যেতে পরিচয় হয় অনেকের সাথে। যদি ভালো লেগে যায় কাউকে, সেখানেই ভালবাসার বীজ বুনে, শস্য ফলাতে চায় অনেকেই...

হঠাৎ ঢাকা ছেড়ে আসা বাসটি থামলো বাইপেল মোড়ে টিকিট কাউন্টারে সামনে। আর আসিফ অপেক্ষা করছিলো এই বাসটির জন্য, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে করতে একটু হাঁপিয়ে উঠেছিলো। তাই একটু তড়িঘড়ি করে বাসে উঠে গেলো। কিন্তু তার যে আসন সেখানে একটি প্রাপ্ত বয়স্ক একটি মেয়ে বসে ঘুমাচ্ছিলো। তাই সে কিছু সময় দাঁড়িয়ে রইলো, ততক্ষণে অবশ্য বাস তার গন্তব্যের দিকে ছুটছে। মাঝেমধ্যে বাসের ঝাঁকুনিতে মেয়েটির মাথা এদিক ওদিক হেলে যাচ্ছিলো, আবার কখনো জালানা দিয়ে বাতাস এসে মেয়েটির চুলগুলোকে এলোমেলো করে দেয়। মেয়েটি জেগে উঠে... চোখ মেলে দেখে তার আসনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলে।

আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
আপনি ঘুমাচ্ছিলেন তাই, এই ১২ নাম্বার আসন আমার।
মেয়েটি একটু সরে গিয়ে আসনটি খালি করে দিলো। আসিফ এবার তার আসনে বসে পড়লো। মেয়েটি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি জানি বলছিলো। আসিফ তার ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে একটু গলাটা ভিজিয়ে নিলো। একবারের জন্যও মেয়েটি তাকালো না আসিফের দিকে। মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দরী, আসিফ এবার ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে পড়তে লাগলো। বাস যাচ্ছে তো যাচ্ছে তার আপন গতিতে। হঠাৎ মেয়েটি আবার ঘুমিয়ে পড়লো, এবার হেলেদোলে আসিফের গায়ের পড়ছিলো বারবার। আসিফ একটু ইতস্তত বোধ করে গা থেকে মেয়েটিকে সরিয়ে দিতে। এবার জোরের সাথে পড়লো গায়ের উপর, ঘুম ভেঙ্গে গেলো মেয়েটির... এবার সরি বললো মেয়েটি... না না ঠিক আছে এই বলে মনে হচ্ছিলো, আসিফ নিজের গাটাকে একটু সরিয়ে নিলো। আবার বই পড়তে লাগলো, তখন অবশ্য মেয়েটি একটু একটু তাকাচ্ছিলো আসিফের দিকে, সেটা খেয়াল করেনি। দূরের পথ প্রায় ছয় ঘন্টা বাসে এক জায়গায় বসে থাকতে হবে। আসিফ তো বই পড়ছিলো কিন্তু তার পাশে বসে থাকা মেয়েটি কিভাবে এতটা পথ চুপচাপ কাটাবে। মেয়েটি বাসের কন্ট্রাক্টারের কাছে জানতে চাইলো পানি আছে কিনা। কিন্তু কন্ট্রাক্টর জানালো পানি নেই। আসিফ মেয়েটিকে বললো-
আপনি যদি কিছু মনে না করেন, আমার কাছে পানি আছে সেটা নিতে পারেন। এই বলে পানির বোতলটা বের করে দিলো। মনে হয় একটু পিপাসা বেশি লেগেছিলো। তাই হাত বাড়িয়ে পানির বোতলটা নিলো। তারপর ডগডগ করে পানি গিলে পুরো বোতল সাফা। বোতলটা আসিফের হাতে দিয়ে বললো- ধন্যবাদ। কোথায় যাবেন আপনি?
-পার্বতীপুর, আপনি?
-আমিও ওখানেই যাবো, যাক ভালোই হয়েছে কথা বলতে বলতে যাওয়া যাবে।
-ঠিক তাই
-ও হ্যা আপনার সাথে তো পরিচয় হলোনা, আমি রিমি।
-আমি আসিফ।
পরিচয় হলো তাদের দু’জনের মাঝে। কে কোথায় থাকে? কি করে? মোটামুটি সব বিষয়ে আলোচনা হলো। এর মাঝে কিন্তু আপনি থেকে তুমি সম্পর্ক চলে এসেছে। কথা চলছে তো চলছে মনে হচ্ছিলো একে অপরকে যুগযুগ ধরে চেনে। কখনো কখনো রিমি হাসতে হাসতে আসিফের গায়ের উপর লুটিয়ে পড়ছিলো। কিছুক্ষণ আগেও ছিলো অপরিচিত। হঠাৎ বাসটি এসে থামলো একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে, ৩০মিনিট যাত্রা বিরতি। তারা দু’জনে নেমে গেলো এক সাথে। খাওয়ার টেবিলে বসেও কথা বলছে তো বলছেই। ৩০মিনিট পর বাসটি গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলো। ভালো লাগতে শুরু হলো একে অপরের। ভাব বিনিময় হয় ভালবাসার, মনে হয় হাজার বছরের ভালবাসা। রিমি পার্বতীপুরের দুই স্টপেজ আগে নামবে জানালো আসিফকে। আসিফের মনটা খারাপ হয়ে গেলো, হয়ত আরও কিছু সময় একসাথে থাকতে চেয়েছিল তারা দু’জন, কিন্তু হয়নি। বাসের হেলপার সংকেত দিলো রিমির যাত্রা শেষের পথে। বাস থামলো রিমি যে স্টপেজে নামবে, আসিফের চোখ যেন হারিয়ে যাচ্ছিলো রিমির দু’চোখে। ভুলে গিয়েছিল সব। রিমি তার লাগেজ নিয়ে পিছন ফিরে তাকাচ্ছিলো। বাস থেকে নেমে যাবার পর স্মরণ হলো ঠিকানা দেওয়া হয়নি আসিফকে। তাই আবার এলো ঠিকানা দেওয়ার জন্য, কিন্তু ততক্ষণে বাস ছেড়ে যাচ্ছিলো। কেউ শুনেনি তার কথা মনে হচ্ছিলো এ পথে হারিয়ে ফেললো সারাজীবনের আচ্ছাদিত ভালোবাসাটুকু। আসিফ সামনের স্টপেজে নেমে ফিরে এসেছিল সেই স্টপেজ এ এসে আর পায়নি রিমিকে। ভারাক্রান্ত মনে ফিরে এসেছিলো আসিফ সে পথে কি যেন হারিয়ে...