প্রবীর সিকদার


ত্রিশ লাখ বাঙালির জীবন, কয়েক লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও কোটি কোটি মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে খুন করবার পর জোরজবরদস্তি করে সংবিধানে বসানো হয় বিশেষ ধর্ম বিশ্বাসের স্বীকৃতির বিষয়টি।

তার অর্থ এই নয় যে, বাংলাদেশ তার ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র হারিয়ে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে! ১৯৭০ আর ১৯৭১ সালে অর্জিত ধর্মনিরপেক্ষতার যে ম্যানডেট ১৯৭২এর সংবিধানে প্রতিফলিত হয়েছিল, সেটা আমাদের মূল সংবিধানের মৌ্লিক চরিত্র। সংবিধানের মৌলিক চরিত্র পরিবর্তনের এখতিয়ার কারো নেই , এমন কি জাতীয় সংসদেরও নেই ; সেটা আমাদের সংবিধানে সংবিধানের রক্ষাকবচ হিসেবেই স্পষ্ট বলা আছে। তারপরও যেহেতু সংবিধানে বিশেষ ধর্মের বিশেষ স্বীকৃতির বিষয়টি এখনো বহাল, সেহেতু অনেকেই ভাবেন, বাংলাদেশ একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, কোনো বিবেচনা বা যুক্তিতেই বাংলাদেশ তার জন্মের অঙ্গীকারের কথা অস্বীকার করতে পারে না বা সেটা অস্বীকার করবার কোনো বৈধ ভিত্তি নেই। ওই অঙ্গীকারের বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না বলেই এখনো দেশের নাম হিসেবে বহাল রয়েছে 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ'।

যারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে ধর্মীয় রাষ্ট্র ভাবেন, তারা হয়তো জানেন না যে, বাংলাদেশ যতদিন একাত্তরের অর্জনকে স্বীকার করবে [অস্বীকার করবার সুযোগও নেই] ততদিন তার মৌলিক চরিত্র ধর্মনিরপেক্ষতাকে পরিত্যাগ করতে পারবে না। কেননা, ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অসম্ভব।

(অ/মে ২০, ২০১৬)