দেবাশীষ বিশ্বাস : নারায়ণগঞ্জের বন্দরে যে ষোলটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে তাঁর মধ্যে নবম অবস্থানে আছে পিয়াল সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়। অনান্য বিদ্যালয় কত সালে প্রতিষ্ঠিত তাঁর সাল দেওয়া থাকলেও এই বিদ্যালয়ে সেই সাল নেই। আর প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ নাজমুল হুদা (সূত্র- bandar.narayangang.gov.bd)। মোঃ নাজমুল হুদা যদি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতো তবে শ্যামল কান্তি স্যারের সাথে যে বর্বর আচরন করা হয়েছে সেটা দেখা থেকে জাতি বিরত থাকতো।

১৩ই মে, ২০১৬ ইংরেজী রোজ শুক্রবার পরিচালনা পর্ষদের একটি সভায় শ্যামল কান্তি ভক্তের কুটূক্তির বিষয়টি উত্থাপিত হয়। একই সময়ে বিদ্যালয় সংলগ্ন কয়েকটি মসজিদ থেকে ঘোষণা করা হয় শ্যামল কান্তি ভক্ত ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কুটূক্তি করেছে। এমন খবরে ধর্মপ্রাণ মানুষেরা বিদ্যালয়ে আসবে সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু অন্তরালেই রয়ে গেলো কারা ছিলো সেই ঘোষণাকারী। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে প্রশাসন সেলিম ওসমানকে বিষয়টি অবগত করেন। সেলিম ওসমান কি শাস্তি দিয়েছে বিবেকবান এই জাতি সেটা দেখেই ফুসে উঠেছে। তবে নারায়ণগঞ্জ থেকে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ উঠেছে সেকথা কোন ভাবেই বলা যাবে না। সেলিম ওসমান কর্তৃক সাঁজার বিষয়টা যখন ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে পড়ে তখন প্রতিবাদী মানুষগুলো প্রতিবাদ করতে থাকে। ফেসবুকের আন্দোলন চলে যায় ইলেকট্রনিক আর প্রিন্ট মিড়িয়ার শিরোনামে।

ততক্ষণে মৃতপ্রায় শিক্ষক হাসপাতালের বিছানায়, অবস্থার বেগতি দেখে পথ খুঁজতে থাকে সেলিম ওসমান। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে নিজেই সংবাদ সন্মেলনে আসেন সেলিম ওসমান। নিজে ক্ষমার পরিবর্তে শিক্ষকেই তারছেঁড়া বলে আবার নতুন বিতর্কের জন্ম দেয় সেলিম ওসমান।

সাধারন মানুষ ভাবতে থাকে তদন্তের নামে হতে পারে সময়ক্ষেপন কিন্তু এবারের তদন্ত কমিটি তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদন যখন উপস্থাপন করলো সেখানে নির্দোষ প্রমাণ হয়ে গেলেন হতভাগ্য প্রধান শিক্ষক।

এরপর নিজেকে ধোয়া তুলসীপাতা পরিচয় দিতে চেষ্টা করে যান সেলিম ওসমান। তিনি কি এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আগের থেকেই জানতেন? কান ধরিয়েছেন, মেরেছেন সবই মানলাম কিন্তু ঘটনার পরে তাঁর ভূমিকায় মানুষ অবাক হয়েছে। বিশেষ করে একজন সাংবাদিকের সাথে শিক্ষক লাঞ্ছনা সম্পর্কিত কথাবার্তা তার পরিবারকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এরপর তিনি ধর্মকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে নিজে বাঁচতে যেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে। সেই সুয়োগ কাজে লাগিয়েছে ০৫ই মে ভয়ঙ্কর শক্তি জানান দেওয়া হেফাজতে ইসলাম। ৭২ ঘন্টার সময় বেধে দিয়েছে শক্তিময় এই সংগঠনটি।

অনেক ঘটনার পরে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত শিক্ষক থেকে হয়ে গিয়েছে হিন্দু একজন শিক্ষক। অনেকেই শক্তিশালি প্রচার মাধ্যম ফেসবুকে টেনে এনেছে শ্যামল কান্তি ভক্ত কান ধরেছে আমরা কান ধরেছি।

ওসমান পরিবারের অনেক ভাল কাজ এই দেশের জন্য আছে এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে কিন্তু বড্ড ভুল হয়ে গেছে সেলিম ওসমান! আপনি যদি পূর্বনির্ধারিত ষড়যন্ত্রের কথা নাই জানতেন তবে আপনার উচিত ছিলো স্যারের কাছে ছুটে যাওয়া। আপনি পারতেন কিন্ত করেন নাই। কেন আজ তাঁকে পুলিশ পাহারায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে যেতে হলো? এখানে আপনি অনেক ছোট হয়েছেন, আপনার পরিবারের সাথে তো জাতির পিতার পরিবারের সু-সম্পর্ক ছিলো। একটু বিনয়ী হলে কি এমন ক্ষতি হতো। হ্যাঁ পথ আপনি দেখিয়েছেন আর আমরা হাঁটছি, কিন্তু সেটা ভুল পথ।