প্রবীর সিকদার


ভারত শুধু একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধেই অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে সহযোগিতা করেনি, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতাও রক্ষা করেছে ভারত। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সার্বক্ষণিক আস্তানা ছিল বঙ্গভবন।

রাষ্ট্রপতি খন্দকার মুস্তাকের সাথে বঙ্গভবনেই থাকতেন ফারুক, রশিদ, ডালিমসহ বঙ্গবন্ধুর খুনি চক্র। জিয়াও দিনের বেশিরভাগ সময় বঙ্গভবনেই কাটাতেন। মুস্তাক চক্র তখন বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের কনফেডারেশন গঠনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছিলেন। তারা গোপনে এই নিয়ে পাকিস্তানের সাথে আলোচনা শেষও করেছিলেন। অপেক্ষা ছিল রাষ্ট্রপতির আদেশ জারির। জিয়ার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর খুনি চক্র রাষ্ট্রপতি মুস্তাককে পাকিস্তান-বাংলাদেশ কনফেডারেশন গঠনের লক্ষ্যে সেই আদেশ জারির জন্য অনবরত চাপ দিচ্ছিলেন।

ঠিক এই রকম একটি সময়ে একদিন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত সমর সেন রাষ্ট্রপতি মুস্তাকের সাথে দেখা করতে বঙ্গভবনে আসেন। মুস্তাক সেইদিন তার অফিস কক্ষে অন্যসব দিনের মতোই জিয়া-ফারুক চক্র দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। সমর সেন সকলের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে রাষ্ট্রপতি মুস্তাকের সাথে একান্তে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। অন্যরা কক্ষের বাইরে চলে গেলে সমর সেন রাষ্ট্রপতি মুস্তাকের হাতে ভারত সরকারের একটি লিখিত বার্তা তুলে দেন। ওই বার্তাটি পড়ে মুস্তাক অনেকটাই মুষড়ে পড়েন। দ্রুত নিজেকে সামলে তিনি সমর সেনকে বিদায় জানিয়ে জিয়া-ফারুক চক্রকে নিজের কক্ষে ডেকে নেন। ভারত সরকারের ওই বার্তাটি সকলকে পড়তে বলেন। ওই বার্তাটি পড়ে সকলেই দারুণভাবে মুষড়ে পড়েন। কারো মুখেই কোনো কথা নেই; কিছুই আর করবারও নেই। আর তখনই ভেস্তে চলে যায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান কনফেডারেশন গঠনের উদ্যোগ; রক্ষা পায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

ভারত সরকারের যে বার্তায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান কনফেডারেশন গঠনের উদ্যোগ নস্যাত হয়, সেই বার্তাটি মোটামুটি এই রকমের ছিল, ‘এতদিন যা ঘটেছে তা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলেই ভারত মেনে নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরিপন্থী কোনো কাজ তথা পাকিস্তান-বাংলাদেশ কনফেডারেশন গঠন কোনো অবস্থাতেই ভারত মেনে নিবে না। পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন গঠনের উদ্যোগ পরিত্যাগ না করলে ভারত বাধ্য হবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের’।

একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারত এভাবেই পঁচাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষায় চিরস্মরণীয় ভূমিকা রাখে। জয় বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুতা।

(অ/মে ২২, ২০১৬)