লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়ায় পঞ্চম ধাপে আগামী ২৮ মে ৫টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দিপনার সৃষ্টি হযেছে।

চেয়ারম্যান, মেম্বর ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা প্রার্থীরা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত গণ-সংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুভেচ্ছা ছালাম বিনিময় শেষে ভোট চাইছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। অনেক প্রার্থী ভোটারদের মন জয় করার জন্য গোপনে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিক বরাদ্ধের পর পরই প্রার্থীরা তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন প্রতিক সম্বলিত পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে সমগ্র নির্বাচনী এলাকা। দিঘলিয়া ও ইতনা ইউনিয়নে বিচ্ছিন্ন দু’একটি ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রচার প্রচারনা চলছে । এসব ইউনিয়নে প্রশাসনের নজরদারীও বেড়েছে।

আওয়ামীলীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত নড়াইলের লোহাগড়ায় ৫টি ইউনিয়নের নৌকা প্রতিকের প্রার্থীরা সুবিধাজনক স্থানে থাকার কথা থাকলেও দলটির একাধিক বিদ্্েরাহী প্রার্থীর কারণে দলের নেতা কর্মী ও সমর্থকরা বেকায়দায় পড়েছে। যে কারণে নেতা কর্মী ও সমর্থকরা নিজ নিজ পছেন্দের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছে। এতে করে, আ’লীগ প্রার্থীদের ভোটের ফলা ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক নেতা কর্মীরা জানিয়েছেন। এ কারনে, প্রচার প্রচারনায় আ’লীগ প্রার্থীরা এগিয়ে থাকলেও বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করেছেন। বিএনপি প্রার্থীরা নিঃরবে প্রচার প্রচারনা চালালেও ভোটের মাঠে সুবিধা করতে পারছেন না।
সব কিছু মিলে , শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে লোহাগড়ার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।
লোহাগড়া নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর, ইতনা,মল্লিকপুর, কাশিপুর, ও দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২০ জন, মেম্বর পদে ১৬০ জন,ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে মেম্বর পদে ৫৯জন,পার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এর মধ্যে কাশিপুর ইউনিয়নে আ’লীগ দলীয় প্রার্থী মতিয়ার রহমানের কোন প্রাতিদ্বন্ধি প্রার্থী না থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৪ টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীকারী প্রার্থীরা হলেন

জয়পুরঃ এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হলেন,বর্তমান চেয়ারম্যান আখতার হোসেন। আর মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে আওয়ামীলীগ থেকে আনারস প্রতিক নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান এসএম শরিফুল ইসলাম। বিএনপি থেকে মনোনীত ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে শাহীন মাহমুদ নির্বাচন করলেও তিনি ভোটারদের মাঝে কোন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। এখানে আ’লীগ দলীয় প্রার্থী আখতার হোসেনের সাথে আ’লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম শরিফুল ইসলামের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে সাধারণ ভোটারদের ধারনা।

ইতনাঃ এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ সিহানুক রহমান নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হাসান টগর আনারস প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া, উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি এস এম আদনান হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মটর সাইকেল প্রতিক, কাজী নাসির আহমেদ চশমা প্রতিক এবং বিএনপি থেকে খলিল উল্লাহ ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করছেন। নির্বাচন পূর্ব সংহিসতার কারনে এখানে ভোটে প্রভাব পড়তে পারে।শেখ সিহানুক রহমানের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হাসান টগরের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে বলে ভোটারদের অভিমত।

মল্লিকপুরঃ আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতিক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান শহিদুর রহমান শহীদ নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি আ’লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান শিকদার মোস্তফা কামাল আনারস প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে সামিল হয়েছেন। এ ছাড়া,ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত শরীফ আল হেলাল হাত পাখা ও বিএনপি থেকে মনোনীত এস এম মাসুদ রানা ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আ’লীগ দলীয় প্রার্থী শহিদুর রহমান শহীদের সাথে শিকদার মোস্তফা কামালের মধ্যে তুমুল ভোটের লড়াই হবে বলে ভোটারদের ধারনা।

দিঘলিয়াঃ এ ইউনিয়নে ৯ জন প্রার্থী চেয়ারমান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিক নিয়ে মোঃ মাছুদুজ্জামান নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান আ’লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমতিয়াজ আহম্মেদ মাসুম আনারস প্রতিক, সাবেক চেয়ারম্যান শেখ লতিফুর রহমান পলাশ ঘোড়া প্রতিক, ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে হাতুড়ী প্রতিক নিয়ে খান শাহাবউদ্দিন, মটর সাইকেল প্রতিক নিয়ে এস এম মাকছুদুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে হাত পাখা প্রতিক, খবির উদ্দীন সরকার ও বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে শেখ রবিউল ইসলাম পলাশ নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এ ইউপিতে আ’লীগ প্রর্থী শেখ মোঃ মাছুদুজ্জামানের সাথে সাবেক চেয়ারম্যান শেখ লতিফুর রহমান পলাশের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে বলে ভোটারদের ধারনা।

এক কথায়, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় সরগরম হয়ে পড়েছে লোহাগড়ার ৫ টি ইউনিয়ন।




(আরএম/এস/মে ২৪,২০১৬)