শব্দকুমার

বেগুনি রঙের কচুরীফুলগুলো ভেসে যাচ্ছে উড়োনচণ্ডি হয়ে জল স্রোতে
জলের মুদ্রারা জানে, অন্ধকারে কখন গোপন শব্দধ্বনি বেজে ওঠে
অথচ তোমার জলস্পর্শ হাত খোঁজে স্রোতস্বীনি নদীর বিরহী উপাখ্যান
আমি জলের সন্তান; নদী ভক্ষণের মতো হারিয়ে যাই জীবনের মূদ্রণপ্রমাদে
আবার জেগে ওঠি অন্ধকারের গহীন পথ হেঁটে হেঁটে...

ঘুমবন্দি জোড়াচোখ প্রথম স্পর্শের শিহরণ নিয়ে স্বপ্নময় জেগে থাকে পৃথিবীতে।
আমাদের অসমাপ্ত কথাগুলো লিপিবদ্ধ হয়ে ওঠে কোন মহৎ শব্দকুমারের হাতে
সাদা পৃষ্ঠার বিছানা জুড়ে কালো অক্ষরে; এরপর মলাটবদ্ধ রূপে সভ্যতার-
ছাপাখানা থেকে বেরিয়ে আসে যাপিত জীবনের ঝরে পরা বিশুদ্ধ-দীর্ঘশ্বাস!


ধলেশ্বরী নদী

যে নদীর তীর ঘেঁসে প্রথম আত্মচিৎকার বেজে ওঠেছিলো আমার মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে
লঞ্চ আর জাহাজের হুইসেলের সাথে একাত্মতা নিয়ে ঢেউয়ের মুর্ছণায় একাকার
হয়ে গিয়েছিলো যে যুবক বালকের আযানের ধ্বনি শুনে সেই স্মৃতিময় ক্যানভাসে
ভেসে ওঠে যে জলের রঙ তা আর কারো নয় সে আমার প্রিয়তম ধলেশ্বেরী।

তখন বৈশাখ মাস, তপ্ত রোদ আর হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া; মায়ের চোখে কাল-বৈশাখীর ভয়
আর আমি পৃথিবীর বারান্দায় প্রথম আশ্রয় নিয়ে নিয়েছি মায়ের স্নেহময়ী আঁচলে বন্দি হয়ে

তাই এখনো ভেসে ওঠে শিশুমনের অনুভূত হওয়া হাসোজ্জ্বল সেই প্রথম দেখা নারীর মুখ!

যখন প্রথম কান্না; তখন আব্বার মুখে দারিদ্রের মলিন হাসি অদ্ভুতভাবে ফুটে ওঠেছিলো
তারপর দারিদ্রের কতো কান্না-হাসি একসাথে মার্বেলের মতো গড়াগড়ি খেয়েছে
এখন বড় হতে হতে সেই দারিদ্রতার ভাষা অনুবাদ করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত

তবুও একরত্তি সুখের আশায় যে নদী প্রতিদিন ভাসিয়ে নিয়ে যায় দূর মোহনায় স্বপ্ন হয়ে
সে আমার শৈশব থেকে যৌবনের সঙ্গী ধলেশ^রী; যাকে জীবনের সুখ-দুঃখের ছায়াসঙ্গী ভাবি।


সব স্বপ্ন ব্যর্থতার পথে হাঁটে

জীবনের সব স্বপ্ন ব্যর্থতায় হামাগুড়ি খেয়েছে দাঁড়িয়ে ওঠতে পারে নি;
জন্ম থেকেই একটা অপরিপক্ক বৃক্ষের ন্যায় কোনরকম বেঁচে থাকা।

প্রথম ব্যর্থতা যখন দারিদ্র আমাকে আস্তাকুড়ে ফেলে দিয়েছিলো ডাস্টবিনে আব্বার হাত ধরে;
যে হাত আমাকে মুঠোভরে স্বপ্নের রাস্তায় রঙিনঘুড়ি ওড়াবে বলে
মাতৃজরায়ুতে পরম ভালোবাসায় রক্তবীজ ঢেলে দিয়েছে আমার দেহশিরায় প্রবাহিত হবে বলে

অথচ নতুন জীবন দিয়ে আমাকে ঋণী করে গেছে নতুন ব্যর্থতার সমুদ্রে ফেলে দিয়ে

ছেলেবেলা তেমন কোন আবদার ছিলো না কারো প্রতি কিংবা কোন বস্তুর প্রতি
তবে একবার একটি বাই-সাইকেল কেনার স্বপ্ন দেখেছিলাম
আহা বাই-সাইকেল! তোমাকে নিয়ে ঘুড়ে বেড়াবো পুরো শহর-গ্রাম; হয়নি-
হয়নি সেই স্বপ্নপূরণ; দারিদ্র আমার স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছিলো উজ্জ্বল মুখ কালো করে দিয়ে
আর বাল্যবন্ধু ইব্রাহিমের বাই-সাইকেলে ঘুরে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছি যখন তখন
অথচ এখনো আমি সেই ফনিক্সমার্কা বাই-সাইকেল কেনার স্বপ্নে বিভোর থাকি!

প্রথম যে নারীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি ভালোবাসার; যার হাত ছুঁয়ে নতুন পৃথিবীর পথে হাঁটবো
হয়নি নতুন পৃথিবীর পথে হাঁটা; দারিদ্র সেই কোমলহাত কেড়ে নিয়েছে সোনালি দিন থেকে
অথচ আমি আশার সমান বড় মন নিয়ে দারিদ্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াবো বলে লেখপড়ার গণ্ডি পেরিয়ে

আশান্বিত তরুণের মতো সোনার হরিণ ধরবো বলে তাকেও ছুঁতে পারি নি

শুধু যাকে আমি ছুঁতে পেরেছি কিংবা এখনো পুরোপুরি যাকে ছুঁয়ে দেখবো বলে সারারাত-দিন
অপেক্ষার সময় গুণে ধ্যান করি সেই হচ্ছে প্রিয়তম কবিতা; কবিতা, তুমি কি ধরা দিবে-
নাকি সকল ব্যর্থ স্বপ্নের ন্যায় ব্যর্থতার পথে গ্রাস করে নিবে আমার স্বপ্ন।



(এএমএ/এস/মে২৮,২০১৬)