আলী আখতার গোলাম কিবরিয়া


বাবাকে এক ধরণের বিশেষ শার্ট আজীবন পরতে দেখেছি। ওই শার্টটি তিনি বড়খাতা বাজারের ইব্রাহীম খলিফার কাছ থেকে বানিয়ে নিতেন। সে আমলে যারা দর্জির কাজ করতেন তারা স্থানীয়ভাবে কেন 'খলিফা' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন, জানি না। আজও আমাদের বড়খাতা বাজারে দর্জিদের খলিফা হিসেবেই ডাকা হয়। ইব্রাহীম খলিফার পাশাপাশি দোকানগুলোতে দর্জির কাজ করতেন রেয়াজ খলিফা, জামাল খলিফা ও তোফাজ্জল খলিফা। ওনারা আজ কেউ বেঁচে নেই।

বাবার শার্টটি দেখতে কেমন ছিল সেটা এখন বলার চেষ্টা করি। বিশেষ ধরণের ওই শার্টের নিচের অংশ ছিল পাঞ্জাবির মত দেখতে, লম্বায় হাঁটুর একটু উপরে আর দু'পার্শ্বের আস্তিন কেটে বাঁকা মত করে কিছুটা উপরে আনা হতো। এরপর আস্তিন-কাটা বাঁকা অংশ বরাবর দু'দিকে দু'টো ঝুলন্ত পকেট তৈরি করা হতো। পকেট দু'টো বেশ বড় সাইজের ছিল। এবার উপরের অংশ। উপরের অংশ দেখতে ছিল পুরোদস্তুর শার্টের মতই। শার্টের দু'হাতের কব্জিতে বোতাম লাগানোর ব্যবস্থা ছিল। গলা থেকে বুকের উপরের কিছুটা পর্যন্ত চেরা অংশে থাকতো তিনটি বোতামের ঘর। বুকের বাম দিকে একটি মাঝারি আকারের পকেট এবং বুক পকেটটির ঠিক বিপরীতে ভেতর দিকে থাকতো একটি গোপন পকেট। দেখতাম, বাবা ধীরেসুস্থে বুকের বোতাম খুলে বেশ সতর্কতার সঙ্গে গোপন পকেটে টাকা রাখতেন। বোঝা যেত, মাথা নিচু করেও ওই গোপন পকেটটি দেখা সম্ভব নয় বলে বাবা হাতের আন্দাজে পকেটটিতে টাকা রেখে দিতেন। টাকা রাখার পর বাবা ধীরে ধীরে বুকের বোতাম তিনটি লাগিয়ে দিতেন। এরপর তিনি কিছুটা মনোযোগী হয়ে উঠতেন। বাইরের বুক পকেটে চ্যাপ্টা করে বাবা তাঁর হাতের তালু রাখতেন এবং আলতো করে দু'তিন বার ঠাস দিতেন। ঠাসার সময় তিনি কয়েক সেকেণ্ডের জন্য চোখ বুঁজে থাকতেন এবং হাতের আন্দাজে রাখা টাকার অস্তিত্ব সম্পর্কে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হতেন। টাকা ভুলে নিচে পড়ে গেছে কি না সেটা নজরদারি করার জন্য মা পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতেন। এরপর বাবা বড়খাতা হাটের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তেন। বাবাকে যতদূর পর্যন্ত দেখা যেত ততদূর পর্যন্ত মা তাকিয়ে থাকতেন। বাবার পরনের এই শার্টটিকে আমাদের এ অঞ্চলে বলা হয় 'পাইকারি শার্ট'।

পাইকারি শার্ট সকলে পরতেন না, বয়স্কদের মধ্যে কেউ কেউ পরতেন। এখানে-সেখানে যাওয়া সহ বাবা সবসময় এই শার্টই পরতেন। পাইকারি শার্ট পরা আভিজাত্যের কোন ব্যাপার ছিল না। তবে এই শার্ট যাদের শরীরে মানাতো তাদের মধ্যে এক ধরণের আভিজাত্য আপনা থেকে ফুটে উঠতো। বাবা সামান্য দুলিয়ে দুলিয়ে হাঁটতেন। বাবা যখন হাঁটতেন তখন পাইকারি শার্টের নিচের অংশ বাতাস লেগে দোল খেতো। দেখতে ভারি সুন্দর লাগতো তখন। আমার বাবা ছিলেন স্বল্পভাষী, মিতব্যয়ী ও সৎ স্বভাবের। এজন্য সমাজে তাঁর সুনাম ছিল। দেখেছি, অন্যান্যদের মত বাবার থেকে যারা বয়সে বড় তাঁরাও বাবাকে সম্মানের চোখে দেখতেন। বাবার প্রতি ভালোবাসার কারণে আমার কাছে মামুলি গোছের ওই পাইকারি শার্টটি হয়ে উঠেছে ব্যক্তিত্বের অনন্য প্রতীক। ভেবে রেখেছি, আমার বাবার মত ভালো মানুষ হতে পারলে আমিও ভবিষ্যতে শেষ বয়সে পাইকারি শার্ট পরবো। দেখা যাক আয়ুতে সে শার্ট জোটে কি না! আজ থেকে পনেরো বছর আগে বাবা মারা গেছেন। আজও কোন বয়স্ক ব্যক্তির গায়ে পাইকারি শার্ট দেখলে আমি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। আমি বয়স্ক ব্যক্তিটিকে সম্মান জানাই। সে মুহুর্তে পাইকারি শার্ট পরা ওই মানুষটি আমার কাছে যেন আমার বাবা হয়ে ওঠেন। মানসপটে ভেসে ওঠা আমার বাবা আর এই পাইকারি শার্ট পরা মানুষটির মধ্যে আমি বড় ধরণের কোন তফাত খুঁজে পাই না। মনে মনে ডাকি, বাবা বাবা ও বাবা......।

মুজিবকোট প্রসঙ্গটি উপস্থাপন করার আগে আমার বাবার পাইকারি শার্ট অনেকটা মুখবন্ধের মত হয়ে গেল। যাহোক, মুজিবকোট প্রসঙ্গটি শুরু করি এখন। বঙ্গবন্ধুর পোশাক-পরিচ্ছদের মধ্যে তার কোটটি আমার কাছে প্রধান অলঙ্কার বলে মনে হয়। পাজামা-পাঞ্জাবি পরে বঙ্গবন্ধু কালো রঙের হাত কাটা কোটটি পাঞ্জাবির ওপরে সবসময়ই পরতেন, চোখে থাকতো কালো ফ্রেমের চশমা, হাতে পাইপ। এই তো আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধুর এই কোটটি 'মুজিবকোট' হিসেবে বিশ্বব্যাপি পরিচিত হয়ে ওঠেছে। প্রশ্ন তুলতে পারি, বাঙালি ইতিহাস-ঐতিহ্যের এই মুজিবকোট কারা পরতে পারেন এবং কারা পরতে পারবেন না।

ডিজিটাল বাংলাদেশে আজকাল অবশ্য অনেক অনেককিছু দেখা যায় অনেককিছুই শোনা যায়। আলোচিত-সমালোচিত ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামীলীগের দাপটে এদেশে এখন অনেক কিছুর পরিবর্তন চোখে আসে। প্রশাসন আর দলীয় ক্ষমতার সুবিধার স্বাদ নিতে কেবল আওয়ামীলীগে ভেড়া রাজাকার-অরাজাকার, বিএনপি-জাতীয় পার্টি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের জয়জয়কার অবস্থা। এদের নামের আগে সংযোজিত হচ্ছে 'সংগ্রামী নেতা' 'ত্যাগী নেতা' ইত্যাদি ইত্যাদি বিশেষণ। সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনের পর এই প্রবণতাটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সারা দেশে দেখা গেছে, ইউপি নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। সারাজীবন আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের ওপর জুলুম করেছে, অথচ একমাস আগে আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েছে এমন ধরণের বিএনপি-জাতীয় পার্টি বা জামায়াতের সেই দানবকেই ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি, বরং অপমান করে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, জননেত্রীর সিদ্ধান্ত মানতে হবে। আপনারা টাকার বিনিময়ে দলের লোকের টুটি চিপে ধরবেন, আবার গা বাঁচাতে শেখ হাসিনার দোহাই দেবেন এটা যে হয় না। যত কুকর্ম আপনারা করেছেন, শেখ হাসিনা করেননি। দায় আপনাদের। শেখ হাসিনা মাঠের খবর জানবেন কী করে? আপনাদেরকে বিশ্বাস করে মাঠ পর্যায়ের দায়িত্ব তিনি দিয়ে রেখেছেন। সেই ক্ষমতা পেয়ে এখন আপনারা গু-গোবর খেলে তার দায় কী শেখ হাসিনার ওপর বর্তাবে? যা বলছিলাম, বলছিলাম নব্য আওয়ামীলীগার সংগ্রামী নেতা ত্যাগী নেতাদের সম্পর্কে। মুজিবকোট গায়ে দেওয়া মাত্র এনারা কীভাবে সংগ্রামী নেতা হয়ে গেলেন, কীভাবে ত্যাগী নেতা হয়ে গেলেন, বুঝি না। আওয়ামীলীগের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের বৈরি পরিবেশে রাজপথে নামতে হলো না, মিছিল-মিটিং করতে হলো না, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মুখে পড়তে হলো না, বিরোধীদের ইট-পাটকেলে আহত হতে হলো না, হাসপাতালে যেতে হলো না, মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর ঝুলতে হলো না, ঘর-বাড়ি ছেড়ে দিনের পর দিন পালিয়ে বেড়াতে হলো না, না খেয়ে এক সন্ধ্যা থাকতে হলো না। এরাই হয়ে গেলেন সংগ্রামী নেতা? আরাম-আয়েশে প্রতাপের সাথে চলছেন, চকচকে ব্লেডে দাড়ি কামাচ্ছেন, প্রতিদিন পোলাও মাংস কোরমা দই আর চাইনিজ খেয়ে হেউ হেউ করে ঢেকুর তুলছেন, সরকারি টাকা লুটপাট করে খাচ্ছেন, জনগণের অর্থ চুরি করে যারা সম্পদের পাহাড় গড়ছেন, অনৈতিক কাজে চ্যাম্পিয়ন রানার-আপ হচ্ছেন সেই লম্পটরাই হয়ে যাচ্ছেন ত্যাগী নেতা? এসব দেখেশুনে অবাক হতে হয়। আওয়ামীলীগের ৩০-৪০-৫০ বছরের যেসব ত্যাগী পরীক্ষীত নেতা-কর্মী অযত্ন অবহেলায় আজ খালে-জঙ্গলে পড়ে আছেন, অবমূল্যায়িত হচ্ছেন, মিথ্যা মামলা আর হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তারা তাহলে পচে গেলেন! আর ক্ষমতার স্বাদ চুরি করে খেতে আজ যারা দলে ভিড়েছেন তারা হয়ে গেলেন সংগ্রামী নেতা ত্যাগী নেতা! এসব আপাতত থাক। ফিরে আসি মুজিবকোট প্রসঙ্গে।

১৯৫২, ৫৮, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭০-এর উত্তাল দিনগুলোতে পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনের এবং পরিশেষে একাত্তরের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুজিব কোট পরতেন। বঙ্গবন্ধুর মুজিবকোট ছিল পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের এক বিশ্বস্ত প্রতীক। মুজিবকোট দেখলে পাকিস্তানী জান্তারা থরথর করে কাঁপতো। কে পরতেন সেই মুজিবকোট? পরতেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। সে আমলে বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কেউ মুজিবকোট পরতেন বলে আমার জানা নেই। মুজিবকোট মানে কিউবার মন্ত্রিত্ব ছেড়ে বলিভিয়ার জঙ্গলে চে গুয়েভারার সশস্ত্র বিপ্লবে পরা সেই ক্যাপের মত গগনবিদারী বজ্র হুঙ্কার, বঙ্গবন্ধুর পাইপ আর ক্যাস্ট্রোর চুরুট মানে শয়তানের কলিজায় লাগা গনগণে আগুন। মুজিবকোট তাই হয়ে গেছে বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের অজর অক্ষয় এক মহান স্মৃতিচিহ্ন। মুজিবকোট মানে মুক্তিযুদ্ধ, মুজিবকোট মানে শহীদের রক্ত, মুজিবকোট মানে অন্যায় আর অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াকু বিপ্লবীর লাল চোখে ঘুরে দাঁড়ানো। আমাদের বাঙালি জাতির ঐক্যের প্রতীক বঙ্গবন্ধুর সেই কোট গড়পরতা সকলে পরতে পারবন কেন? মুজিবকোট এখন গায়ে দিচ্ছেন পরীক্ষিত-ত্যাগী নেতাদের বাইরেও আওয়ামীলীগের ভেতরে লুকিয়ে থাকা আর যোগ দেয়া লক্ষ লক্ষ চোর, বাটপার, দুর্নীতিবাজ, লম্পট। এটা কীভাবে সম্ভব? বড় লজ্জা পাই আমি। আমার মত অনেকে লজ্জা পান। মুখ ফুটে কেউ বলতে চান না। আমি বললাম। মুজিবকোট গায়ে দিয়ে ওই লম্পটরা বঙ্গবন্ধুর নামটির প্রতিনিধিত্ব জাহির করবে সেটা বাঙালি জাতি মানবে কেন? বিশ্বনেতাদের নামের পাশে রয়েছেন আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধুর পাশে রয়েছেন কিউবার ফিদেল ক্যাস্ট্রো, আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণ, বলিভিয়ার চে গুয়েভারা, রাশিয়ার লেনিন, চীনের মাও সে তুং, যুগোশ্লাভিয়ার মার্শাল টিটো, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক। সেই বঙ্গবন্ধুর কোট গায়ে দিয়ে কেউ ইতরামি করলে এবং সেই অপরাধে গণরোষে সে দিগম্বর হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে কেন? সেজন্য বলি, আমাদের দেশে মুজিবকোট পরিধান আইন প্রণয়ন করা জরুরি। উপহাস পরিহাসের মাত্রাটি তাহলে ধীরে ধীরে উঠে যাবে। আমরাও লজ্জার হাত থেকে বাঁচবো। কারণ পাইকারি শার্ট পরা কোন বয়স্ক লোক দেখলে আমার মুখ থেকে অজান্তে 'বাবা' শব্দটি বের হয়ে আসে। আমি তখন সম্মানিত হই, আমি তখন গর্বিত হই। ঠিক তেমনি, মুজিবকোট গায়ে কাউকে দেখলে তাঁকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত এক খাঁটি বাঙালি বলে মনে হবে আমার এবং আপনমনে বলে উঠবো 'জয় বঙ্গবন্ধু'। সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু মুজিবকোট গায়ে দেওয়া কোন লম্পট বাটপারকে দেখে যদি মুখ ফসকে বলে ফেলি 'জয় বঙ্গবন্ধু', তাহলে কী বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা হবে না?

একটা গল্প বলি। ১৯৯০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আমি হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। তখন সহ.সভাপতি ছিলেন জনাব মোঃ আলাউদ্দিন মিয়া। সেসময় মুজিবকোট পরা একজন নেতাই হাতীবান্ধায় ছিলেন। তিনি আলাউদ্দিন ভাই। দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা আলাউদ্দিন ভাইকে মুজিবকোট পরার কারণে প্রায় সকলে কটাক্ষ করতেন, টিপ্পনী কাটতেন। আর আজ? আজ আলাউদ্দিন ভাই আর একা নন। সেই কটাক্ষওয়ালাগণ ছাড়াও গ্রামে গঞ্জে অসংখ্য বর্ণশঙ্কর আওয়ামীলীগার আজ মুজিবকোট পরছেন। তারা গায়ে সুগন্ধী স্প্রে করেন, স্টাইল করে কথা বলেন, হেলেদুলে রাস্তা হাঁটেন। আমার মনে হয়, ১৫ আগস্টের পর যেমন মুজিবকোটওয়ালাদের কাউকে রাজপথে দেখা যায়নি, ঠিক তেমনি, শেখ হাসিনা বা আওয়ামীলীগ একদিন ক্ষমতায় না থাকলে হাল আমলের এই মুজিবকোটওয়ালারা একদণ্ডও বাইরে থাকবেন না। দৌড়ে বাড়ি গিয়ে মুজিবকোট খুলে ফেলবেন, লাইফবয় সাবান দিয়ে গোসল করবেন, তওবা পড়ে খাঁটি মুমিনের মত নামাজে আল্লাহর সেজদায় লুটিয়ে পড়বেন। সেজদা থেকে সহজে উঠবেন না। সর্বোচ্চ সাতবারের সীমা অতিক্রম করে অনবরত তাসবিহ পড়তেই থাকবেন, সুবহানা রাব্বিয়াল আলা, সুবহানা রাব্বিয়াল আলা.........!

অনেক কথা হলো। এবার বিদায় নিতে চাই। যাবার আগে আওয়ামীলীগ কর্তৃপক্ষের কাছে বিনত অনুরোধ, মুজিবকোট বাঁচান। মুজিবকোট পরিধানের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করুন। বঙ্গবন্ধুর পোশাকের এই ঐতিহাসিক অলঙ্কারকে "রাংকিং স্ট্যাটাস" হিসেবে ঘোষণা করুন। প্রতিবছরের নিরপেক্ষ জরিপে উত্তীর্ণ ত্যাগী, সৎ ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের গায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুজিবকোট পরিয়ে দিয়ে তাদের স্বীকৃতি দিন। এদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ একজনকে "বঙ্গবন্ধুর পাইপ" উপহার দিয়ে তাঁকে বছরের সেরা মুজিবসৈনিকের সম্মাননা দিয়ে সম্মানিত করুন। এতে মুজিবকোট বাঁচবে, বঙ্গবন্ধুর সম্মান বাঁচবে, আওয়ামীলীগ বাঁচবে, বঙ্গবন্ধুর কোটি কোটি সন্তান বাঁচবে। মুজিবকোটের এই অরাজকতা থেকে আল্লাহর ওয়াস্তে দেশটাকে বাঁচান।

লেখক: কলেজ শিক্ষক ও সাংবাদিক

(অ/মে ২৯, ২০১৬)