শরীয়তপুর প্রতিনিধি :একজন সচিবের প্রভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে গিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে ২১ আগষ্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আহত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী।

ওই সচিব টেলিফোনে তার ছোট ভাই আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে গিয়ে অনায়াসে হুমকি-ধামকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন নৌকার কর্মীদের। তার রেকর্ডকৃত ফোন কল থেকে শুনা গেছে, তিনি কোন কোন কর্মীকে দেখে নেবার মত হুশিয়ারি দিয়েও কথা বলছেন।

আগামী ৪ জুন ৬ষ্ঠ ও শেষ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের নির্বাচন। এর মধ্যে নারায়নপুর ইউনিয়নের নির্বাচনও হবে একই দিনে একই সাথে। এই ইউনিয়নে মোট ৪ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে মাঠে রয়েছেন। আওয়ামীলীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন মাদবর, বিএনপি মনোনীত চানমিয়া রাঢ়ি, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান (ঘোড়া প্রতীক) ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নাসির উদ্দিন তালুকদার আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

নাসির উদ্দিন তালুকদারের বড় ভাই কামাল উদ্দিন তালুকদার একজন অতিরিক্ত সচিব। তিনি বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে দায়িত্বরত রয়েছেন। কামাল উদ্দিন তালুকদারের ভাই নাসির তালুকদার ২০১১ সালের নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে সালাহ উদ্দিন মাদবরের সাথে পরাজিত হয়েছিলেন।


শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, নারায়নপুর ইউনিয়নের নির্বাচনের জন্য তৃনমূল থেকে নাসির উদ্দিন তালুকদারের নাম মনোনীত করে কেন্দ্রীয় মনোনয়নের বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে ভেদরগঞ্জ উপজেলা যুবলীগরে সাধারণ সম্পাদক ও নারায়নপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন মাদবর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার শিকার হওয়ায় কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বিশেষ বিবেচনায় সালাহ উদ্দিনকেই মনোনয়ন প্রদান করেন। কিন্ত দলীয় হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে নাসির তালুকদার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

নৌকার প্রার্থী সালাহ উদ্দিন মাদরর কামাল উদ্দিন তালুকদার ও তার স্ত্রী শারমিন কামালের ধারণকৃত দুইটি অডিও রেকর্ড এর বরাত দিয়ে অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনে নাসির তালুকদারের বড় ভাই কামাল উদ্দিন তালুকদার রাষ্ট্রীয় প্রভাব খাটিয়ে এলাকার বিভিন্ন লোকজনকে তার ছোট ভাইকে ভোট দেয়ার জন্য হুমকি প্রদান করছেন। তিনি জানান, কামাল উদ্দিন তালুকদার গত ২৮ মে রাতে মুরাদ হোসেন বাদল নামে এক আওয়ামীলীগ নেতাকে মুঠোফোনে নাসির তালুকদারের পক্ষে কাজ করার জন্য বললে বাদল নৌকার বাইরে কাউকে ভোট দিতে অস্বীকৃতি জানালে হুমকি প্রদান করেন।

প্রায় সাড়ে ৮ মিনিটের মোবাইল ফোন কল রেকর্ড থেকে জানা যায়, কামাল উদ্দিন তালুকদার মুরাদ হোসেন বাদলকে বলছেন “ শেখ হাসিনা আমার প্রধান অভিভাবক। আমি কামাল উদ্দিন তালুকদার এত ফেলনা লোক নই, ৪ তারিখে নির্বাচন যাইতে দাও, আমিও দেখবো ওই দেশে কয় বেটা নেতা কি করে। আমি তোমার সাথে নির্বাচন নিয়ে যতক্ষন কথা বলেছি নারায়নপুর ইউনিয়নের কারো সাথে আমার এতক্ষন কথা বলতে হয়নি। তুমি আমাকে উরংৎবমধৎফ করছো ? আমিও তোমাকে উরংৎবমধৎফ করে ছেরে দেব, যাও তুমি দেশে। তুমি আমাকে যতটা অসম্মান করেছো, আমি তোমাকে তার চেয়ে এক লক্ষ গুন বেশী অসম্মান করবো। দেখি তুমি কি করতে পারো আর আমি কি করতে পারি। আমি তোমাকে দেখবো” ইত্যাদি।

সালাহ উদ্দিন মাদবর আরো বলেন, কামাল উদ্দিন তালুকদারের স্ত্রী শানমিন কামাল গত ১ সপ্তাহ যাবৎ নারয়নপুরে অবস্থান করে বিভিন্ন উঠান বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন সেখানে তিনি মানুষকে নানান ধরনের প্রলোভন দেখাচ্ছেন (৩০ মে বিকাল ৪ টার দিকে তার একটি উঠান বৈঠকের বক্তব্য মুঠো ফোনে ধারনকৃত রেকর্ড আছে)। ভোট প্রাপ্তির আশায় একটি পরিবারকে গভীর নলকুপ স্থাপনের জন্য ৪০ হাজার টাকা দিয়েছেন, অপর দুইটি পরিবারকে ২ বান্ডেল করে মোট ৪ বান্ডেল ঢেউ টিন দিয়েছেন। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চাকুরী করে এভাবে তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে নির্বাচনের আচরণ বিধি লংঘন করে চলেছেন। আমি এ জন্য রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসন বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছি। তিনি আরো অভিযোগ করেন, স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বিসিএসপ্রাপ্ত একজন এমবিবিএস ডাক্তারকেও দেখে নিবে বলে মুঠো ফোনে হুমকি দিয়েছেন কামাল উদ্দিন। আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী সালাহ উদ্দিন মাদবর একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে কামাল উদ্দিন তালুকদারের প্রভাব থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার আহবান জানিয়েছেন।

নারায়নপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত রিটার্নিং অফিসার শ্যামল কুমার পান্ডে বলেন, আমার কাছে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সালাহউদ্দিন মাদবর একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে আমি উর্দ্ধতনদের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দিন তালুকদারের সাথে মুঠো ফোনে (০১৭০৩০০৪০৪৯) জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুরাদ হোসেন বাদলকে প্রতারনার অভিযোগে ২০১১ সালে র‌্যাব আটক করেছিল। এই দায়ভার সে আমার কাধে চাপিয়ে আমার নামে মিথ্যে প্রপাগান্ডা ছরানোয় আমি তার সাথে টেলিফোনে একটু রূঢ় কথা বলেছি। বাদলকে এলাকার মানুষ জিনের বাদশা হিসেবে জানে, সে মানুষের সাথে প্রতারনা করে।




(কেএনঅাই/এস/ জুন০১,২০১৬)