নিউজ ডেস্ক : নরেন্দ্র মোদির বিদেশনীতিতে আরও একটি চমকপ্রদ পদক্ষেপ। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবরে জানযায়, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে দুদিনের সফরে ঢাকা পাঠাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

‘গুরুত্ব পাচ্ছে ঢাকা, এমাসেই যাচ্ছেন সুষমা’ শীর্ষক শিরোনামে এখবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ‘আনন্দবাজার’। আনন্দবাজারের ওই প্রতিবেদনটি ‘উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ’-এর পাঠকদের জন্যে হুবহু তুলে ধরা হলো।

শেষ মুহূর্তে কোনও পরিবর্তন না হলে, দায়িত্ব পাওয়ার পর এটাই হবে সুষমার প্রথম একক বিদেশ সফর। সুষমার হাত দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণপত্রও পাঠাবেন নরেন্দ্র মোদি।

নিজের শপথের সময়ে সমস্ত সার্ক দেশের রাষ্ট্রনেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নজিরবিহীন একটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মোদি। সেই মিনি-সার্ক শীর্ষ বৈঠকের পরে প্রশ্ন উঠেছিল, অতঃপর? উত্তরের জন্য অবশ্য পক্ষকালও কাটাতে হল না। বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি-সহ বাংলাদেশের সঙ্গে বকেয়া সমস্ত বিষয় নিয়ে শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে তাঁর সফরে বিস্তারিত আলোচনা করবেন সুষমা।

এখনও অবশ্য আনুষ্ঠানিক ভাবে এই সফরের কথা ঘোষণা করেনি বিদেশ মন্ত্রক। মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন গতকাল শুক্রবার জানিয়েছেন, “বিদেশনীতিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জুন মাসে তাঁর প্রথম সফরে ভুটানে যাচ্ছেন। তার পর বিদেশমন্ত্রী যাবেন প্রতিবেশী আর একটি রাষ্ট্রে।”

নতুন সিদ্ধান্ত থেকে পরিষ্কার, বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিচ্ছে মোদির বিদেশনীতি। প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে সম্প্রতি বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন মোদি। বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গি সংগঠন, আইএসআই এবং জামায়াতে ইসলামির ভারত-বিরোধী রাজনীতির স্বরূপটি ঠিক কী, সেটাও বুঝে নিতে চেয়েছেন।

মোদি বিদেশ মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট অফিসারদের সঙ্গে আলোচনায় জানিয়েছেন, ঢাকার মাটি মৌলবাদী শক্তির হাতে চলে গেলে ভারতেরই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। ভারত-বিরোধী জঙ্গি সংগঠনগুলির দমনে গত পাঁচ বছরে ঢাকা যে সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে, হাসিনার সঙ্গে টেলিফোন-আলাপে মোদি তার প্রশংসা করেন। ভবিষ্যতে যাতে এই ভূমিকা অক্ষুণ্ণ থাকে, তিনি সেই অনুরোধও করেন হাসিনাকে।

বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আসা স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে মোদির আলোচনাতেও বকেয়া দুটি চুক্তি প্রাধান্য পেয়েছে।

শিরিন শারমিন জানিয়েছেন, দুদেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে এই দুটি চুক্তির বাস্তবায়ন জরুরি। মোদি বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে বিবেচনা করবেন বলেই কথা দিয়েছেন।

বিদেশসচিব পরে আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা, শক্তি ও সীমান্ত-সহযোগিতার মতো ক্ষেত্রে ঢাকা যে ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, বৈঠকে তার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরেই চুক্তি দুটি রূপায়ণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে সুষমা স্বরাজকে নির্দেশ দেন মোদি।’

তবে চুক্তি দুটির দিনক্ষণ নির্ধারণ করে আসা সুষমার সফরের উদ্দেশ্য নয় বলেই বিদেশ মন্ত্রকের সূত্র জানিয়েছে। কিন্তু এই বিষয়গুলি নিয়ে যে নতুন সরকার আন্তরিক, সে কথাই বিদেশমন্ত্রী স্পষ্ট করবেন তাঁর ঢাকা সফরে।

মূলত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও তিস্তা চুক্তি করতে পারেননি মনমোহন সিংহ। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি ছিল, প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী জলবণ্টন হলে রাজ্য ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মমতার আপত্তি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে এগোবেন কি না, সেটাও ভেবে দেখতে হবে নরেন্দ্র মোদিকে।

স্থল-সীমান্ত চুক্তিতে নীতিগত ভাবে রাজি ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং অরুণ জেটলির মতো বিজেপি নেতারা। কিন্তু দলের অসম এবং পশ্চিমবঙ্গ শাখার আপত্তিতে চুক্তিটি আটকে যায়। ওই চুক্তির জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছিল। বিজেপি বেঁকে বসায় এর জন্য প্রয়োজনীয় দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা জোগাড় করে উঠতে পারেনি মনমোহন সরকার। সুষমার ঢাকা সফরের পর রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও এবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসবেন মোদি।

(ওএস/এটিআর/জুন ০৭, ২০১৪)