লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি :নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই চিকিৎসক এবং এক সহকারী কর্তৃক সাংবাদিক লাঞ্ছিত করার ঘটনায় অভিযুক্তরা দোষ স্বীকার করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন নড়াইলের সাংবাদিক সমাজ।

গত ৬ জুন নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহতদের ছবি তোলার সময় লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত মেডিক্যাল অফিসার ডা: লিপিকা রানী ও ওয়াসি উদ্দীন আহমেদ এবং তাদের সহকারী প্রশান্ত কুমার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাঁধা দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় নয়া দিগন্ত পত্রিকার নড়াইল সংবাদদাতা ফরহাদ খান এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেনকে লাঞ্ছিত করা হয়।

এদিকে, এ খবর (সাংবাদিক লাঞ্ছিত) পত্রিকায় প্রকাশ না করার জন্য সাংবাদিকদের বিভিন্ন ভাবে ম্যানেজের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন তারা। নিজেদের দোষও স্বীকার করেছেন। অপরাধ স্বীকার করে প্রশান্ত কুমার মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, আমি আর জীবনে এ ধরণের আচরণ করব না। ওনার (ডা: লিপিকা) কথায় আমি হঠাৎ করে ইমোশন্যাল হয়ে গেছি। হঠাৎ করে ক্যান (কেন) এভাবে হয়ে গেছে, আমি জানি না।

অন্যদিকে, দুই সাংবাদিক লাঞ্ছিত করার খবর প্রকাশিত হলে গত বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকা লোহাগড়ায় ঢুকতে দেয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া মোড় এলাকা থেকে নয়া দিগন্তের নড়াইল ও লোহাগড়ার পত্রিকা পরিবেশকদের ব্যান্ডেল সরিয়ে ফেলা হয়। এছাড়া গত বুধবার দৈনিক জনতা, আজকালের খবর ও আমার সংবাদ পত্রিকায় এ খবর প্রকাশিত হলে এই তিনটি পত্রিকাও ভাটিয়াপাড়া মোড় এলাকা থেকে চুরি হয়ে যায়। এ কারণে এসব পত্রিকায় প্রকাশিত খবর পাঠকেরা পড়তে পারেননি বলে জানিয়েছেন নড়াইলের পত্রিকা পরিবেশক স্বপন কুন্ডুসহ অন্যান্য পরিবেশকরা।

লোহাগড়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম আলমগীর কবির বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য পত্রিকার ব্যান্ডেল চুরি করেছে। এ বিষয়ে পত্রিকা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নজরদারি প্রয়োজন।

লাঞ্ছনার শিকার সাংবাদিক ফরহাদ খান এবং সাজ্জাদ হোসেন জানান, ৬ জুন দুপুরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহতদের ছবি তোলার সময় তাদের পেশাগত দায়িত্বপালনে তাদের বাঁধা দেয়া হয়। ডা: লিপিকা ও ওয়াসি উদ্দীন স্থানীয় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাঁধা দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিচয় জানার পরও ওই দুই চিকিৎসক তাদের সাথে আশালীন আচরণ করেন। এ সময় চিকিৎসকদের সহকারী প্রশান্ত কুমারও আক্রমণাক্ত ভাষায় তাদের দিকে তেড়ে আসেন। দুই চিকিৎসক ও তার সহকারীর এমন আচরণে এক পর্যায়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন ওই দুই সাংবাদিক। লাঞ্ছিত সাংবাদিকরা আরো জানান, ছবি তুলতে বাঁধা দিয়ে চিকিৎসক লিপিকা ও ওয়াসি উদ্দীন উচ্চস্বরে চিৎকার করেন। এ সময় তারা বলেন, ছবি তুলতে অনুমতি লাগে। কে আপনাদের ছবি তোলার অনুমতি দিয়েছে? ছবি তোলার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনারা বেরিয়ে যান।

এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ (অন্য মাধ্যমে ধারণকৃত) দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নড়াইল ও লোহাগড়ায় কর্মরত সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। ঘটনার ছয়দিন পরও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ রয়েছে, ডাঃ লিপিকা ও ওয়াসি উদ্দীন স্থানীয় চিকিৎসক হওয়ায় রোগি, অভিভাবকসহ সব পেশার মানুষের সাথে সব সময় দাম্ভিকতা দেখান। লিপিকার বাড়ি লোহাগড়ার জয়পুর এবং ওয়াসি উদ্দীনের বাড়ি শালনগর গ্রামে বলে জানা গেছে। এদিকে, প্রশান্ত কুমারের বাড়ি লোহাগড়ার কলাগাছি গ্রামে হওয়ায় তিনিও স্থানীয় প্রভাব দেখিয়ে থাকেন। এতে করে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা চরম ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা


(আরএম/এস/জুন ১১,২০১৬)