প্রবীর সিকদার


অনেকেই বলেন, হিন্দুরা প্রতিরোধ করতে পারে না ,ওরা দুর্বল ; তাই ওরা সবলের হাতে নির্যাতিত হয়। আমি বলি, দেশে প্রতিটি হিন্দু নির্যাতনের যদি বিচার হতো, তাহলে হিন্দুরা সবল থাকতে পারতো। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই হিন্দুরা দুর্বল । আর তাই ওরা বাধ্য হয়েই দেশ ত্যাগ করে।

কেউ কেউ বলেন, ভারতেও সংখ্যালঘু হিসেবে মুসলমান নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। আমি সেটিকে সত্য বলে মেনে নিয়েই বলছি, রাষ্ট্র সেখানে নির্যাতনের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়; বিচার হয়। আর তাই তো সেখানকার সংখ্যালঘু মুসলমানদের ভারত ত্যাগ করে বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানে যেতে হয় না। বাংলাদেশের হিন্দুদেরও দেশ ত্যাগ করতে হতো না, যদি তারা প্রতিটি সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার পেতো। জন্মভূমি ছাড়তে কার মন চায়!

আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন তথা সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এটি বিশাল এক লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এই অসৎ ব্যবসার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকেই সবার আগে সোচ্চার হতে হবে। রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থায় প্রতিকার পেলে হিন্দু কিংবা সংখালঘুরা তথা নির্যাতিতরা সাহসী হতো আর নির্যাতনকারী দুর্বৃত্তরা সাহস হারিয়ে স্বাভাবিক সুস্থ জীবনযাপনে বাধ্য হতো।

আর এর ধারাবাহিকতায় দেশে সুস্থ-সুন্দর রাজনীতি একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে যেতো। আমরা কেন বার বার ঘুরে ফিরে অসুস্থ ধারায় পর্যুদস্ত হই, সেটাও গভীরভাবে অনুধাবনের সময় এখনই।

আমি খুব পরিস্কার করেই বলতে চাই, যে সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিবেশি ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে সৌহার্দ্য ও সহিষ্ণু আচরণ করতে পারে না, সেই সম্প্রদায়ের মানুষ তার আপন সমপ্রদায়ের মানুষের সাথেও সৌহার্দ্য ও সহিষ্ণু আচরণ করতে পারবে না। সৃষ্টিকর্তা না করুন,এই ভূখণ্ডে যেদিন ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ শূন্য হয়ে যাবে, সেদিন ওই সত্য হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করা যাবে। দুর্ভাগ্য, সেদিন হা-হুতাশ করা ছাড়া আর কিছুই করবার থাকবে না।

(পিএস/অ/জুন ১৩, ২০১৬)