নন্দীগ্রাম(বগুড়া)প্রতিনিধি: বগুড়ার নন্দীগ্রামে চলমান সাঁড়াশি অভিযানে আসামি ধরতে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের সাথে আওয়ামী শ্রমিকলীগ ও জাতীয় পার্টি(এরশাদ) সংশ্লিষ্ঠতার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। মোটাংকের টাকার বিনিময়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের কাছে পদ বিক্রয় ও সহযোগীতা করেছে ওই দুই সংগঠন। সাঁড়াশি অভিযানে বিভিন্ন মামলায় জামায়াত-শিবির ধরতে গিয়ে বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে পুলিশ।

উপজেলা শ্রমিকলীগ ও পৌর জাতীয় পার্টির নেতাদের ছত্রছায়ায় জামায়াত শিবির সরকার বিরোধী সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ড করবে বলে স্থানীয় থানা পুলিশ এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রমতে, জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের নিয়ে পৌর জাতীয় পার্টির ৬নং ওয়ার্ড (দামগাড়া-মাঝগ্রাম) কমিটি দেয়াসহ সরকারি বিরোধী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততা, সরকার ও স্থানীয় পুলিশকে নিয়ে কুটুক্তি, পুলিশি কাজে বাঁধা প্রদানের অভিযোগে গত ১৩ই জুন দুপুরে পৌর জাপার আহবায়ক প্রভাষক মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইদিন বিকালে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের ডেকে উপস্থিতিদের সম্মুখে উভয় কমিটির নেতৃবৃন্দরা জামায়াত-শিবিরের সাথে জাপার সংশ্লিষ্টতার তথ্য জানান ওসি ইকবাল। যারা শিবির-তাদেরকে ছত্রছায়া দিতেই জাপার ওয়ার্ড কমিটিতে শিবির কর্মীদেরকে নিয়ে পৌর জাপার আহবায়ক মোটাংকের টাকা দিয়ে পদ বিক্রয় করেছে বলেও জনশ্রতি রয়েছে।

পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনিছুর রহমান জানান, জামায়াত-শিবিরের সাথে পৌর জাপার আহবায়ক মাসুদ রানার সংশ্লিষ্ঠতা সুস্পষ্ট প্রমান করেছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ওয়ার্ড শিবিরের কমিটির নেতাকর্মীদের নিয়ে জাপার ওয়ার্ড দিয়েছেন আহবায়ক মাসুদ রানা। মূলত, জামায়াত-শিবিরের গা’ বাঁচাতেই তিনি টাকা নিয়ে পদ বিক্রি করেছেন।

যোগাযোগ করা হলে পৌর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় পার্টি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রাজনীতি বিশ্বাস করেনা। আমাদের সংগঠনে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদের কোনো জায়গা নেই। পৌর জাপার ৬নং ওয়ার্ডের কমিটির বিষয়ে আমার জানা নেই। আহবায়ক ছাড়াও পৌর জাপায় আমিসহ ৯জন আছি। আমাদের না জানিয়ে ওই কমিটি আহবায়ক নিজেই অনুমোদন করেছেন। বিষয়টি তিনিই বলতে পারবেন। ওই ওয়ার্ডের যদি কেউ জাতীয় পার্টির নাম ভাঙিয়ে সরকার বিরোধী সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ড ও অনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনসহ সচেতন জনতাকে সোচ্চার থাকার আহবান করছি।

বগুড়া জেলা জাপার সহ-সভাপতি ও উপজেলা জাপার সভাপতি হাজী নূরুল আমীন বাচ্চু বলেন, জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের ছত্রছায়া ও পুলিশি কাজে বাঁধা প্রদানের অভিযোগে পৌর জাপার আহবায়ক মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। খবর পেয়ে আমরা থানায় গেলে পুলিশ বিষয়গুলো আমাকেও বলেছে। কেউ যদি জামায়াত-শিবির তথা জাপার রাজনীতি করতে চায়, তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া যায়না। সাংগঠনিক কর্মকান্ড গতিশীল করতে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর ওয়ার্ড কমিটি করা হচ্ছে। এতে কিছু ভূলভ্রান্তি থাকতে পারে। সেগুলো সমাধান করা হবে।
অন্যদিকে, একটি ছবিতে এক জঙ্গীর সাথে পাশাপাশি দুজন, এমন প্রমানাদি নিয়ে গত ১৪ই জুন স্থানীয় বাসষ্ট্যান্ড এলাকা থেকে কৈগাড়ী গ্রামের খোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জঙ্গীবাদের সাথে সংশ্লিষ্ঠতা থাকতে পারে, এমন সন্দেহে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এলাকাবাসী জানিয়েছে, চাঁদে সাঈদিকে দেখার গুজবে ২০১৩সালের ৩মার্চ স্থানীয় বাসষ্ট্যান্ডে জামায়াতের জনসভায় বক্তব্যে দেন খোরশেদ। ওইদিন উপজেলা পরিষদ, থানায়সহ কয়েকটি সরকারি অফিসে দফায় দফায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ওইসব ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় খোরশেদ আলমের নাম নেই। খোরশেদের বাড়িতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জামায়াত নেতৃবৃন্দ এসে তাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালায়। এমন সুস্পষ্ট তথ্য ও জনশ্রতি রয়েছে। খোরশেদ আলমকে ১৪ই জুন গ্রেফতারের পর উপজেলা শ্রমিকলীগ নেতাকর্মীরা দলবেঁধে থানায় আসে। খোরশেদ তাদের শ্রমিকলীগ সদস্য আখ্যায়িত করে থানা থেকে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা বলেন, খোরশেদ জামায়াতের সক্রিয় সদস্য। সে সরকারি দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য। যেদিকে বৃষ্টি-সেদিকেই ছাতা। থানার ওসি হাসান শামীম ইকবাল জানান, জামায়াত শিবির নেতাদের নিয়ে শ্রমিকলীগ ও জাতীয় পার্টির কমিটি করেছে, এমন তথ্য সুষ্পষ্ট। চলমান বিশেষ অভিযান ও সাঁড়াশি অভিযানে আসামি ধরতে গিয়ে বিব্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।


(এমএনআই/এস/জুন ১৫,২০১৬)