শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরে এক দিনমজুরের স্ত্রী বিড়ালের কামড়ের রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে ৫টি প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাসহ অপ্রয়োজনীয় ইনজেক্শন পুশ করে হাসপাতালে ভর্তি করে তার কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অসহায় রুগির সাথে প্রতারণার অভিযোগে শরীয়তপুর সদর হাসপাতারের চিকিৎসক ডাঃ সুমন কুমার পোদ্দারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১০ জুন শরীয়তপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের ধানুকা গ্রামের দিন মজুর শাহজাহান সরদারের স্ত্রী রেহানা বেগমকে বেলা ১১টার দিকে বিড়ালে কামড় দেয়। এরপর তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে আনা হয়। এ সময় দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাঃ সুমন কুমার পোদ্দার রুগীকে বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিন না দিয়ে হৃদরোগের পরীক্ষা, হৃদযন্ত্রে কোলেস্টরেল এর পরীক্ষা, লিভার সমস্যার পরীক্ষা, ডায়েবেটিস পরীক্ষা ও রক্তের রুটিন চেক আপরে জন্য সিবিসি, আরবিএস, ইসিজি, লিপিট প্রফাইল, এসজিপিটি ও সিরাম ক্রিটিনান নামের ৬টি পরীক্ষা দিয়ে দালালের মাধ্যমে তার পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান। এ সময় রোগীর স্বামী শাহজাহান সরদার বিড়ালে কামড়ের ভ্যাকসিন দিতে বললে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা ছাড়া চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয় বলে জানান ডাঃ সুমন। বাধ্য হয়ে ডাক্তারের নির্দেশে ৩ হাজার ২শ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা করানোর পর রুগীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন চিকিৎক।

হাসপাতালে ভর্তির পর রুগীকে বিড়ালে কামড়ের ভ্যাকসিন না দিয়ে একটি ভিটামিন স্যালাইনসহ অন্যান্য রোগের ৫টি দামী ইনজেকশন যেমন- ক্লিনোসল, টপসেফ, এক্সন, ডিসোপেন, সেরিটন লিখে দেন ভর্তি ফরমে। এতে হয়রানী ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় রোগী। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ১১ জুন রোগীর স্বামী শাজাহান সরদার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিভিল সার্জন বরাবরে প্রেরণ করেন। ১২ জুন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুনীর আহমদ খানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে পরবর্তী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া নির্দেশ দেয়ার সাত দিন পার হলেও প্রতিবেদন দাখিল করেনি কমিটি।

ডাক্তার সুমন পোদ্দার কর্তৃক প্রতারিত রুগি রেহানা আক্তার বলেন, গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে আমার হাতে বিড়ালে কামড় দেয়। আমি সাথে সাথে আমার স্বামীকে নিয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে যাই। সেখানে ডাক্তার সুমন পোদ্দারকে দেখানোর পর সে আমাকে বিড়ালের কামড়ের চিকিৎসা না দিয়ে কয়েক হাজার টাকার টেষ্ট দেয় আর হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন ও অনেকগুলো সুই দেয়। আমি বার বার বিড়ালের কামড়ের ঔষধ দিতে বললেও ডাক্তার সাহেব আমাকে দিয়ে জোর করে পরীক্ষা করায়।

রেহানার স্বামী শাহজাহান সরদার বলেন, আমার স্ত্রীকে বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিন দিতে অনুরোধ করলে ডা. সুমন পোদ্দার পরীক্ষা ছাড়া কোন চিকিৎসা দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। এরপর নিরুপায় হয়ে ডাক্তারের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে ৩ হাজার ২শ টাকার পরীক্ষা করি। পরীক্ষা রিপোর্ট নিয়ে আসলে ভর্তি ফরমে ৫টি ইনজেকশন লিখে হাসপাতালে ভর্তি দিয়ে দেয় ডাক্তার সুমন পোদ্দার। ৫টি ইনজেকশনই বাইরে থেকে কিনে আনতে হয় এবং ওই দিনই ৫টি ইনজেকশন রুগীর শরীরে পুশ করা হয়। ভর্তির পরের দিন দেয়া হয় বিড়ালে কামড়ের ভ্যাকসিন। এখানে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও হয়রানী শিকার হয়েছি। আমি জেলা প্রশাসকের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে দরখাস্ত করেছি।

ডাক্তার সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, আমার কাছে রুগি যখন চিকিৎসা নিতে আসে তখন সে অচেতন বেহুস অবস্থায় ছিল। সে আমাকে বিড়ালে কামড়ের কথা বলেনি। তার শরীর দুর্বল থাকায় তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।

শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. মসিউর রহমান বলেন, চিকিৎসক সুমন পোদ্দার যে সকল প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা ও ব্যবস্থাপত্র দিয়েছে তা বিড়ালের কামড়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। রুগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের কাজ এখনো চলমান। প্রতিবেদন হাাতে পাওয়ার পর অভিযোগ সঠিক প্রমানিত হলে সাধ্যানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করবো। আমার সাধ্যের বাইরে চলে গেলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

(ওএস/এএস/জুন ১৮, ২০১৬)