পীরগঞ্জ (রংপুর)প্রতিনিধি :রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের দিকে নজর নেই রংপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের। মহাসড়কটির রংপুর অংশের প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়কে বড় বড় খানা খন্দ আরও হামে ভরে যাওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ফলে ঈদে ঘুরমুখো যাত্রীরা নির্বিঘ্নে বাড়ীতে ফিরতে পারবে না বলে বাস চালকরা আশংকা করছেন। মাঝে মধ্যে বিভাগীয় সংস্কার করা হলেও সেখানেও দুর্নীতি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই সড়কে যানবাহন চলতে গিয়ে নানান সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে চালক-যাত্রীরা অভিযোগ করছেন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কটি রংপুরের পীরগঞ্জের দক্ষিণে চম্পাগঞ্জ থেকে রংপুরের দিকে সৈয়দপুরের চিকলী পর্যন্ত। ওই সড়কের পীরগঞ্জের চম্পাগঞ্জ থেকে রংপুর টার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় হাজারো বড় বড় গর্ত আর অসংখ্য স্থানে বিটুমিন ফুলে উঠে হামের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটির এমন নাজুক অবস্থা হলেও সংস্কার কিংবা মেরামতের উদ্যোগ নিচ্ছে না রংপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। তবে মাঝে মধ্যে রংপুর সওজ’র ১নং জোনের উপ-বিভাগীয় সহকারী প্রকৌশলী-১ ও উপসহকারী প্রকৌশলী সংস্কার করছে বটে। কিন্তু সেখানেও ঘাপলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রংপুর সওজ’র এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান- সড়ক সংস্কারের জন্য যে পরিমান বিটুমিন নিয়ে যাওয়া হয়, তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশী কালোবাজারে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি সংস্কার কাজে ব্যবহৃত শ্রমিক, ট্রাক, উপকরনেও (পাথর-বালি-ইট) ঘাপলাও করা হচ্ছে বলে সুত্রটি দাবী করেছে। ওই কাজে জড়িত শ্রমিকরা মুখ বুজে দুর্নীতি হজম করছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকরা জানায়।

এ ব্যাপারে সওজ’র উপসহকারী প্রকৌশলী এখলাছ হোসেন বলেন- বিভাগীয় বাজেট না থাকলেও খুব কষ্ট করে সড়কটি চলাচলের উপযোগী রাখা হচ্ছে। আসন্ন ঈদে যানবাহন চলাচলে যথা সম্ভব সংস্কার করা হচ্ছে। ভাঙ্গার কারণে গত ঈদে মিঠাপুকুরের অভিরামপুরে সারিবদ্ধ হয়ে গাড়ি চলেছে। অপরদিকে সড়কটির উপর দিয়ে প্রতিনিয়তই চলাচলরত এসএ পরিবহনের চালক আজাহার আলী বলেন- রংপুর অংশের রাস্তাটি খুবই খারাপ। গর্ত, ভাঙ্গা আর রাস্তায় উচু হওয়ার কারণে ঝাঁকিতেই গাড়ীর গ্লাস ভেঙ্গে যায়, কখনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ভাঙ্গার কারণে রোজার মাসে যাত্রীরাও খুব কষ্ট পায়। অনেক সময় গর্ত পাশ কাটাতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে।

জানা গেছে, মহাসড়কটির পীরগঞ্জের মাদারহাট, খেদমতপুর, গনিরহাট, জামতলা, মকিমপুর, রাউতপাড়া, বিশমাইল, মিঠাপুকুরের শঠিবাড়ী, গড়েরমাথা, রশিদপুর, অভিরামপুর, বলদীপুকুর, বৈরাগীগঞ্জ, পায়রাবন্দসহ টার্মিনাল পর্যন্ত অংসখ্য স্থানে হাজারো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে গত বছরের ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুর শহর ও বাইপাশ দিয়ে নির্মিত চারলেন সড়কের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের ২ মাস পরেই টার্মিনাল থেকে রংপুর দর্শনা রেল গেট পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার চার লেনের সড়ক ফেটে গর্তের সৃ্িষ্ট হয়। ঢাকা থেকে সওজ’র ২ সদস্যের একটি টীম গত ১১ আগষ্ট সড়ক পরীক্ষা করে এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাসুমা বেগম ঠিকাদারীকে সংস্কারের নির্দেশ দেয়। তারপরেও কয়েকদফা সওজ’র পক্ষ থেকে সংস্কার করা হলেও সড়কটি ঠিক হচ্ছে না। পাশাপাশি সড়ক কেটে নতুন করে গর্ত করায় মোটরসাইকেল, অটো-রিক্সা, টেম্পোসহ ছোট যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলছে।

সংস্কার কাজে নিয়োজিত উপসহকারী প্রকৌশলী এখলাছ হোসেন বলেন- সড়কটির ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে পুকুর থাকায় টেকসই হচ্ছে না। সড়ক নির্মানের আগে সয়েল টেষ্ট (মাটি পরীক্ষা) করা উচিত ছিল। উপবিভাগীয় প্রকৌশলী-১ ফিরোজ মিয়া বলেন- রাস্তাটিতে কারিগরি ত্র“টির কারণে বিভিন্ন স্থানে হাম আর গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। রংপুর সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন- অভ্যন্তরীণ সংস্কার বরাদ্দ কম থাকলেও রংপুর অংশের প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের উপযোগী রাখতে আপ্রান চেষ্টা করছি। অপরদিকে ৯ কোটি টাকা বরাদ্দে মেসার্স মাসুমা বেগম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চারলেনের কাজ করেছে। সড়কের ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড গত ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়ায় এখন আমাদেরকেই সংস্কার করতে হবে।


(জিকেবি/এস/জুন২০,২০১৬)