বিশেষ প্রতিনিধি : ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের  অভাবে পুড়ছে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলা। মার্চ মাসে  রামুতে ৪ দফা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ভষ্মিভূত হয়েছে ৩০ টি বসত ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আড়াই কোটি টাকা।

ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। অনাহারে, খোলা আকাশের নিচে পার করছে মানবেতর জীবন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রামুতে বিগত ৪ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল এর মধ্যে রশিদনগর ইউনিয়নের কাদমরপাড়া, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া, গর্জনিয়া ইউনিয়নের মাঝিরকাটা এবং রাজারকুল ইউনিয়নের নয়া পাল পাড়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ও ভয়াবহতা ছিলো অনেক।
৪ মার্চ রামুর রশিদনগর ইউনিয়নের কাদমরপাড়ায়অগ্নিকাণ্ডে ৫ টি বসতঘর সম্পূর্ণ ভষ্মিভূত হয়। এতে ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওইঅগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বসত ঘরের মালিকরা হলেন, হাজী আবু বক্কর ছিদ্দিকের ছেলে আবুল খায়ের ও আবুল কালাম, মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী সামশুন নাহার, মৃত ছৈয়দ আকবরের ছেলে নুরুল আবছার ও আনু মিয়া।
ক্ষতিগ্রস্তরা আরো জানান, অগ্নিকাণ্ডের পর কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস এর দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়েও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অগ্নিনির্বাপক চালু করতে পারেনি। পরে চকরিয়ার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দমকল বাহিনীকে খবর দিলে তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়।
ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ অগ্নিকাণ্ডে প্রতিটি পরিবারে সংরক্ষিত, ধান, চাল, কাপড়, স্বর্ণালংকার, ছেলেমেয়েদের বই, খাতাসহ সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। এতে এসব পরিবারের ২০ লাখ টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
৮ মার্চ রামু উপজেলার চৌমুহনী স্টেশন সংলগ্ন মণ্ডল পাড়ায় ভয়াবহঅগ্নিকাণ্ডে ৯টি বসতঘর ও ৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো পাঁচটি বসতঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা।
এ অগ্নিকান্ডে মন্ডল পাড়ার মৃত নজু মিয়ার ছেলে রুহুল আমিন ও ছুরুত আলম, মৃত মনির আলমের ছেলে কলিম উল্লাহ ও ছলিম উল্লাহ, হাজ্বী বাঁচা মিয়ার ছেলে আব্বত হোছন ও শামসুল আলম, শামসুল আলমের ছেলে রমজান আলী, মো. শাহজাহান ও ফোরকানের বসতঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এছাড়াও ব্যবসায়ী মুজিবের মালিকাধীন ফারজানা হার্ডওয়ার, কাইয়ুম উল্লাহর মালেক ট্রেডার্স, মো.বখতেয়ারের বইমেলা লাইব্রেরি, শামসুল আলমের পানের দোকান, মুবিনুল হকের মুবিন টেলিকম, এবং মো. হোছনের ফুলঘরও সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
১৫ মার্চ রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়নের মাঝিরকাটা এলাকা ভয়াবহঅগ্নিকাণ্ডে ৭টি বসতঘর পুড়ে যায়। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ছিলো ৮০ লাখ টাকা। এঅগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বসত ঘর মালিকরা হলেন, সুলতান আহমদের ছেলে আবদুল গফুর, ভেলু আহমদের ছেলে আবু শামা ও মো. ইসলাম, আলী হোছাইনের ছেলে মেহের আলী, আলী হোছাইনের স্ত্রী রোকেয়া বেগম, মেহের আলীর ছেলে নবী হোছন ও নুর হোসেনের ছেলে ফরিদুল আলম। ওই এলাকার লোকজনের অভিযোগ, অগ্নিকাণ্ডের ২ ঘন্টা পরও ফায়ার সার্ভিসের দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেনি।
রামুতে সবশেষ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২ এপ্রিল উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের নয়া পাল পাড়ায়। এখানেঅগ্নিকাণ্ডে দুটি বসত ঘর ভষ্মিভূত হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন, নিরেন্দ্র চন্দ্র পালের ছেলে তপন পাল ও সজল পাল। ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, এঅগ্নিকাণ্ডে মালামালসহ দুটি বসত ঘর ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে
এসব অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া তথ্য মতে, বিগত একমাসে রামুতে সংগঠিত চারটি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দমকল কর্মীরা দুটি স্থানে দেরিতে এসেও যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে অগ্নি নির্বাপক কাজ চালাতে পারেনি। অপর দুটিঅগ্নিকাণ্ডে কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এর গাড়ি দেরিতে আসায় এখানকার দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি।
গর্জনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মুহিবুল্লাহ চৌধুরী জিল্লু জানিয়েছেন, রামুতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে মানুষ সর্বস্ব হারাচ্ছে। অথচ রামুতে প্রস্তাবিত ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন স্থাপনের জন্য অর্থ বরাদ্ধ দেয়ার দীর্ঘদিন পরও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যে কারণে রামুবাসী প্রতিবছর ছোট-বড় অগ্নি দুর্ঘটনায় অসহায় আত্মসমর্পণ করছে।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের সহকারি পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানিয়েছেন, একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে রামুতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আহাজারি বাড়ছে। তাই রামুতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম কর্মীসহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সকলকে আন্তরিক ভূমিকা পালন করতে হবে।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, রামুতে দীর্ঘদিন ধরে ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন স্থাপনের জমি নিয়ে বিরোধ লেগে আছে। বর্তমানে রামু হাসপাতাল গেইট এলাকায় নির্ধারিত স্থান নিয়েও চলছে জটিলতা। প্রস্তাবিত ওই জমির মধ্যে আংশিক ব্যক্তি মালিকানাধিন। রামু-কক্সবাজার আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের জন্য নিজ উদ্যোগে ক্রয় করতে উচ্ছুক। কিন্তু জমিটির মালিক বিক্রি করতেও নারাজ।
এর ফলে বিকল্প উদ্যোগের অভাবে ঝুলেই থাকলো রামুবাসীর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন।

(টিটি/এএস/এপ্রিল ০৮, ২০১৪)