সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে এক ঘের ম্যানেজারকে মারপিট করে বাসায় বোমা হামলা ও লুটপাটের অভিযোগে সাতক্ষীরার কুখ্যাত ভূমিদস্যু বশির আহম্মেদের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শনিবার রাত ১০টায় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বাঁওচাষ গ্রামের অজিয়ার রহমান সরদারের ছেলে রফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে আশাশুনি থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউপি’র সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, তার বড় ভাই এসএম আকবর হোসেনের বাঁওচাষ গ্রামে নেকড়াখালি নামে একটি চিংড়ি ঘের রয়েছে। ২২ বছর ধরে আকবর হোসেন ওই ঘের করে আসছেন। পাঁচ বছর তিনি (রফিকুল) ওই ঘেরের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, চিংড়ি ঘের করতে হলে তাকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে এক সময়কার চোরাচালানি, পাটনী মাঝি সাতক্ষীরার বহুল আলোচিত ভূমিদস্যু বশির আহম্মেদ তাকে হুমকি দেয়। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় গত ১১ এপ্রিল সকালে বশির আহম্মেদসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ২৫/২৬জন সদস্য তাদের চিংড়ি ঘেরের বাসায় হামলা চালায়।

এ সময় মুহু মুহু বোমা বিষ্ফোরণ করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় তাকে পিটিয়ে জখম করা হয়। এ সময় কাঠের বাক্সে থাকা এক লাখ টাকা, তিনটি খেওলা জাল ও পাঁচটি টর্চ লাইট লুট করে নিয়ে যায় দুর্বত্তরা। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। একপর্যায়ে উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশে প্রায় দু’ মাস পর শনিবার রাতে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবিব চাঁদাবাজি, বোমা বিষ্ফোরণসহ মারপিটের ধারায় এ মামলা (১৫নং) রেকর্ড করেন।

মামলায় বশির আহম্মেদসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ ও ১০/১২জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। তবে বশির আহম্মেদ যেভাবে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিজের জবর দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করে আসছেন তাতে পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করবে কিনা তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।

রফিকুল ইসলাম আরো জানান, আশাশুনি, দেবহাটা ও কালীগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়াও অসহায় মানুষের কাছ থেকে জোরপূর্বক জমি কেড়ে নিয়ে চিংড়ি ঘের করে আসছে বশির আহম্মেদ। সংগ্রাম ভবন ও সং¤্রাট হোটেলে ডেকে এনে অনেক হিন্দুর কাছ থেকে জোরপূর্বক দলিলে সাক্ষর করিয়ে নিয়ে দেশ ছাড়া করেছে বশির। প্রতিবাদ করায় অনেকের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা ছাড়াও বাইরের বিভিন্ন থানায় তার মনোনীত লোক দিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে সে।

বর্তমানে পুলিশ সুপারের সবচেয়ে কাছের লোক (স্বঘোষিত দালাল) বলে পরিচিত সাতক্ষীরার এক সাংবাদিককে মোটা টাকা দিয়েই তিনি পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একের পর অন্যের ঘের দখল ও জমি লিখে নিচ্ছেন। অনেকেই গোপনে চাঁদা দিয়ে রেহাই পাচ্ছে। সম্প্রতি বশির আহম্মেদ ভালুকা চাঁদপুর এলাকায় কোটি টাকা প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত তার ভাগ্নী জামাই আঙুরকে সভাপতি বানিয়ে পুলিশ ও বিজিবি উপস্থিত রেখে পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরকে দিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করিয়েছে।

উদোবধন অনুষ্ঠান শেষ না হতেই প্রতারিত গ্রাম বাসিদের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন বশির আহম্মেদ ও তার ভাগ্নি জামাই আঙুর। যদিও বশির আহম্মেদ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ ব্যাপারে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবিব জানান, আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।

(আরকে/এটিআর/জুন ০৮, ২০১৪)