কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : ৯৯ বছর বয়সের অতসীপর বৃদ্ধ তোফাজ্জেল। শখ করে একটা ছাগল পালন করেছিলেন। মানুষের মুখে শুনতে পেয়েছিলেন গ্রামের মেম্বরদের কাছে গেলে নাকি বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়। সরকার নাকি টাকা দেয়। বয়স্ক ভাতার কার্ড পাওয়ার আশায় সেই মেম্বারের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিনিময়ে সে টাকা চাই। সে জন্য ছাগলটা বিক্রি করে স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছে টাকা দেয়। তবে টাকা দিয়েও কোন কাজ হয়নি তার।

অনেক বয়স হয়েছে। বয়সের ভারে সোজা হয়ে হাটতে পারেন না তিনি। সব কথা কানে শুনতেও পারে না। বলতে হয় জোরে জোরে, এক কথা ২ থেকে ৩ বার। দুই চোখে দেখতেও পায় না ভালো। এর মধ্যেই এ বছর পবিত্র রমজান মাসের ১৮টি রোজায় রাখছেন তিনি। প্রতিনিয়িত নামাজ আদায় করছেন।

বলছিলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি তোফাজ্জেল এর কথা।

দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ের জন্ম দাতা এই তোফাজ্জেল। বর্তমানে ছেলে মেয়েদের সকলের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে মেয়েরা আলাদা থাকে। ছেলে-মেয়েদের মাঝে জমি জমা ভাগ করে দিয়েছেন। রয়েছে শুধু তার ভাঙ্গা বাঁশের বেড়া দেওয়া টিনের ঘরটা। সেখানেই তার বৃদ্ধ স্ত্রী মাজু খাতুন নিয়ে থাকেন তোফাজ্জেল। অভাবের সংসার। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনমতে পায়ে হেটে বাড়ী থেকে মসজিদ আর মসজিদ থেকে বাড়িতে আসা যাওয়া করে।

এলাকার মধ্যে সকলের চেয়ে বয়স বেশি হওয়া সত্বেও এখন পর্যন্ত বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়নি তার।

তোফাজ্জেল জানান, কানে ভালোমতো শুনতে পারি না। হাটাচলাও ঠিক মতো করতে পারিনা। প্রায় সময়ই অসুখ লেগেই থাকে। চোখেও কম দেখি।

তিনি জানান, ছেলে মেয়েরা যে যার মতো। তারা আমার খোঁজ রাখে না। ভাতার কার্ড করার জন্য মেম্বারকে বলেছিলাম সে করে দেয়নি। কতো লোকের কাছে গিয়েছি কেউ কোন কাজ করেনি। আচ্ছা কত বছর বয়স হলে ভাতা হয়? আমার চেয়ে বয়সে যারা ছোট তারা ভাতা পায়, আমি পাবো কবে?

এত বৃদ্ধ বয়সে রোজা রাখার ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, মরতে তো হবেই। আল্লাহর হুকুম পালন করেই যায় যে ক’দিন বাঁচি। তাই রোজা রেখেছি।

তোফাজ্জেলের স্ত্রী মাজু খাতুন জানান, কত লোকই তো আসে ভোটের কার্ড দেখে যায়, কেউ আবার নিয়ে যায় তবে ভাতা তো হয় না। মেম্বারকে টাকাও দিয়েছিলাম ছাগল বিক্রি করে। সে টাকা তো ফেরত দিলো না আমার কার্ড ও হারিয়ে ফেলেছিলো সে। অনেকদিন পরে ফেরত দিয়েছিলো ভোটের কার্ড।

তিনি আরো জানান, আমিও অসুস্থ্য। চোখে কম দেখি। চোখ কাটার (অপারেশন) পরে এক চোখে আর দেখতেও পাই না। এই শেষ বয়সে যদি একটু ভাতার কার্ড হয় তাহলে খুব উপকার হয়।

ইউপি সদস্য হাসিনা খাতুন জানান, তোফাজ্জেল ও তার স্ত্রী মাজু আমার কাছে অনেকদিন ধরেই বলে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া জন্য। তবে নানা কারনে তোফাজ্জেলের এতো বয়স হওয়া সত্বেও ভাতার কার্ড হয়নি।
তিনি আরো জানান, ভেবেছিলাম যদি আবারো নির্বাচিত হতে পারি তাহলে এবার তোফাজ্জেলের বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেব। কিন্তু এবার তো আর ভোটে পাস করতে পারিনি, তাই আমার আর কিছু করার নেয়।

এ ব্যপারে আমলা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এতো বয়স হওয়া সত্বেও কেন বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়নি তা খোঁজ খবর নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



(কেকে/এস/জুন২৬,২০১৬)