মুশফিক মাসুদ, নেত্রকোনা: নেত্রকোনা পৌরসভায় প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি পানির ওভার হেড ট্যাংকি (উচ্চ জলাধার) ঘটা করে উদ্বোধন করা হলেও এগুলো পৌর নাগরিকদের কোন কাজে আসছে না।

পৌর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, পৌর নাগরিকগণ দীর্ঘদিন যাবৎ ২৪ ঘন্টা পানীয় জলের সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার জোর দাবী জানিয়ে আসছিল। এরই প্রেক্ষিতে পৌর কর্তৃপক্ষ ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে মাঝারী শহর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সেক্টর (জিওবি-এডিবি) প্রকল্পের আওতায় দুটি পানির ওভার হেড ট্যাংকি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পৌর নাগরিকদের ২৪ ঘন্টা পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পৌর কর্তৃপক্ষ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যৌথ ভাবে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাচাই করে জেলা শহরের মোক্তারপাড়ায় এবং সাতপাই কলেজ রোডে দুটি পানির ওভার হেড ট্যাংকি নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ করে। ৬ লক্ষ ৮০ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি উচ্চ জলাধার নির্মাণের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের জানুয়ারী মাসে দুটি ওভার হেড ট্যাংকির নির্মাণ কাজ শেষ হলে পৌর মেয়র প্রশান্ত কুমার রায় ১৫ ফেব্রুয়ারি দুটি ওভার হেড ট্যাংকির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পরদিন থেকেই ওভার হেড ট্যাংকি দুটির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পৌর নাগরিকদেরকে আগের মতোই দিনে মাত্র দুইবার নির্ধারিত সময়ে পানি সরবরাহ করা হয়। কোন কারনে বিদ্যুৎ না থাকলে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় পৌর নাগরিকদেরকে পানির জন্য সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল বলেন, প্রথম শ্রেনীর নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য পৌর নাগরিকগণ নিয়মিক ট্যাক্স দিচ্ছেন। ট্যাক্সের টাকায় দুটি ওভার হেড ট্যাংকি নির্মিত হলেও উদ্বোধনের পরদিন থেকেই কেন বন্ধ রয়েছে তা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষতে খতিয়ে দেখা উচিৎ।

নেত্রকোনা পৌরসভার পানি সরবরাহ শাখার প্রকৌশলী নৃপেন্দ্র চন্দ্র সরকার জানান, গভীর নলকুপের মাধ্যমে পানি তুলে জলাধার দুটি পূর্ণ করতে সময় লাগে আট ঘন্টা, বিদ্যুৎ খরচ হয় বেশি। কিন্তু জলাধার দুটি থেকে পানি ছাড়া হলে তা ঘন্টা খানেকের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। পূনরায় ট্যাংকি দুটিতে নতুন করে পানি পূর্ণ করে চালু করাও সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য জলাধার দুটিতে পানি তোলা এবং তা থেকে সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।

এ ব্যাপারে নেত্রকোনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নুরুন্নবী সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই মুহুর্তে আরো দুটি গভীর নলকুপ বসাতে হবে এবং আরো দুটি উচ্চ জলাধার নির্মাণ করতে হবে। তাহলেই সার্বক্ষনিক জলাধার দুটি চালু রাখা সম্ভব হবে এবং বিদ্যুৎ চলে গেলেও পানি সরবরাহ বন্ধ থাকবে না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

এদিকে জলাধার নির্মাণে বা ব্যবস্থাপনায় কোন ত্রুটি আছে কি-না তা তদন্ত করে দেখার জন্য পৌরসভার মেয়রের প্রতি জোর অনুরোধ জানিয়েছেন সচেতন পৌর নাগরিকগণ।



(এমএম/এস/জুন৩০,২০১৬)