লালমনিরহাট প্রতিনিধি : দীর্ঘ দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রবিবার(১০-জুলাই) থেকে অধুনালপ্ত ছিটমহলবাসীদের ভোটার তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। পাটগ্রাম উপজেলার ৫৫টিসহ জেলার মোট ৫৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলে ভোটার তালিকা তৈরির জন্য তথ্য ইতিমধ্যে সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার ৩১জনকে স্থানীয় নির্বাচন অফিস নিয়োগ করেছেন। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিলুপ্ত ছিটবাসীদের নাম ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে ১০ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত টানা ৭দিন এ কার্যক্রম চলবে। ভোটার তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্ত করতে পেরে আনন্দে ভাসছে অধুনালুপ্ত ছিটমহলবাসীরা।

রবিবার বিকেলে সরজমিনে পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত সর্ববৃহত ১১৯ নম্বর বাঁশকাটা ছিটমহলে গিয়ে দেখা যায় জয়নাল আবেদিনের বাড়ির উঠানে নারী-পুরুষদের জটলা। কাছে গিয়ে জানা গেল ভোটার তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্তির জন্য বিলুপ্ত ছিটবাসীরা তথ্য সংগ্রহকারী কর্মকর্তা সহকারী শিক্ষক আতাউর রহমানকে ঘিরে ধরে একজন একজন করে বিলুপ্ত ছিটবাসীরা তথ্য দিচ্ছেন। সেখানেই কথা হয় জয়নাল আবেদিন, জবেদ আলী, সাফিউল ইসলাম ও নজরুল ইসলামের সাথে। তারা বললেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ সরকার ছিটমহল সমস্যার সমাধান করে আমাদের জীবনের এক নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। বিলুপ্ত ছিটবাসীদের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এবার ভোটার তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। আমরা এখন নিজের ভোট দিতে পারবো। নিজের পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবো। এর চেয়ে আর কি চাই আমরা?’ এদিকে, হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের বিলুপ্ত ২টি ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের বিলুপ্ত ২টি ছিটমহলের অধিবাসীদের ভোটার তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্ত করার জন্য ৬জন তথ্যসংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফজলুল করিম। তিনি বলেন, গত বছর ৩১ জুলাই মধ্যরাতে সংক্রিয়ভাবে ভারত-বাংলাদেশের অভ্যন্তরের থাকা ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় কার্যকর করা হয়। তার আগে এসব ছিটমহলে দুই দফায় যৌথভাবে হেডকাউন্টিং (মাথাগণনা) সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এরপর ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশি ৫১টি ছিটমহল এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল বিনিময় হয়। এতে বাংলাদেশ পায় ১১১টি ও ভারত পায় ৫১টি ছিটমহল। এরমধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্রে নতুনভাবে যোগ হওয়া ভারতীয় ১১১টি ছিটমহলের মোট ৩৭ হাজার ৫৩৫ জন নাগরিক বাংলাদেশি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানায়। ছিটমহল বিনিময় কার্যকর হলে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার এক গেজেটের মাধ্যমে তাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব প্রদান করে গেজেট প্রকাশ করে। তারই ধারাবাহিকতায় বিলুপ্ত ছিটবাসীদের দেশের ভোটার তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্তসহ জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে ১০ জুলাই শুরু হয়ে আগামী ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ হবে।

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আফতাবুজ্জামান বলেন, এ উপজেলার মোট ৭টি ইউনিয়নে ৫৫টি বিলুপ্ত ছিটমহল রয়েছে। জনবসতিবিহীন ১৯টি বিলুপ্ত ছিটমহল বাদে জনবসতিপূর্ণ ৩৬টি ছিটমহলের অধিবাসীদের ভোটার তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্ত করতে তথ্যসংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার মোট ২৫ জন নিয়োগ করা হয়েছে। ভোটার তালিকা থেকে যেন কোনো ছিটবাসী বাদ না পড়েন সেজন্য সর্বত্র মাইকিং করা হচ্ছে। প্রথম দিনে তথ্যসংগ্রহকারী এবং সুপারভাইজাররা সংশ্লিষ্ট এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টি ও ভোটার তালিকায় তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তবে অনেকেই তথ্যগোপন করে আগেই ভোটার তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।

লালমনিরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফজলুল করিমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাটগ্রামের ৭টি ইউনিয়ন, হাতীবান্ধার ১টি ও সদর উপজেলার ১টি ইউনিয়নের অভ্যন্তরে মোট ৫৯টি বিলুপ্ত ছিলমহল রয়েছে। এরমধ্যে পাটগ্রামে ৫৫টি, হাতীবান্ধায় ২টি ও সদর উপজেলায় ২টি ছিটমহল রয়েছে। বিলুপ্ত ছিটবাসীদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব প্রদান করে গত ১১এপ্রিল গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক ১০ জুলাই থেকে ১৬জুলাইয়ের মধ্যে বিলুপ্ত ছিটবাসীদের ১৮ বছরের উপরের বয়সী নারী-পুরুষদের ভোটার তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্তির জন্য পাটগ্রামে ২৫জন, হাতীবান্ধায় ৩জন ও লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ৩জন তথ্যসংগ্রহকারী এবং সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়েছে। একই সাথে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রও দেওয়া হবে বলে জানান।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তথ্যসংগ্রহকারী ও সুপারভাইজাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১০ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত প্রত্যেক বিলুপ্ত ছিটমহলে বসবাসরত নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। এসব নতুন বাংলাদেশি নাগরিককে ভোটার তালিকার পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্রও দেওয়া হবে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে যৌথভাবে হেডকাউন্টিংয়ে(মাথাগণনায়) পাটগ্রামের ৫৫টি বিলুপ্ত ছিটমহলে ৮৪৫৫ জন, হাতীবান্ধার ২টি ছিটমহলে ৪৯৫ জন ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার ২টি ছিটমহলে ১৩৬০ জন জনসংখ্যা বসবাস করছেন।

(জেআরএম/পি/জুলাই ১০, ২০১৬)