আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুদ্ধপিড়ীত গণপ্রজাতন্ত্র কঙ্গোর সেনারা সারারাত টহল দিয়ে বেড়ান। তবে যুদ্ধের জন্য নয়, নারী শিকারের জন্য। মিনোভায় নারীরা তাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকেন।

কারণ তারা জানেন, ধরা পড়লে তারা ধর্ষণ, এমনকি হয়তো হত্যারও শিকার হবেন।

কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে সম্প্রতি সৈন্যদের গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে সেনাবাহিনী। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এ নির্দেশ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে প্রায় দুই হাজার যুব সেনা ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

পরবর্তীতে এক কমান্ডার তাদেরকে আদেশ দিয়ে বলেন, ‘যাও এবং ধর্ষণ করো।’ সৈন্যরা তার আদেশ আনন্দের সঙ্গে মান্য করে।

এক সৈন্য বলেন, ‘এটি সত্য যে, আমরা এখানে ধর্ষণ করি। আমরা নারীদের খুঁজে পাই কারণ তারা পালাতে পারে না। আপনি তাদের দেখবেন, ধরবেন, নিয়ে যাবেন এবং নিজের মতো করে সময় কাটাবেন।’

ওই সৈন্য আরও বলেন, ‘অনেক সময় আপনি তাকে হত্যা করবেন। ধর্ষণ শেষে আপনি তার সন্তানকে মেরে ফেলবেন। সত্যি বলতে কী, ধর্ষণ করলে আমরা মুক্ত অনুভব করি।’

২০১২ সালের নভেম্বরের এক রাতে মিনোভায় ব্যাপক ধর্ষণ চলাকালীন এমনই এক তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হন এনজিরা। তিন জন লোক তাকে একসঙ্গে আক্রমণ করে। এদের মধ্যে দুজন তাকে সামনে থেকে আক্রমণ করে। এনজিরা বলেন, ‘অন্যজন জানায় যে সে যাবে না। সে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আমার মনে হচ্ছিল, আমি মারা যাবো।’

এর আগে জঙ্গি সংগঠনগুলো কঙ্গোর নারীদের ধর্ষণ করতো। এখন তারা কঙ্গোর সেনাবাহিনীর মাধ্যমেই ধর্ষিত হচ্ছে। এনজিরা বলেন, ‘আমি তাদের মুখ দেখতে পারিনি। কেউ আপনার চোখে আঘাত করলে আপনি তাদের কীভাবে দেখতে পাবেন? কেউ আপনার মুখে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে দেখলে আপনি কীভাবে তার মুখ দেখতে পাবেন?’

কঙ্গোয় বেঁচে থাকা ধর্ষিতাদের সহায়তায় একটি উদ্ধার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মাসিকা বলেন, ‘তারা আমাকে বসিয়ে রেখে নির্যাতন শুরু করে। ধর্ষিতাদের সহায়তায় কাজ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আমাকে তিনবার ধর্ষণ করা হয়েছে। তারা আমাকে পেটায়, নির্যাতন করে এবং মৃত্যুর হাতে ছেড়ে দেয়।’

মাসিকা আরও বলেন, ‘ধর্ষণের পর আমাদের গায়ে থু থু ছিটানো হয়। এমন এক অভিজ্ঞতার পর আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হয়েছিল।’

মিনোভায় ব্যাপক ধর্ষণের ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমেরিকার জনস্বাস্থ্য বিষয়ক একটি জার্নালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কঙ্গোতে প্রতিদিন ১১৫২ জন এবং প্রতি ঘণ্টায় ৪৮ নারী ধর্ষণের শিকার হন।

কঙ্গোতে ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সংঘর্ষ শেষ হলেও যুদ্ধ এখনো থামেনি। প্রায় দুই দশক আগে সৃষ্ট যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ মানুষ মারা গেছে। এ সময়ের মধ্যে ধর্ষণ ছিল একটি নিত্য নৈমেত্তিক ঘটনা। কঙ্গোর মোট নারী জনসংখ্যার ১২ শতাংশ কমপক্ষে একবার জীবনে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

(ওএস/এস/জুন ০৮, ২০১৪)