বিনোদন ডেস্ক : এর আগে শিল্পীদের মরনোত্তর চোখ অথবা অঙ্গ দানের খবর বহু শোনা গেছে। এবারে ভারতের পশ্চিম বাংলা কলকাতার চিত্রনায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অঙ্গীকার করলেন তার দেহদানের।

তিনি তার দেহদানের এ ঘোষণা দিলেন দেবদূত ঘোষ পরিচালিত দেহদান বিষয়ক একটি ছবির প্রথম প্রদর্শনীতে।

ঋতুপর্ণার চাওয়া তিনি যখন এ পৃথিবীতে থাকবেন না, তখন তার চোখে অন্য কেউ পৃথিবীকে দেখুক, তার কিডনির শক্তিতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করুক, তার ত্বক প্রতিস্থাপিত হোক কারও দেহে, যার সেটা প্রয়োজন। ৮ জুন হরিশ মুখার্জি রোডে, গোখেল মেমোরিয়াল-এর সরলা মেমোরিয়াল হলে আনুষ্ঠানিকভাবে মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন তিনি। এরপর একই হলে প্রদর্শিত হবে মরণোত্তর দেহদান নিয়ে দেবদূত ঘোষের তৈরি তথ্যচিত্র ‘প্রাণ থেকে প্রাণে’। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন শঙ্খ ঘোষ, যিনি আগেই দেহদানের ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কৌশিক সেন, সমীর আইচ, গৌতমমোহন চক্রবর্তী, ডঃ অশোক চৌধুরীরাও।

হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিলেন কেন? ঋতুপর্ণাকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি কলকাতার গণমাধ্যমকে জানান, ‘চক্ষুদানের ইচ্ছে আমার অনেক দিনই ছিলো। দেহদানের সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেললাম। মানুষ যখন মারা যায়, জীবন যখন শেষ হয়ে যায়, তখন আর দেহটার প্রয়োজন কী? কিন্তু তখন যদি কোনও জীবন্ত মানুষের উপকারে দেহটা আসতে পারে, তার চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে? তাছাড়া ফিলজফিকালিও তো দেহ পড়ে থাকে, আত্মা পরমাত্মায় বিলীন হয়ে যায়। দেহটা তো দান করে যাওয়াই ভালো অন্যের জন্য।’

মানে দেহদানের মধ্যে নিজস্ব একটা আত্মিক অনুভূতিও জড়িয়ে রয়েছে? ঋতু বলেন, ‘আমি বরাবরই গিভিং পার্সন। নেওয়ার থেকে দেওয়ায় অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। অন্যের উপকার করার চেষ্টা করেছি সাধ্যমতো। যদি মৃত্যুর পরেও কারও উপকারে আসতে পারি, সেটা তো ভীষণ আনন্দের। মৃত্যুর পরে নিজের দেহটা তো আর আমার কোনও কাজে লাগবে না। কিন্তু অন্যের কাজে তো আসবে!’

এমন সিদ্ধান্তের পিছনে পারিবারিক কোনও অনুপ্রেরণাও কি রয়েছে? ‘আমার পিসেমশাই ডঃ কল্যাণময় সেন বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি দেহদান করেছিলেন৷ তাছাড়া আমার এক মাসিও দেহদান করেন। বাড়ির অনেকেই চক্ষুদানও করেছেন। তারা অবশ্যই আমার ইনস্পিরেশন, ‘বলেন নায়িকা। আর এই সিদ্ধান্তে শ্বশুরবাড়িতে কেউ আপত্তি করেননি?’ এখনও সবার সঙ্গে কথা হয়নি। তবে আমার শ্বশুরমশাই ডাক্তার ছিলেন। শাশুড়িও ডাক্তার। দেহদানের ব্যাপারে এখানে কেউ আপত্তি করবেন বলে মনে হয় না।’ ঐশ্বর্য রাই চক্ষুদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অনেকেই চোখ দান করতে এগিয়ে এসেছিলেন, এ বার তাকে দেখেও কি অনেকে দেহদানে অনুপ্রেরণা পাবেন? ঋতু বললেন, ‘যদি সেটা হয়, খুব খুশি হব।’

দেবদূত ঘোষ যে তথ্যচিত্রটি বানিয়েছেন তার মেয়াদ ২২ মিনিট। এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করেছেন ভারতে দীর্ঘদিন ধরে দেহদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্রজ রায়। তার ‘গণদর্পণ’ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ দেহদানে ব্রতী হয়েছেন এবং এখনও হচ্ছেন। ব্রজবাবুর থেকে জানা গেল, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, চিত্রা সেন, শোভা সেন, ছন্দা চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীরাও দেহদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন আগেই। আবার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্ররাও নাম নথিভুক্ত করেছেন এ ব্যাপারে। নায়িকার ত্বক-ও কী কারও দেহে শোভা পেতে পারে? ব্রজবাবু বলছেন, ‘হ্যাঁ, চামড়া ভালো থাকলে অবশ্যই তা ভালোভাবে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। এই তো কিছুদিন আগে ফল্গু মজুমদার নামে এক মহিলার চামড়া প্রতিস্থাপন করা হল একজনের দেহে!’

দেহদান এবং তা নিয়ে ডকুমেন্টারি বানানোর ব্যাপারটা কেমন করে মাথায় এলো? দেবদূত বলেন, ‘ব্রজদা’র মতো মানুষরা যে আন্দোলনটা শুরু করেছেন, সেটাকে আরও খানিক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ থেকেই আমি এই কাজে হাত দিই। কাজটায় ব্রজদা তো বটেই, ওই সংগঠনের তৃপ্তি চৌধুরীও স্ক্রিপ্ট বানিয়ে সাহায্য করেছেন। তাছাড়া যে কলাকুশলীরা কাজ করেছেন তারাও বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন। ছবিতে চৈতি ঘোষাল এক দিদিমণির ভূমিকায় আছেন। পাঠভবন স্কুলের ছাত্ররাও কাজ করেছেন।’

নায়িকার অঙ্গীকার, তথ্যচিত্র দেহদানে মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগাবে? আশাবাদী সকলেই।

(ওএস/এস/জুন ০৮, ২০১৪)