স্পোর্টস ডেস্ক, ঢাকা : শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা খেলার মাঠে শ্যাম্পেনের অভাবে মিনারেল ওয়াটারের বোতল থেকে পানি ছিটিয়ে আনন্দ করেই দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছিলেন। কুমার সাঙ্গাকারাকে কাঁধে নিয়ে ভিক্টরি ল্যাপ, ট্রফি হাতে বিজয়মঞ্চে দাঁড়িয়ে উল্লাস আর নাচ, সে তো হয়েছে ক্যামেরার সামনেই। দেড় যুগ পর কোনো বৈশ্বিক শিরোপা জয়ের আনন্দের উদযাপন তো আর এত সাদামাটাভাবে হয় না! আসল উদযাপন চলে ড্রেসিং রুমে আর হোটেলে। এরপর আজ দেশে ফিরে খোলা বাসে চড়ে কলম্বো শহর প্রদক্ষিণ করেছেন লঙ্কানরা। হাজার হাজার সমর্থক রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে অভিবাদন জানাতে ভুলেনি বীরদের।

দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার অবসাদ আর টানা খেলার ক্লান্তি কিছুই বাধা হয়নি উদযাপনে। বারবার শিরোপা জয়ের মঞ্চ থেকে খালি হাতে ফিরে আসার দুঃখ, স্বপ্নভঙ্গের বেদনা সব কিছু ভুলিয়ে দিয়েছে এই উদযাপন। আনন্দের এ ঝরনাধারায় ভেসে গেছে সব অপ্রাপ্তির আক্ষেপ, অভিশাপ ঘুচেছে দ্বীপদেশের দুই দুঃখী রাজপুত্রের।


অপেক্ষাটা ১৮ বছরের, দিন-ক্ষণের হিসাবে সময়টা অনেক। সেটা আরো বেশি দীর্ঘ করে তুলেছিল ফাইনালে বারবার ব্যর্থতার চোরাবালিতে আটকে যাওয়া। সময়ের পালাবদলে কত কিছুই না পাল্টেছে শ্রীলঙ্কার তামিল গেরিলারা হার মেনেছে, বন্ধ হয়েছে গৃহযুদ্ধ, চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার জায়গায় প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসেছেন মাহিন্দ্রা রাজাপাকশে। কিন্তু ১৯৯৬ সালের পর আর আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে ফাইনাল জেতেনি তারা। প্রতিপক্ষকে হতাশ করে সাফল্যের উঁচু মঞ্চে ওঠার সুযোগ এসেছেও; কিন্তু ওই যে ক্রিকেট-দেবতা তাদের পক্ষে নয়। তাই তো ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে চারবার খেলেও প্রাপ্তি খাতাটা শূন্য থাকে লঙ্কানদের। ২০১৪ সালে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে আরেকবার যখন ফাইনালে, তখন অতীতের হতাশাগুলো দাঁত বের করে হাসছিল হয়তো। কিন্তু এবারের ব্যাপারটি ছিল একেবারে আলাদা। প্রায় দেড় যুগ ধরে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটকে কাঁধে বয়ে বেড়ানো দুই মহানায়ক যে বিদায় বলে দিয়েছিলেন ২০ ওভারের ক্রিকেটকে। ভাগ্যদেবতা কি এবার মুখ তুলে তাকাবেন না! তাকিয়েছেন। তাই তো ফাইনাল হতাশার বৃত্তে বন্দি লঙ্কানদের আরেকবার বিশ্ব আসরের শিরোপা জিতিয়ে তিনি রাজসিক বিদায় উপহার দিয়েছেন সাঙ্গাকারা-মাহেলাকে। শ্রীলঙ্কাকে রাঙিয়ে দিয়েছেন উৎসবের রঙে।


(ওএস/পি/এপ্রিল ০৮,২০১৪)