নিউজ ডেস্ক : আজ ১৯ জুলাই, মঙ্গলবার নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সাজিয়েছে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে অনুষ্ঠানমালা। পারিবারিকভাবেও স্মরণ করা হবে দেশের বরেণ্য এই কথাসাহিত্যিককে।

এ উপলক্ষে লেখকের পরিবার এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সমাধিস্থল নুহাশ পল্লীতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কবর জিয়ারত, কোরান খানী, আলোচনা সভা, ব্লাড গ্রুপিং, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল,এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ক্যান্সার সচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণ।

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন বাংলা সাহিত্যের এ উজ্জ্বল নক্ষত্র হুমায়ুন আহমেদ। উপন্যাস,গল্প,নাটকসহ সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার লেখা বইয়ের সংখ্যা কয়েকশত। এ ছাড়া বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন প্রয়াত এই লেখক।

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্র্ষিকী উপলক্ষে তার ভক্তদের সংগঠন হিমু পরিবার দেশের প্রায় ৪৭ টি জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে হুমায়ূন আহমেদের সমাধিতে হলুদ পাঞ্জাবি ও নীল শাড়ি শ্রদ্ধা নিবেদন।

সারাদেশে ক্যান্সার সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, সেমিনার, রক্তদান কর্মসূচি, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, গরিবদের মাঝে খাবার বিতরণ, হুমায়ূন আহমেদের নাটক, সিনেমার প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সেমিনার করা হবে। এছাড়াও নুহাশ পল্লী ও আশেপাশের এলাকায় বিনামূল্যে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করেছে হুমায়ূন ভক্ত হিমু পরিবার।

হুমায়ূন আহমেদ (ইংরেজি: Humayun Ahmed, ১৩ নভেম্বর, ১৯৪৮ – ১৯ জুলাই, ২০১২) বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক গণ্য করা হয়। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তাঁর গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। তাঁর সৃষ্ট হিমু এবং মিসির আলি ও শুভ্র চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে।

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীও তাঁর সৃষ্টিকর্মের অন্তর্গত। ধরা হয় বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনপ্রিয়তা তিনি শুরু করেন। তাঁর রচিত প্রথম সায়েন্স ফিকশন "তোমাদের জন্য ভালোবাসা" তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তবে তাঁর টেলিভিশন নাটকগুলি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। সংখ্যায় বেশী না হলেও তাঁর রচিত গানগুলোও সবিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি। তাঁর নির্মিত কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা ইত্যাদি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন।লেখালিখি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে দেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাঁকে আটক করে এবং নির্যাতনের পর হত্যার জন্য গুলি চালায়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান।

(ওএস/এএস/জুলাই ১৯, ২০১৬)