গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)প্রতিনিধি :বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ কালজয়ী লেখক হুমায়ূন আহমেদ তার লেখনিতে গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনের বেশকিছু বাস্তব চিত্র তুলে ধরে লিখেছিলেন ‘গৌরীপুর জংশন’ উপন্যাসটি। নন্দিত এই লেখক নিজবাড়ি কেন্দুয়া কিংবা মামাবাড়ি মোহনগঞ্জ যাওয়ার পথে গৌরীপুর জংশন স্টেশন হয়ে যেতেন।

এক সময় এই অঞ্চলের রাস্তাঘাট তেমন উন্নত ছিল না। রেলগাড়িই ছিল প্রধান বাহন। আর সেই সুবাদে নন্দিত এই কথাসাহিত্যক গৌরীপুর স্টেশনে রাত্রি যাপন করতে গিয়ে গৌরীপুরের স্মৃতিকে ধরে রেখে গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনের কিছু চিত্র তুলে ধরে রচনা করেন ‘গৌরীপুর জংশন’ উপন্যাসটিতে।

উপন্যাসে যে নামগুলো এসেছে তা প্রতিকী। তবুও হুমায়ূন আহমেদের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে তার ভক্তরা ‘গৌরীপুর জংশন’ বইয়ের প্রতিটি পাতা উল্টিয়ে লেখার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চেষ্টা করছেন ‘হুমায়ূন আহমেদের গৌরীপুর জংশনকে’। তারা খুঁজে ফিরছেন প্রিয় লেখকের কোন স্মৃতি বিজড়িত কিছু পাওয়া যায় কি না এই স্টেশনে? উপন্যাসে উল্লেখিত চবিত্রগুলোকে। সেই স্মৃতিময় রেলওয়ে স্টেশনে তাঁর ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে ‘কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহাম্মেদ স্মৃতি পরিষদ’। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে শোকর‌্যালী, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল।

২০০৫ সালের বই মেলায় কাকলী প্রকাশনীর প্রকাশক একে নাছির আহমেদ সেলিম প্রকাশ করেন হুমায়ূন আহমেদের ‘গৌরীপুর জংশন’ বইটি। ইব্রাহীম খাঁ পূণ্য স্মৃতিতে উৎসর্গ করা বইটিতে লিখেছিলেন, আমি আমার গ্রন্থের নামকরণে অনেকবার কবিদের কাছে হাত পেতেছি। এবার হাত পাতার আগেই নাম পেয়ে গেলাম। কবি নির্মলেন্দু গুণ পাণ্ডুলিপি পড়ে নাম দিলেন ‘গৌরীপুর জংশন’। তাকে ধন্যবাদ। বইটিতে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনের চেহারা। রেলওয়ে স্টেশনের বিভিন্ন পেশার মানুষের জীবনচিত্র তিনি তুলে ধরেছেন একবারে ছবির মতো করে। স্টেশনের ভবঘুরে অসহায় মানুষের শীত নিবারণের করুণ দৃশ্যটি ফুটিয়ে তোলেছেন ‘বজলু চটের ভেতর থেকে বের হয়ে এলো’ এরকম বাক্যের মাধ্যমে।

খারাপ মানুষের চরিত্র তুলে ধরেছেন স্টেশনের পকেটমার জয়নালের কুকীর্তি বর্ণনা করে। স্টেশনের বড়বাবু, কুলি, পতিতা অনুফা, ফুলীর জীবনের কষ্ট এবং পুলিশের চরিত্রও তুলে ধরেছেন স্ব স্ব মহিমায়। চাকরের প্রতি মনিবের নিষ্ঠুরতা তোলে ধরতে বর্ণনা দিয়েছেন চায়ের দোকানের পরিমল দা দোকানের কাজের ছেলেটিকে গরম কুন্তি নিয়ে সেঁকা দেয়ার নিষ্ঠুর ঘটনাটির বর্ণনা করে। পুলিশের তদন্ত ও নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে তিনি জয়নালের ভাষ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘সত্যি বললেও গুঁতা, মিথ্যা বললেও গুঁতা।’ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনের। এখন আর গৌরীপুর জংশনে নিরিবিলি গেস্টহাউস আগের অবস্থা নেই, নেই বিছানায় কুট্টুস কুট্টুস কামড় দেয়ার ছারপোকা। জংশন স্টেশনে নেই বসার পোস্তাগুলো, যেখানে বসে হুমায়ূন আহমেদ এসব চিত্র দেখতেন। নেই পরিমলের চায়ের দোকানটাও।

ইতোমধ্যে ‘কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহাম্মেদ স্মৃতি পরিষদ’ ঢাকা-ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ রেলপথে চালু হতে যাওয়া নতুন আন্তঃনগর ট্রেনের একটি হুমায়ুন আহমেদের নামে নামকরণের দাবিতে মানব বন্ধন, সমাবেশ ও স্মারকলিপি পেশ করেছে।




(এসআইএম/এস/জুলাই ১৯,২০১৬)