পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি :পীরগঞ্জের ৪টি ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত সহস্রাধিক কৃষকের ধান না না কিনেই ধান সংগ্রহ সম্পন্ন করেছে পীরগঞ্জের খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও খাদ্য কর্মকর্তা! শুধু তাই নয়, বরাদ্দের চাইতে প্রায় দেড় হাজার মে. টন ধান অতিরিক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে তালিকাভুক্ত কৃষকরা হতাশ হয়েছে, ক্ষুব্ধ হয়েছেন উপজেলা আ’লীগের কয়েকজন নেতা।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সরকারীভাবে খাদ্য বিভাগের মাধ্যমে পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের জন্য ৩ হাজার ৪৭০ মে. টন ধান সরকার বরাদ্দ করে। ওই বরাদ্দের মধ্যে উপজেলা সদরের গুদামে ২ হাজার মে. টন আর ভেন্ডাবাড়ী গুদামে প্রায় ১ হাজার ৪’শ মে. টন সংগ্রহ করা হবে। ভেন্ডাবাড়ী খাদ্য কর্মকর্তা হিমাংশু কুমার বলেন- টুকুরিয়া ইউনিয়ন ছাড়া ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার মে. টন ধান সংগ্রহ করেছি।

এদিকে ধান বরাদ্দ পাওয়া থেকেই কৃষক তালিকা করা নিয়ে উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ কমিটি কালক্ষেপন শুরু করে। মাঠপর্যায় থেকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষক তালিকা করে দিলেও দলীয়ভাবে তা ছাটাই-বাছাই করে। ফলে ধান সংগ্রহ করা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে দলীয়ভাবে করা তালিকাভুক্ত কৃষকদের কাছ থেকে কার্ড ক্রয় কিংবা দলের নেতা, ব্যবসায়ী ও অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যান নিজেরাই গুদামে ধান দেয়। অধিকাংশ কৃষক গুদামে না এলেও তাদের নামে ধান সংগ্রহ হয়েছে। তবে কৃষকরা শুধু ব্যাংকে গিয়ে টাকা উত্তোলনের জন্য চেকে স্বাক্ষর করেছেন বলে জানা গেছে।

উপজেলার টুকুরিয়া, বড় আলমপুর, রায়পুর ও পীরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কোন কৃষকের ধান খাদ্যগুদামে নেয়া হয়নি। তারপরও ধান সংগ্রহ সম্পন্ন করা দেখানো হয়েছে। উপজেলা সদরের এক আড়তদার ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেছেন, আমার কাছে প্রায় ১’শ টন ধানের স্লিপ রয়েছে। কিন্তু গুদামে ধান দিতে পারলাম না।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলহাজ্ব সাইদুর রহমান চৌধুরী দুলাল বলেন- আমি রায়পুর ইউনিয়নের ধুলগাড়ী গ্রামের তালিকাভুক্ত কৃষক। আমিও ধান দিতে পারিনি। শুধু তাই নয়, আমার ইউনিয়নের কৃষক তালিকাও খাদ্য গুদামে ঝুলানো হয়নি। ১ ছটাক ধানও সংগ্রহ করা হয়নি। আমি জেনেছি, টুকুরিয়া, বড়আলমপুর ও পীরগঞ্জ সদরেরও ধান সংগ্রহ করা হয়নি। একই কথা বলেছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতা।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা আনিসুল ইসলামের সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শহিদুল্লাহ্ বলেন- আজকেই (গতকাল মঙ্গলবার) ধান সংগ্রহ বন্ধের জন্য খাদ্য বিভাগের ডিজি স্যারের চিঠি পেয়েছি। চিঠিতে বলা হয়েছে, যে সব উপজেলায় খাদ্য সংগ্রহ হয়েছে, সেসব উপজেলায় খাদ্য সংগ্রহ বন্ধ করতে হবে। অতিরিক্ত ধান সংগ্রহ করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- কোন উপজেলায় ধান সংগ্রহ কম হলে, সেক্ষেত্রে সমন্বয় করা হবে। পীরগঞ্জে প্রায় ৫ হাজার মে. টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে।

৪টি ইউনিয়নে ধান সংগ্রহ না হওয়ার ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইফুল ইসলাম বলেন- যদি কোন ইউনিয়নের কৃষক গুদামে ধান না নিয়ে আসে, সেক্ষেত্রে তো আমরা বসে থাকতে পারি না। ধান সংগ্রহ হয়েছে। সরকারী নির্দেশ মতো আমরা কাজ করেছি। ঈদের পর থেকে পীরগঞ্জে কোন ধান সংগ্রহ করা হয়নি।



(জিকেবি/এস/জুলাই ১৯,২০১৬)