স্পোর্টস ডেশক,ঢাকা : যে যত বেশি কাজ করবেন, তার গুরুত্ব তত কম। মূল একাদশের খেলোয়াড়ের চেয়ে রিজার্ভ বেঞ্চারদের প্রাপ্তি বেশি! বড় কোনো আসর হলে ব্যবধানটা আরো বাড়তে থাকে। একদল মানুষ বেগার খাটেন, আর কিছু মানুষ হাইকমান্ডের সাহচর্য পেয়ে লাভবান হন। আইসিসির ইভেন্ট হলে তো পোয়াবারো। সরকার উদার হস্তে ‘দান’ করে আর প্রচারণার পাশাপাশি সরকারি আনুকূল্য লাভের আশায় দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও আর্থিক সহযোগিতা দেয় ক্রিকেটকে।

উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে সেই ‘সহযোগিতা’ আবার কৌশলে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন ক্ষমতাধররা। ২০১১ বিশ্বকাপ আয়োজনকে ঘিরে অনেক ‘তুঘলকি’ কাণ্ডের কথা শোনা গিয়েছিল। তবে এবারের টি-টোয়েন্টি দুর্নীতি নিয়ে কানাঘুষা আছে খোদ বিসিবিতেই।


চট্টগ্রামে জেনারেটর ভাড়া দেওয়ার ‘কাজ’ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে দৈনিক সাড়ে ১০ হাজার ডলার ভাগবাটোয়ারা আপাতত প্রকাশিত সবচেয়ে বড় ‘স্ক্যান্ডাল’। আছে টিকিট জালিয়াতির অভিযোগ। প্রতি ম্যাচে ৯ হাজার করে টিকিট বিসিবিকে দিয়েছে আইসিসি। অথচ সারা রাত লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পায়নি এ দেশের অগুনতি সাধারণ মানুষ। ফাইনাল ম্যাচের এক হাজার টাকার টিকিট ১২ হাজারে কিনেছেন অনেকে।


টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে বিসিবি কর্মকর্তাদের যোগসাজশ নিয়েও রয়েছে গুঞ্জন। বিশ্বকাপকে ঘিরে টেন্ডার এবং কেনাকাটা নিয়েও রয়েছে নানা গল্প, যা আসলে রূপকথা। যেমন, নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত কর্মীদের খাবারের জন্য বরাদ্দ ছিল আট মার্কিন ডলার, যদিও তাদের ভাগে জুটেছে প্যাকেট বিরিয়ানি। জেনারেটর কে সাপ্লাই দিবেন, খাবার থেকে শুরু করে স্মারক টি-শার্ট কার, কোন প্রতিষ্ঠানের পাওয়া উচিত তা নিয়ে মনোমালিন্যও নাকি হয়েছে। এগুলো তো ছুটকো আয়ের অলিগলি, কক্সবাজারের নতুন স্টেডিয়াম এবং বিশ্বকাপের অন্যান্য ভেন্যু সংস্কারকাজে দুর্নীতির যেসব ‘কীর্তি’ আলোচিত হয় ক্রিকেটাঙ্গনে, সেগুলো কেবল দিনে-দুপুরে ডাকাতির সঙ্গে তুলনীয়। সেসবের অংশ হয়ে নাকি কিছুদিন আগে ধানমণ্ডিতে সাড়ে তিন কোটি টাকায় ফ্ল্যাটও কিনেছেন একজন!


বিশ্বকাপকে ঘিরে ব্যক্তিগত এমন আয়-উন্নতির আরো অনেক কাহিনী আছে। যত দিন যাবে, তত বাজারে আসবে দুর্নীতির নতুন নতুন কেচ্ছা। ২০১১ বিশ্বকাপ যদি বিসিবির কর্মকাণ্ডের মানদণ্ড হয়, তাহলে ধরে নেওয়া যায় এবারও আয়-ব্যয়ের অনুপুঙ্খ হিসাব জানবে না সাধারণ মানুষ, যদিও ব্যয় করা অর্থের উৎস তারাই। প্রচলিত ধারণা হলো, দুর্নীতির দায় থেকে মুক্তির জন্যও ২০১১ বিশ্বকাপের হিসাব দেয়নি বোর্ড। নির্লজ্জতার সেই ‘ধারাবাহিকতা’য় ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না এবারও।

(ওএস/পি/এপ্রিল ০৮,২০১৪)