শেরপুর প্রতিনিধি : নূর ইসলাম (৩০) নামে এক ট্রাক মালিক ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ট্রাক ২৫ লাখে বিক্রি করে সব টাকা আইপিএলে বাজি ধরে হেরেছেন। নিজের শেষ সম্বল হারিয়ে তিনি এখন অন্যের ট্রাক চালাচ্ছেন। মালিক থেকে চালক বনে যাওয়া নূর ইসলাম শেরপুর শহরের নামা শেরীরচর এলাকার হবি মিয়ার ছেলে। আইপিএল নামের ক্রিকেট জুয়ায় এভাবেই সর্বস্ব হারিয়ে নি:স্ব হয়েছে অনেকেই। শহর থেকে প্রত্যন্ত পল্লী পর্যন্ত চড়িয়ে পড়েছে খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে বাজীর এ জুয়া। আইপএল শেষ হওয়ার পর সামনের বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়েও শেরপুরের বিভিন্ন এলাকায় জুয়ারীরা তৎপর হয়ে ওঠছে।

আইপিএলের বলে বলে চলে জুয়ার বাজী। কোন কোন খেলায় এক হাজারে ১৮/২০ হাজার টাকা পর্যন্তও ওঠেছে বাজির রেটিং। এমনকি এই জুয়া/বাজির বিস্তার এমনভাবে হয়েছে যে, স্থানীয়ভাবে আয়োজিত যেকোন ধরনের খেলায়ও এখন কে জিতবে, কে হারবে এনিয়ে চলছে জুয়ার বাজী। বিভিন্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে চা-পানের দোকোনে এ ধরনের সর্বনাশা জুয়ার বাজীতে স্থানীয় তরুণ ও যুব সমাজ বেশী আসক্ত হলেও বয়স্করাও বাদ যাচ্ছেন না। দিনমজুর থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবীরাও অল্প সময়ে অধিক মুনুফার আশায় এ ধরনের জুয়ার বাজীতে পতঙ্গের মতো ঝাপিয়ে পড়ছেন। তবে দেরীতে হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে আইপিএল জুয়া বন্ধ করতে তৎপর হয়েছে। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার লাছমনপুর এলাকা থেকে ১৪ আইপিএল জুয়ারীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেরপুর সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের শতাধিক দিনমজুর অধিক মুনাফার আশায় ঋণ করে, স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে আইপিএল জুয়ায় অংশ নেয়। এদের সকলেই ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওই ইউনিয়নের বাদাপাড়া গ্রামের ইন্তাজ আলির ছেলে আশিষ মিয়া ৩ লাখ টাকা বাজিতে হেরে ফ্রিজসহ মনোহারী দোকানের সব মালামাল বিক্রি করে এখন রাজধানী ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করছেন। একইভাবে নি:স্ব হয়ে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টে কাজ করছে সাহাজউদ্দিনের ছেলে মামুন (২৬) মোশারফ হোসেনের ছেলে শুভ্র (২০), আকতার মিয়ার ছেলে শিমূল (২০)।

শেরপুর পৌরসভার মেয়র হুমায়ুন কবির রোমান বলেন, আইপিএল নিয়ে বাজি ধরে শেরপুরে অনেকেই নি:স্ব হয়ে গেছেন। এদের অনেকেই ঋণ শোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যুব সমাজকে জুয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই।

শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহিবুল ইসলাম বলেন, আমরা আইপিএল জুয়ারীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছি। ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে কয়েকন জুয়ারীকে আটক করা হয়েছে। তবে এ ধরনের জুয়া বন্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে, সবাই মিলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
(এইচবি/এএস/জুন ০৯, ২০১৪)