রাজীবুল হাসান,গাজীপুর : সরকারের বেধে দেওয়া নিয়মকে উপেক্ষা করে প্রধান শিক্ষিকার খেয়াল খুশি মতো চলছে শ্রীপুরের গাজীপুর ২নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিদিন সকাল দশটার পর বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষের তালা খুলে দেয় দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থী। কোন শিক্ষকের কাছে বিদ্যালয়ের চাবিই থাকে না। দুপুর হওয়ার আগেই ছুটির ঘণ্টা বাজে। আর আকাশ মেঘলা কিংবা বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। ওই দিন শ্রেণী কক্ষের তালাই খোলা হয় না। নেই কোন শিক্ষক হাজিরা খাতা। এ্যাসেম্বলি! সে তো প্রশ্নই আসে না। কত বছর ধরে যে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না, সেটা কোন শিক্ষার্থীর মনেই নেই। টিনের ছাউনির জরাজীর্ণ ভবনের মাঝে মাঝে ধসে পড়ছে ইট সিমেন্ট। 

বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানা যায়, উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের গাজীপুর উত্তরপাড়া গ্রামে ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীরা আজো জানে না কখন ক্লাস শুরু আর কখন শেষ। অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষিকার মর্জি মতো চলছে অজপাড়াগাঁয়ের এই স্কুলটি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারেরও নজর নেই জরাজীর্ণ এই স্কুলের দিকে। যেমন খুশি তেমন চলছে। মাস শেষে বেতন তুলছেন শিক্ষকরা। এতোগুলো শিক্ষার্থী নিয়ে কর্তৃপক্ষ তামশায় মেতেছেন বলেও তারা অভিযোগ করেন।

এলাকাবাসী জানায়,পরিচালনা পরিষদের সভাপতির কোন কথাই শোনার সময় নেই কোন শিক্ষকের।

গত কয়েকদিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রায়ই সকাল ৯টায়ও কোন ছাত্র কিংবা শিক্ষক আসেনি। ঘড়ির কাঁটা যখন দশটার ঘরে। তখন এক ছাত্র এসে শ্রেণী কক্ষের তালা খুলে দিল। এরপর ২ বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে এলেন এক শিক্ষিকা। শিশুটিকে কোলে নিয়ে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীতে ঢুকলেন। ক্লাসে তখন ৮-১০জন শিক্ষার্থী বসে আছে।

শিক্ষিকার কোলে থাকা শিশুটি অঝোরে কাঁদছে আর তিনি ব্ল্যাকবোর্ডে কিছু একটা লিখে শিক্ষার্থীদেরকে বোঝাছেন। সকল শিক্ষার্থীর দৃষ্টি তখন শিশুর দিকে। একটু পরেই এলেন প্রধান শিক্ষিকা কোহিনূর আক্তার। সাংবাদিকদের কাছে বিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ঢাকার চেষ্টা করতে থাকলেন তিনি। কিছু অনিয়ম ঢাকতে সক্ষম হলেও লোকাতে পারলেন না শিক্ষক হাজিরা খাতা না থাকার বিষয়টি। বললেন- এক শিক্ষক ছুটিতে আছেন , তার কাছে হাজিরা খাতা। স্থানীয়রা জানান, এমন একটি স্কুলে একটি সাইনবোর্ড পর্যন্ত নেই। এ অভিযোগের সত্যতাও মিলল। ওই স্কুলে কোন সাইনবোর্ড খোঁজে পাওয়া গেল না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র জানালেন, ম্যাডামরা প্রতিদিন দশটার পরে স্কুলে আসে। তাই ছাত্রদের কাছে স্কুলের চাবি দিয়ে রাখেন। কমলজান নামে এক অভিভাবক বলেন, প্রায় সময়ই দেখি ১২/১টা বাজলেই স্কুল ছুটি,কি যে পড়ায় কিছইু বুঝি না।

স্কুলের নানা অনিয়ম সম্পর্কে প্রধান শিক্ষিকা কোহিনূর আক্তার বলেন, আমরা সময় মতোই স্কুলে আসে। সামান্য বৃষ্টি হলে শ্রেণী কক্ষে পানি উঠে। তাই বৃষ্টি নামলে মাঝে মাঝে স্কুল ছুটি হয়ে যায়। তিনি বলেন, প্লিজ ভাই এ সব পত্রিকায় লিখলে আমাদের ক্ষতি হবে। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য লিখতে তিনি অনুরোধ করেন। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুস ছামাদ বলেন , বিদ্যালয়টিতে অবকাঠামোগত জটিল সমস্যা রয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই ক্লাসে পানি ওঠে ফলে ক্লাস করানো যায় না। এজন্যে প্রায় সময়ই একটু-আকটু সমস্যা হয়।

শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদ বলেন, ওই বিদ্যায়লটি সম্পর্কে এমন অভিযোগ পেয়েছি। ইতিমধ্যে ৩ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে ।

(আরএইচ/এএস/জুলাই ২৫, ২০১৬)