শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে আনন্দ স্কুল নিয়ে চলছে নিরানন্দ কারবার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে আনন্দ স্কুলের শিক্ষকরা পড়েছেন বিপাকে। নিয়োগের মিাস পেরিয়ে গেলেও নিয়োগপত্র না পাওয়ায় শিক্ষকরা ব্যাংক হিসাবও খুলতে পারছেন না। এতে তারা বেতনের অর্থও উত্তোলন করতে পারছেন না। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে অবশেষে আনন্দ স্কুলের শিক্ষকরা ঘটনার প্রতিবাদে ৯ জুন সোমবার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করে।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা জানান, গত মার্চ মাসের ১৪ তারিখে সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে ৭০টি কেন্দ্রের জন্য ৭০ জন শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবা আইরিনকে না জানিয়ে গোপনে আরও ৫২টি কেন্দ্র নির্বাচিত করে ৫২ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, পরের ৫২ জন শিক্ষককে নিয়োগ করেছেন শিক্ষা অফিসার তার মনগড়াভাবে। এজন্য কোনপ্রকার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি কিংবা কোন প্রকার ইন্টারভিও নেওয়া হয়নি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুর রফিক তাদেরকে নগদ অর্থের বিনিময়ে মৌখিকভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে নিয়োগ কমিটির সভাপতি মাহবুবা আইরিন কোন নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর না দিলে বিপত্তি বাঁধে।

শুধু তাই নয়, শিক্ষকদের ব্যাংক হিসাব খুলতে গিয়ে সেখানেও শিক্ষা কর্মকর্তা এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী বেসরকারী সংস্থা ‘এসো নতুন সমাজ গড়ি’র কমিউনিটি মোবিলাইজার মাহবুবকে দিয়ে দেড় থেকে আড়াইশ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। আর এসব নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবা আইরিন ব্যাংক হিসাব খোলা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেন। সোমবার নিয়োগপত্র চেয়ে ও ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার দাবীতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখেন শিক্ষক/শিক্ষিকারা। একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় অভিমুখে রওয়ানা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবা আইরিন নিচে নেমে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

ভুক্তভোগীরা জানায়, তাদের কাছ থেকে কমিউনিটি মোবিলাইজার ওবায়দুল ও মাহবুব শিক্ষার্থীদের ছবি তোলার খরচ বাবদ ৩ হাজার ৫০০ করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চাকুরী নিতে শিক্ষা কর্মকর্তাকেও ঘুষ দিতে হয়েছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রফিক জরুরী ভিত্তিতে সাক্ষাতকার ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি স্বীকার করলেও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এর সাথে জড়িত নই। ষড়যন্ত্রমুলকভাবে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে। এটা যারা নিয়েছে তাদের জিজ্ঞাসা করেন।

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবা আইরিন বলেন, প্রথম দফায় ৭০ জন শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে আমার জানা আছে। এটা স্বচ্ছভাবে নেওয়া হয়েছে। ক্যাচমেন্ট এরিয়া সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাকী ৫২টি কেন্দ্রের নিয়োগের ব্যাপারে আমি জানি না। এর দায়-দায়িত্ব আমি নিতেও পারব না।
(এইচবি/এএস/জুন ০৯, ২০১৪)