টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : ঢাকার কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি আবু হাকিম নাইমের আদি বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুরে। জেএমবি নেতা বাংলাভাইয়ের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল সে।

১৯৮৩ সালে জেলার গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের গোলাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করে সে। তার বাবার নাম নুরুল ইসলাম ও মা মোছা. হালিমা। জন্মের চার বছর বয়সে নাইমের বাবা মারা গেলে মায়ের সঙ্গে জামালপুরের ঘোড়াধাপ গ্রামে নানা আব্দুল হোসেন মুন্সির বাড়িতে চলে যায় নাইম। সেখানে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে সে। এছাড়া জেএমবি নেতা বাংলা ভাইয়ের শিষ্য ছিল নাইম।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নাইমের আসল পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর এমন তথ্যই জানান গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল জলিল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নানার বাড়িতেই বড় হওয়া নাইম সেখানকার স্থানীয় মাদ্রাসায় দাখিল পর্যন্ত লেখাপড়া করে। পরে ২০০৫ সালে জেএমবি নেতা বাংলা ভাইয়ের মুক্তাগাছা উপজেলার পাহাড়ি এলাকার আস্তানায় বাংলা ভাইয়ের জঙ্গি শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। পরে বাংলা ভাই গ্রেপ্তার হলে নাইম গা-ঢাকা দেয়। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে মধুপুর উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়নের চাপাইত গ্রামের আব্দুল হামিদের মেয়ে মোসা. সখিনা খাতুনকে বিয়ে করে।

এরপর ২০০৭ সালে নাইম পাড়ি জমায় লিবিয়ায়। সেখান থেকে ২০১২ সালে সে দেশে ফিরে আসে। সেখান থেকে ফিরে জন্মস্থান গোপালপুরে গোলাবাড়ি গ্রামে প্রতিবেশীর কাছ থেকে কিছু জমি নিয়ে সেখানে মক্তব তৈরি করে। পরে আরবি শিক্ষা না দিয়ে স্থানীয় যুবকদের জিহাদি শিক্ষায় আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে সে। একসময় এলাকাবাসী তা টের পেলে ২০১৩ সালে নাইমসহ তার পরিবারকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়। সেখান থেকে কুয়াকাটায় চলে যায় নাইম। সেখানে সাগরনীর হাউজিং নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল সে। এরপর আর কখনো গ্রামের বাড়ির এলাকায় দেখা যায়নি তাকে।

নাইমের রাজিয়া (১০), তাসলিয়া (৮) নামের দুই মেয়ে ও সাইফুল্লাহ (৫) নামের এক ছেলে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন নাইমের গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে গোলাবাড়ি এলাকায় তাদের বাড়ি। সেখানে গিয়ে এলাকাবাসীকে নাইমের কথা জিজ্ঞেস করলে তারা কেউ তাকে চেনেন না বলে জানান। তবে যখন জঙ্গি নাইমের কথা বলা হয় তখন তারা জানান তার নাম নাইম নয়, আব্দুল হাকিম। পরে এলাকাবাসী তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় নাইমের থাকার ছোট একটি টিনের ঘরের দরজা খোলা। ভেতরে হাঁড়ি-পাতিল ও একটি বড় স্টিলের ট্রাঙ্ক ছাড়া আর কিছুই নেই।

এদিকে নাইমের পরিচয় নিশ্চিতের পর গোপালপুর থেকে তার চাচা সুরুজ্জামান ও মধুপুর থেকে তার স্ত্রী সখিনা খাতুনের বড় ভাই আব্দুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ।

গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল জলিল জানান, নাইমের থাকার ঘরের একটি ট্রাঙ্ক থেকে একটি পুরাতন অ্যালবাম উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে নাইম ও তার স্ত্রী সখিনা খাতুনের একটি ছবি ও ভোটার আইডি কার্ড পাওয়া গেছে। এ ছাড়া লিবিয়া থেকে তার স্ত্রীর নামে নাইমের টাকা পাঠানোর একটি রশিদও পাওয়া গেছে। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নাইমের চাচা সুরুজ্জামানকে আটক করা হয়েছে।

মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে মধুপুরের চাপাইদ গ্রাম থেকে নাইমের স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুর রহমানকে আটক করা হয়। আব্দুর রহমান মধুপুর বনের ভেতর গাছাবাড়ী এলাকার একটি নূরানী মাদ্রাসায় ২০১৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেছিলেন। তাকে নাইমের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

(ওএস/এএস/জুলাই ২৯, ২০১৬)