স্টাফ রিপোর্টার : ফিস্টুলা একটি নিরাময়যোগ্য ব্যাধি হলেও সমাজের কেউ এর দায়িত্ব নিতে চান না। দেশে এরকম নারী রোগীর সংখ্যা প্রায় চার লাখ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এদের স্বামী পরিত্যাগ করেন।

শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয় বাপের বাড়ি। সেখানেও বাপ-মা, ভাই-বোন যারা থাকেন, তাদের কেউই জায়গা দেন না। আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেন। শেষ পর্যন্ত জায়গা হয় গোয়াল ঘরে।– ফিস্টুলা আক্রান্ত আমেনা, সেলিনা, আক্তারী ও ফরিদাকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রে এমন দুঃখময় কাহিনী ফুটে উঠেছে।

সোমবার বিকেলে জাতীয় ফিস্টুলা সেন্টার উদ্বোধন শেষে এক প্রামাণ্য চিত্রে ফিস্টুলা আক্রান্ত এসব নারীদের সমাজে নানা বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরা হয়।

প্রামাণ্য চিত্রে দেখা যায়, ফরিদার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার একটি গ্রামে। ১৪ বছর বয়সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার বিয়ে হয়। বছর না ঘুরতেই সন্তান প্রসবের সময় আসে। এ সময় সন্তান গর্ভাশয় থেকে বের হতে দুদিন আটকে থাকে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনো ধাত্রীও ছিল না। শেষে উপায় না পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অপারেশন করে মৃত বাচ্চা বের করা হয়। আর ফরিদা ফিরে আসেন স্বামীর বাসায়।

একদিন পর ফরিদা বাথরুমে যাবে। এ সময় তিনি দেখতে পান তার পা বেঁয়ে তরল পদার্থ পড়ছে। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। কথাগুলো স্বামীকে বলার পর তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে রোগের নাম শুনে চমকে যান। তিন দিন না যেতেই তাকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। স্বামীও পর হয়ে যায় ফরিদার।

বাপের বাড়িতে গিয়ে বাপ-মাকে খুলে বলেন। কিন্তু সেখানেও আপনজনদের রোশানলে পড়তে হয় ফরিদাকে। ফরিদা নিরূপায় হয়ে যায়। তার আশ্রয় মেলে গোয়ালঘরে। গোয়াল ঘরে কিছুদিন থাকার পর এক এনজিও কর্মীর মাধ্যমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন। দীর্ঘ চার মাসের চিকিৎসায় ফরিদা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। প্রামাণ্য চিত্রে এরকম আরো অনেক নারীর জীবনচিত্র ফুঠে ওঠে।

প্রামাণ্য চিত্রে দেখা যায়, ফিস্টুলা কী? কেন এ রোগ হয়? গর্ভবতী নারী যদি বাচ্চা প্রসবের সময় ১২ ঘণ্টার বেশি যোনিপথে আটকে থাকে। এসময় ওই জায়গায় পচন ধরে প্রস্রাবের রাস্তা ফুটো হয়ে যায়। শরীরের তরল পদার্থ অনবরত নির্গত হতে থাকে। ফলে পরনের কাপড়-চোপড়সহ সব ভিজে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে।

প্রামাণ্য চিত্রে আরো দেখা যায়, দেশে এখনো ৭০ শতাংশ নারী বাল্য বিবাহের শিকার হয়। আর ৭৩ শতাংশ নারী অদক্ষ অপ্রশিক্ষিত ধাত্রী দিয়ে বাচ্চা প্রসব করান। এই রোগ প্রতিরোধ করতে হলে তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপের কথা বলা হয়। বাঁধাগ্রস্ত প্রসব বন্ধ করতে হবে, ১৮ বছরের আগে বিয়ে বন্ধ করতে হবে, কিশোরী বয়সে বাচ্চা নেওয়া যাবে না এবং দক্ষ ও পেশাদার ধাত্রী দিয়ে প্রসব কাজ করাতে হবে।

(ওএস/এস/জুন ০৯, ২০১৪)