দেবাশীষ বিশ্বাস, রাজবাড়ী : রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নিভৃত পল্লীতে ২০০৫ সালে জন্মগ্রহন করে মোঃ রাজীব খাঁ। বাবা-মায়ের পাঁচ সন্তানের মাছে তৃতীয় সন্তান হিসাবে পৃথিবীর মুখ দেখতে পেলেও বিদ্যালয়ের মুখ বেশিদিন দেখা হয় নাই মোঃ রাজীব খাঁয়ের। তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও সংসারের অভাব-অনটনে বিদ্যালয়ের মায়া মমতা ত্যাগ করে জীবন সংগ্রামের পথ হিসাবে বেছে নিয়েছে ভ্যানগাড়ী।

কোলারহাট থেকে জামালপুর আর নিভৃত পল্লী হটাৎপড়াতেই সীমাবন্ধ জীবন মোঃ রাজীব খাঁর। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার পর আর অর্থকষ্টে বিদ্যালয়ে যাওয়া হয় নাই ছোট্ট এই শিশুটির। রাজীব বলেন, “ দাদা, বাবা-মায়ের কষ্ট সহ্য হয় না বলে নিজে কর্মক্ষেত্র হিসাবে বাবার প্যাডেল দিয়ে চালানো ভ্যান জীবিকার জন্য বেছে নিয়েছি।” রাজীব আরো বলেন, দাদা যখন বিদ্যালয় শুরু হয় আমার বন্ধুরা মাশালিয়া থেকে আমার ভ্যান গাড়ীতে করে যখন বিদ্যালয়ের গেটের সামনে দিয়ে আসি আমার খুব কষ্ট হয়, দুই চোঁখ দিয়ে জল আসে। আবার বিদ্যালয়ে ক্লাস করতে ইচ্ছা করে কিন্তু পারি না। চার ভাই আর এক বোনের সংসারের ভার বাবা একা বহন করতে পারে না তাই কষ্ট স্বীকার করে এই পথ বেছে নিয়েছি। সরকার থেকে অনুদান পবার বিষয়ে রাজীব বলেন, এই অনুদানের মাঝে আমরা পরি না। কারণ হিসাবে জানতে চাইলে রাজীব বলেন বিদ্যালয়ে শতকরা উপস্থিতি অমরা পূরণ করতে পারি না।

রাজীব এক সময় রেগে যেয়ে প্রতিবেদক কে বলেন এসব বাদ দেন তো? কেন বাদ দিব উত্তরে রাজীব বলেন আমাদের আগে অনেক জমি জায়গা ছিলো কিন্তু মামলা নিয়ে রাজবাড়ী কোর্টে যেতে আসতে আর উকিলদের টাকা দিতে সব শেষ হয়ে গেছে।

বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির ব্যাপারে কোন শিক্ষক তাঁকে বলেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রাজীব বলেন, দাদা অনেক স্যার বলেছে কিন্তু আমি নিজ ইচ্ছাতেই বিদ্যালয়ে যাই না। বড় এক ভাই পড়াশোনা করে সে যদি কিছু করতে পারে সেই অপেক্ষায় আছি আর বাবা একা বড় সংসারের ভার বহন করতে পারে না।

রাজীবদের বাস্তবতা নিয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ হারুন-অর-রশিদ মানিক বলেন, সমাজে রাজীবদের দুঃখ দেখা আর সচেতনতা বৃদ্ধি করা ছাড়া আমাদের তেমন কোন ক্ষমতা নেই।

শিশুশ্রম নিয়ে বালিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, এটি একটি জাঁতিয় সমস্যা। সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সচেতনতার পাঁশাপাশি আইন প্রয়োগ করে চেষ্টা করে যাচ্ছি সমাজ থেকে শিশুশ্রম দূর করতে।