কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : অমাবশ্যার জোর প্রভাবে রামনাবাদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লালুয়া,মহীপুর ও ধানখালী ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। স্রোতের টানে মানুষ ভেসে বেড়ালেও তাদের আর্তনাদ কেউ শুনছে না। প্রতিটি জোয়ারে গিলে খাচ্ছে মানুষের স্বপ্ন ও বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়টুকু। আট বছর ধরে শ্যাওলার মতো এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে  ভেসে গিয়ে একটু মাথা গোঁজার আশ্রয় খুঁজে নিলেও তা মুহুর্তের মধ্যে চলে যাচ্ছে রামনাবাদ নদীর করাল গ্রাসে।

মঙ্গলবার সকালে লালুয়ার ৪৭/৫ পোল্ডারের চাড়িপাড়া বেড়িবাঁধের ভেঙ্গে যাওয়া অংশ দিয়ে পানি নদীর পানি প্রবেশ করে চাড়িপাড়া, পশরবুনিয়া, বানাতিপাড়া, ১১নং হাওলা,বানাতিপাড়া, ধঞ্জুপাড়া ও নয়াকাটা গ্রাম রামনাবাদ নদীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। স্থানীয় ইউপি সদস্য দিলীপ গাজী জানান, বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় বসত ঘর হারানোর আশংকায় অন্তত দুইশ পরিবার বাঁধের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

মহীপুরের নিজামপুর বাঁধের ভাঙ্গা অংশদিয়ে পানি প্রবেশ করে তিনটি গ্রামের অন্তত সাত শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রায় ছয় মাস আগে বাঁধটি ভাঙ্গলেও এখনও সংস্কারের উদ্যেগ নেয়া হয়নি। একইভাবে পৌর শহরের বেড়িবাঁধের বাইরের শতাধিক পরিবার আন্ধারমানিক নদীর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

চাড়িপাড়া গ্রামের হালিমা বেগম জানায়“ এইবার লইয়া তিনবার ঘর গাঙ্গে ভাইঙ্গা গ্যাছে। আর কয়বার ঘর তুলুম হইয়া কন। নিজের তো কোন জায়গা নাই। যা আছিলো সব ওই নদীর মধ্যে। এ্যাহন বান্দের পাশে ঘর উডাই, আর বর্ষা হইলে ভাঙ্গে। আর কতো মোরা ভাসমু কন”। চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন ভাঙ্গা বাঁধের একপাশে আশ্রয় নিলেও সেটাও এখন হুমকির মুখে। একই অবস্থা তার মতো শতশত পরিবারের।

নাওয়াপাড়া গ্রামের জনি জমাদ্দার জানালেন, এখন জোয়ার হলে বাঁধে, ভাটা হলে ঘরে থাকতে হয়। ঘরের সব মালামাল রাখতে হয় মাঁচার উপর। হাঁটু কাঁদা ঘরের মধ্যে। রাতের জোয়ারে আরও ভয়াবহ অবস্থা হয়। ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ সংলগ্ন ছোটপাঁচনং গ্রামের রুবেল বয়াতী দুই মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে এখন বাঁধের উপর সংসার পেতেছেন। ছোট্র কুঁড়েঘর করে শুধু মাথা গোঁজার একটু খড়ের ঘর তৈরি করেছেন। তার ভাষায়“ আমাগো আর নিজ ঘরে থাহা হইবে না। জোয়ার হইলে ঘর ছাড়তে হয়, তাই আগে থেইক্যাই এইহানে ঘর তুলছি”। তার মতো অন্তত দুই শতাধিক পরিবার বাঁধের বিভিন্ন স্লোপে আশ্রয় নিয়েছে।

চাড়িপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য মজিবর হাওলাদার জানান, এখন যে অবস্থা তাতে শতশত পরিবারের বসত ঘর স্রোতের টানে ভেসে যাবে। বাঁধের ভাঙ্গা অংশ ক্রমশ বড় হওয়ায় পানিও বাড়ছে। এতে অন্তত চার হাজার একর জমির বীজতলা ভেসে গেছে বলে জানান। এ কারণে এবার এখানে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

কলাপাড়া পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী মো. আবুল বাশার জানান, তারা দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাঠিয়েছেন। আশা করি বর্ষা মৌসুম শেষে এই ভাঙ্গা বাঁধগুলো মেরামত করতে পারব। কারণ বর্ষায় বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করলে আবার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

(এমকেআর/এএস/আগস্ট ০৩, ২০১৬)