মাহবুব আরিফ :


স্বাধীন দেশে পরাধীনতার এক কালো আইন আমাদের বাক স্বাধীনতাকে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত চাবুকের মত আঘাত করতে করতে ক্ষত বিক্ষত করছে আমাদের চেতনা। হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের বোধ শক্তি। মনের অজান্তেই দিন দিন আমরা ছুটে চলেছি এক অচেনা ভবিষ্যতের অন্ধকার গুহায়, থেমে যাবে আমাদের কলম, থেমে যাবে আমাদের পত্রিকা, লেখা হবে না আমাদের চেতনা ও দেশপ্রেম।

এভাবেই ৫৭ ধারার চাবুকের আঘাতে একজন সাংবাদিকের কলমকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে এই কালো আইন | কতটুকু অপরাধ ছিল এই সাংবাদিকের! চেয়েছিলেন জীবনের নিরাপত্তা, গিয়েছিলেন পুলিশ স্টেশনে কিন্তু হায় নিরাপত্তা চাওয়া হয়ে এলো সাংবাদিকের জীবনের উপর কালো ঘন মেঘ, মেঘের আড়ালে গর্জন দিচ্ছেন সমাজের প্রতাপশালী ক্ষমতাধর সরকারি মহাজনেরা। আইন যেন তাদের কেনা গোলাম।

রাষ্ট্রের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চাওয়া একটি সাংবিধানিক অধিকার, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগান্তির যন্ত্রণা যিনি ভুগেছেন একমাত্র তিনিই জানেন এর বেদনা। এক অনিশ্চিত জীবনের ঝুঁকির কারণ মনে করে যদি কারো নাম উল্লেখ করা হয় তবে সেটার গুরুত্ব যাচাই বাছাই করার দায়িত্ব প্রশাসনের। একজন মন্ত্রী, এম পি বা জোতদার তো আর ফেরেস্তা নন যে তারা আইনের ঊর্ধ্বে। সাংবাদিক প্রবীর সিকদার ঠিক তাই জীবনের নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ মনে করে যে কজনের নাম উল্লেখ করেছেন সেটার জন্যে তাকে শাস্তি পেতে হবে আর কেউ যদি জনসম্মুখে অন্যের চোখ তুলে ফেলার হুমকি দিতে পারে, পা কেটে ফেলার হুমকি দিতে পারে তবে সেই কালো আইনে কি নীরব ভূমিকা পালন করবে?

শুধু ফরিদপুর কেন সমগ্র বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের জায়গা জমি পানির দামে লুট হয়ে হয়ে যাচ্ছে, ক্ষমতাবানদের অত্যাচারে মানুষ দেশান্তরী হয়ে যাচ্ছে আর সেই সব সংবাদ প্রকাশের কারণেই প্রবীর সিকদার হয়ে ওঠেন ক্ষমতাধরদের চক্ষুশূল, তাদের অনুচরদের হুমকি ধমকির মাঝেও থেমে থাকেনি তার কলম, ফিরিয়ে দেয়া হয় তাকে থানা থেকে, বলা হয় তার অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গ্রহণ করা হবে না।

জঙ্গিদের আক্রমণে জনজীবন যেখানে ত্রাসের অন্ধকারে নিমজ্জিত সেখানে সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের লেখনী জাগিয়েছে মানুষের মাঝে চেতনা, দেশপ্রেম আর মানবতা। আজ সেই প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে এই মিথ্যে মামলা তুলে না নিলে সাংবাদিকতার জগতে সেটা হবে এক চরম বিপর্যয়।

লেখক : সুইডেন প্রবাসী

(এমএ/এএস/আগস্ট ০৫, ২০১৬)