নওগাঁ প্রতিনিধি :নওগাঁর বিভিন্ন হাট-বাজারে চলতি বর্ষা মৌসুমে ছোট ছোট মাছ ধরার জন্য গ্রাম বাংলার সহজ লভ্য প্রাচীনতম উপকরণ বাঁশের তৈরি চাঁই বা খলসানি বা খলসান বিক্রির ধুম পড়ে গেছে। জেলার বর্ষা মৌসুমে মাছের খনি খ্যাত আত্রাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহি আহসানগঞ্জ হাটের খলসানি পট্টিতে বেচা কেনার জন্য সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলা বরাবরই মাছের জন্য বিখ্যাত। এই উপজেলায় বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই বিভিন্ন হাট বাজারে দেশী প্রজাতির ছোট জাতের মাছ চোখে পড়ে। এই মাছ ধরার জন্য গ্রাম বাংলার সহজ লভ্য প্রাচীনতম উপকরণ বাঁশের তৈরি চাঁই বা খলসানি বা খলসান বিক্রির ধুম পড়ে যায় বর্ষার শুরু থেকেই। উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে প্রতিদিন শত শত খলসানি বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সিংসাড়াসহ পাশের রানীনগর উপজেলার নিজামপুর, ঝিনা, খট্টেশ্বর, কৃষ্ণপুর-মালঞ্চিসহ বিভিন্ন গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের স্ত্রী, পূত্র, কন্যাসহ পরিবারের সকল সদস্যরা মিলে এই অবসর মৌসুমে তাদের নিপুণ হাতে তৈরি করে ছোট মাছ ধরার খলসানি। বাড়ির পুরুষরা সেসব খলসানি বাড়ি থেকে নিয়ে এসে আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ, কাশিয়াবাড়ি, সুটকিগাছা, পাইকরা, ব্রজপুর, বান্দাইখাড়া, মির্জাপুর-ভবানিপুর, রানীনগরের ত্রিমোহানী, লোহাচুড়া, আবাদপুকুর, এবং নওগাঁ সদরসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রির জন্য পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বাঁশ কর্ডের সুতা এবং তাল গাছের আঁশ দিয়ে তৈরি এসব খলসানি মানের দিক দিয়ে ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অঞ্চল ভেদে বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে মাছ শিকারীরা এসব হাট-বাজার থেকে পাইকারি মূল্যে তা নিয়ে যায়। ফলে এ পেশায় জড়িত পরিবারগুলো বর্ষা মৌসুমে এর কদর বেশি ও যথাযথ মূল্য পাওয়ায় মাত্র দুই তিন মাসেই খলসানি বিক্রি করে তারা প্রায় সাড়া বছরের খোরাক ঘরে তুলে নেয়।

এসব খলসানি তৈরিতে প্রকার ভেদে খরচ হয় ৭০ থেকে ২শ’ টাকা। বিক্রি হয় ১শ’ থেকে ৩ শ” টাকা পর্যন্ত। এতে করে খুব বেশি লাভ না হলেও পৈত্রিক এ পেশা ছাড়তে তারা নারাজ। আধুনিকতার উৎকর্ষের তৈরি ছোট জাতের মাছ ধরার সুতি, ভাদায় ও কারেন্ট জালের দাপটের কারণে দেশি প্রযুক্তির বাঁশের তৈরি খলসানি সামগ্রী এমনিতেই প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু জীবনের তাগিদে তারা একেবারে কর্মহীন থাকতেও চায় না। তবে সরকারি বেসরকারী পৃষ্টপোষকতা ও সহযোগীতা পেলে মৌসুমের আগে বেশি পরিমান খলসানি মজুত করতে পারলে ভরা মৌসুমে বেশি দামে বিক্রি হলে অধিক লাভবান হতে পারতো বিক্রেতারা। বিক্রেতাদের মতে, খলসানি তৈরির সামগ্রীর দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তাই আগের মতো আর লাভ হয় না। বংশপরম্পরায় এ ব্যবসায় জড়িত থাকার কারনে তারা এটি ছাড়তে পারছেনা। বর্ষা এবার আগাম শুরু হওয়ায় খলসানির কদরও বেড়েছে। তাই হাট বাজারগুলোতে খলসানি বিক্রির ধুম পড়েছে।


(বিএম/এস/আগস্ট১৩,২০১৬)