মাদারীপুর প্রতিনিধি : মা-বাবা আদর করে ফুলের নামে নাম রেখেছিলো ডালিয়া। খুব আদরের একমাত্র মেয়ে। মা-বাবার আদরে বড় হতে থাকে সে। কিন্তু অল্প বয়সেই বাবা মোকলেস হাওলাদার মারা গেলে ফুটফুটে সুন্দর শিশুটির জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। মা সেলিনা বেগম নিজে পরিশ্রম করে মেয়েকে বড় করতে শুরু করেন। কিশোরী বয়সেই ডালিয়ার বিয়ে হয়ে যায়। জন্ম নেয় সুন্দর ফুটফুটে কন্যাসন্তানের। এর কিছুদিন পরই স্বামী তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যায়।

পরে প্রায় ৫ বছর আগে বিদেশে যাবার জন্য দেশ ছাড়ার পর আর কোন খবর নেই ডালিয়ার স্বামীর। ইতিমধ্যে ডালিয়ার শশুর ও দেবরও মারা যান। তাই শশুর বাড়ির সাথে পুরোপুরি বিছিন্ন হয়ে পড়ে সে। জীবন যুদ্ধে নেমে পড়তে হয় ডালিয়ার। মা ও মেয়েকে নিয়ে বাঁচার জন্য শুরু হয় লড়াই।

প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন বাড়ি গিয়ে অন্যের সন্তানদের পড়ানো। এরপর একটি পত্রিকা অফিসে খন্ডকালিন চাকুরী। আবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বিভিন্ন বাড়ি গিয়ে অন্যের সন্তানদের পড়ানো। এরই মাঝে চলে নিজের মেয়েকে স্কুলে আনা-নেয়া, রান্না, বাজার করাসহ আনুসাঙ্গিক কাজ।

এভাবেই কষ্ট আর সংগ্রাম করে দীর্ঘ ২৫ বছর জীবন পাড়ি দেয়। মেয়ের বয়সও ১০ হয়ে গেছে। মা চলে গেছে মধ্য বয়সে। শহরের আচমত আলী খান সড়কের একটি বাসা ভাড়া করে মা ও মেয়েকে নিয়ে দিনের পর দিন সংগ্রাম চলতে থাকে ডালিয়া। এই অভাবের মধ্য দিয়েও মেয়ের পড়াশুনার পাশাপাশি সে এসএসসি, এইচএসসি পাশ করেছে। বর্তমানে বিএ পড়ছে। পড়াশুনার আর কাজের পাশাপাশি খুঁজতে থাকে একটা ভালো চাকুরী। যাতে করে তিনজন একটু ভালো করে থাকতে পারে এই আশায়।

হঠাৎ প্রায় ৪ বছর আগে শারিরীকভাবে মোটা হতে থাকে সে। ধরা পড়ে নানা অসুখ। পেটে নানা সমস্যা। কিন্তু টাকার অভাবে ডাক্তার দেখানো কিংবা কোন পরীক্ষা নিরিক্ষা করার মতো টাকা না থাকায় নিজের জীবনের প্রতি চরম অবহেলা করলেও মা ও মেয়েকে সুখে রাখার জন্য পরিশ্রম করতে থাকে।

সম্প্রতি পেটের টিউমার বড় হয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। শুরু হয় তীব্র ব্যথা। মাদারীপুরে একজন চিকিৎসককে দেখানো হয়। তিনি দ্রুত ঢাকায় গিয়ে অপারেশনের কথা বলেন।

আর তখন থেকেই ডালিয়ার জীবনের নেমে আসে আরো গভীর অন্ধকার। নিজের জন্য না হোক মা ও মেয়ের জন্য তার বাঁচার আকুতি দেখে অনেকেই চোখের জল ফেলেন।
ডালিয়া আক্তার বলেন, অপারেশনের জন্য ১ লাখ টাকা দরকার। সেই টাকা কোথায় পাবো। কিভাবে চিকিৎসা করাবো। আমি মরে গেলে আমার মা আর মেয়ের কি হবে। এই বলে কাঁদতে থাকে সে।

ডালিয়ার ১০ বছরের মেয়ে ইভা বলে, আমার আম্মু আর নানী ছাড়া কেউ নেই। আম্মুর কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে। যেভাবেই হোক আমার আম্মু যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়, আল্লাহ কাছে এই দোয়াই করি।

ডালিয়া ও তার মেয়ের এসব কথা শুনে খোঁজ খবর নিয়ে সত্যতা পাবার পর সাংবাদিক আয়শা আকাশী তার ফেসবুকে ডালিয়ার ছবিসহ স্ট্যাস্টাস দেন।

সেই স্ট্যাস্টাস দেখে অনেকেই এগিয়ে আসেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাদারীপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা ডালিয়ার হাতে তুলে দেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস।

এসময় উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির মাদারীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক শাহজান খান, জেলা সমাজসেবা অফিসার আফজাল হোসেন, নকশী কাথার নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশী।

এরপর মাদারীপুরের ছেলে কুয়েত প্রবাসী নাজমুল হোসেন সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশীর মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা পাঠান। সেই টাকা রাতে দৈনিক সুবর্ণগ্রাম কার্যালয়ে পত্রিকার প্রকাশক সম্পাদক এবিএম বজলুর রহমান রুমি মন্টু খানের মাধ্যমে ডালিয়ার হাতে তুলে দেয়া হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির মাদারীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক শাহজান খান, নকশী কাথার নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশী।

এছাড়াও আয়শা আকাশীর ফেসবুকের স্ট্যাস্টাস দেখে মাদারীপুরের ছেলে ইতালী প্রবাসী জনি মিয়া ১৫ হাজার টাকা, আমেরিকা প্রবাসী আশিকুর হোসেন অপু তার নামের নামে সংস্থা চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন সংস্থার মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা, মাদারীপুরের আরেক ছেলে সৌদি আরব প্রবাসী জিএম পলাশ এবং নাম না প্রকাশের শর্তে ঢাকায় বসবাসরত এক ছাত্রনেতা ৫ হাজার টাকা দেয়ার সহযোগিতার কথা বলেন। তারা দ্রুত ব্যাংকে অনলাইনের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দিবেন বলে মোবাইলে সাংবাদিক আয়শা আকাশীকে জানান।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, আগামী শনিবার ডালিয়া টাকাগুলো সংগ্রহ করে মেয়ে ও মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। তাকে নৌপরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খানের সহযোগিতায় দৈনিক সুবর্ণগ্রামের প্রকাশক ও সম্পাদক প্রেসক্লাবের আহবায়ক এবিএম বজলুর রহমান রুমি মন্টু খান পিজি হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন।

এ ব্যাপারে সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশী বলেন, সত্যিই মানুষ মানুষের জন্য। কয়েকজন মানুষের সহযোগিতায় ডালিয়া অপারেশন করতে পারবে। এতে সে সুস্থ হয়ে আবার তার পরিবারের হাল ধরতে পারবে। তার মেয়েকে মানুষ করতে পারবে।

এ ব্যাপারে দৈনিক সুবর্ণগ্রামের প্রকাশক ও সম্পাদক প্রেসক্লাবের আহবায়ক এবিএম বজলুর রহমান রুমি মন্টু খান বলেন, আমি ডালিয়াকে হাসপাতালে ভর্তিসহ সব ধরণের সহযোগিতা করবো। ইনশা আল্লাহ