আফরিনা ফেরদৌস : একজন সামাজিক জীব হিসেবে আমরা নানা ধরনের সম্পর্কে জড়িত। জন্মের পর যে সম্পর্কটা শুরু হয়ে যায় পরিবারের মাধ্যমে। পরিবারের হাত ধরেই আমরা সামাজিক হতে শিখি।

একজন মানুষ মারা গেলে রয়ে যায় তার কথা, ব্যবহার এবং সম্পর্ক। এই গুণ গুলোর কারণেই মানুষ মানুষকে মনে রাখে অনেক দিন। তবে বর্তমান ইট কাঠের যুগে আমরা কে কতখানি সামাজিক তা বোঝা বড় দায়। অনেকেই ছোটবেলা থেকে যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি এবং দেখেছি সবার সঙ্গে সবার মিলে মিশে থাকার ব্যাপারটা। কারো বিপদে সবাই একসঙ্গে এগিয়ে আসা। আর এখন যৌথ পরিবার তো দূরের কথা, বাবা মায়ের সঙ্গে কেউ থাকতে চাই না।

আমরা এতটাই আত্মমুখি হয়ে পড়েছি যে, আমাদের জীবন এখন যেন শুধু চার দেয়ালের গল্প। আর আমাদের মানসিকতাকে বিগড়ে দিয়েছে অনলাইনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। ফেসবুক, টুইটার, ভাইবার ইত্যাদি। এগুলো আমাদের সামাজিক করে তোলে না। বরং আমাদের ঘরের কোণে কোণ ঠাসা করে দেয়। কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে, খাবার টেবিলে কোনো প্রকার শিষ্টাচার ছাড়াই অনায়াসে ব্যবহার করছি এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো যে খারাপ তা নয়, কিন্তু অনেকেই এর থেকে ভালো কিছু শিখতে পারছেন না। হাতে গোনা অল্প কিছু মানুষ করছে এর সঠিক ব্যবহার। আর বেশিরভাগের ক্ষতিই হচ্ছে। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যগুলোর কারণে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি আমাদের সামাজিক সম্পর্কগুলো থেকে। যে সম্পর্কগুলো আপনার জন্মের পর থেকেই আপনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যে কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের থেকে সামাজিক সম্পর্কের মূল্য বেশি হওয়া উচিত।

একটি গবেষোণায় দেখা গেছে, যে মানুষ যত বেশি সামাজিক সে তত বেশি হাসি খুশি থাকে। অর্থাৎ যে যত বেশি মানুষের সঙ্গে মিশে, কথা বলে অন্য মানুষের তুলনায় সে বেশি ভালো থাকে। আমাদের যান্ত্রিক জীবন আমাদের কথা বলার সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে। আর তাও যা কথা হয় তা মুঠোফোনের মাধ্যমে। অথচ অতিরিক্ত ফোনে কথা বললে অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

সুতরাং আপনাকে কথা বলতে হবে সামনা সামনি। মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে মানুষের কাছে থেকে। তবেই না আপনি হয়ে উঠবেন সামাজিক। এতে আপনি শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকবেন। বেশি বেশি মানুষের সঙ্গে কথা বলুন, মিশুন। অন্যের জন্য নয় নিজের জন্য। নিজেকে ভালো রাখার জন্য, হাসি খুশি রাখার জন্য।

(ওএস/এএস/আগস্ট ১৭, ২০১৬)