কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। দৌলতপুরের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন দেশের অভ্যন্তরে ভারত থেকে অবাধে আসছে মরণ নেশা ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ ও গাঁজা।

প্রতিদিন বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে কিছু মাদক ধরা পড়লেও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সিংহভাগ মাদক মজুদ ও পাচার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে দৌলতপুর সীমান্ত এলাকা ঘুরে জানা গেছে, সীমান্তের রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মুন্সীগঞ্জ, মথুরাপুর, ডাঙ্গেরপাড়া ও তালপট্টি, চিলমারী ইউনিয়নের মরারচর, হবিরচর, উদয়নগর, বাজুমারা ও বাংলাবাজার এবং প্রাগপুর ইউনিয়নের প্রাগপুর, বিলগাথুয়া, ময়রামপুর, মহিষকুন্ডি মাঠপাড়া ও জামালপুর ভাঙ্গাপাড়া এবং আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের গড়ুরা, ধর্মদহ ও কাজিপুরসহ বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দিনে ও রাতে ভারত থেকে আসছে ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা ও মদ সহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ।
এলাকাবাসী জানান, প্রথমে মাদক বহনকারীরা সীমান্তের ওপার থেকে ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য পুটলি বা বস্তায় করে আবার পদ্মায় পানি বেড়ে গেলে প্লাস্টিক বস্তায় বেঁধে সাঁতরে, অথবা পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে নদী পার হয়ে বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীর নিকট পৌঁছে দেয়া হয়। এরপর তারা সুবিধামতো স্থানে মজুদ করে চাহিদা অনুসারে পৌছে দেয়া হচ্ছে রাজধানী ঢাকা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ি, ফরিদপুরসহ নির্দিষ্ট গন্তব্যে। তারা আরো জানায়, বর্তমানে প্লাস্টিকের বোতলজাতকৃত ফেনসিডিল যেখানে কাঁটাতার আছে সেখানে ভারতীয়রা ছোট ছোট পুটলি বেঁধে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য কাঁটাতারের ওপার থেকে এপারে ছুড়ে ফেলে এবং বাংলাদেশী মাদক ব্যবসায়ীরা সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে তাদের গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে। সীমান্তের মুন্সীগঞ্জ , জামালপুর , আবেদের ঘাট এবং ভাগজোত এলাকার এক ডজন ব্যক্তি এ মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে স্থানীয় সুত্রগুলো জানায়। একইভাবে প্রাগপুর, গড়ুরা, ধর্মদহ, শেহালা, ডাংমড়কা, মথুরাপুর, তারাগুনিয়া, আল্লারদর্গা, রিফাইতপুর ও দৌলতপুর সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পৃথক পৃথক মাদক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলে সুত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
এদিকে উপজেলার প্রাগপুর, রঘুনাথপুর, বিশ্বাসপাড়া, ময়রামপুর, বিলগাথুয়া, মহিষকুন্ডি, জামালপুর, জামালপুর ভাঙ্গাপাড়া, ধর্মদহ, তেকালা, গড়ুরা, ভাগজোত, মথুরাপুর, হোসেনাবাদ, সিরাজনগর, আবেদের ঘাট, ফিলিপনগর, দৌলতপুর হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা, রিফাইতপুর, সোনাইকান্দি, সাদিপুর, বেগুন বাড়িয়া, আল্লারদর্গা, সোনাইকুন্ডি, তারাগুনিয়া, খলিশাকুন্ডি, বৈরাগীরচরসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা শতাধিক মাদকের আস্তানা গড়ে উঠায় সে সকল এলাকায় প্রতিনিয়ত রং বেরঙের পরিচিত, অপরিচিত দামী দামী প্রাইভেটকার ও মোটর সাইকেল আরোহীরা যাতায়াত করছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। মাদক দ্রব্যের আস্তানা বৃদ্ধি পাওয়াতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে এখানকার স্কুল/কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের অবিভাবকরা।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, বিজিবি‘র পাশাপাশি দৌলতপুর থানা পুলিশ চোরাকারবারীদের সহায়তা করছে। তারা বলেন, পুলিশের সাথে মাদক চোরাকারবারিদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে সে কারণে পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়না। এছাড়া রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা ও স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধির সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানা গেছে। সীমান্তে মাদক চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিজিবি‘র পক্ষ থেকে জানানো হয়, সীমান্তের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চোরাচালান রোধে সার্বক্ষণিক টহল জোরদার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর থানার ওসি এনামূল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি সীমান্তের ওপার থেকে মাদক আসার কথা স্বীকার করে জানান, সীমান্তবর্তী বিশাল এলাকায় বিজিবি সদস্যরা টহল দেয়। সীমিত সংখ্যক পুলিশ দিয়ে যতটুকু সম্ভব হচ্ছে তা করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে যদি কোন পুলিশ সদস্যের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তার বিরেুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(কেকে/এএস/জুন ১০, ২০১৪)