নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইল সদর উপজেলার ১৪টি সরকারি প্রাইমারী স্কুলে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে।

স্কুলগুলো হলো সদরের দেবভোগ, বোড়ামারা, দলজিৎপুর, বড় মিতনা, ইচড়বাহা, আফরা, ডহর শেখাটি, আগদিয়া, রুনদিয়া, মির্জাপুর পূর্বপাড়া, রহমতপুর, মধুরগাতি, কামালপ্রতাপ ও চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রার্থীর কাছ থেকে একটি মহল লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নিয়োগ অনুমোদন কমিটির উপদেষ্টা সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ হুমায়ুন কবির দপ্তরী নিয়োগে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় নিয়োগের ব্যাপারে আপত্তি করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থ বছর থেকে পরবর্তী তিনটি অর্থ বছরে জেলার ২শ’ ৮৬টি সরকারি প্রাইমারী স্কুলে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হয়। গত অর্থ বছরে প্রথম পর্যায়ে সদরে ৩২, লোহাগড়ায় ৩২ ও কালিয়া উপজেলায় ৩২জন দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ দেওয়া হয়।
এ অর্থবছরেও (২০১৩-১৪) দ্বিতীয় পর্যায়ে সদরে ৩২, লোহাগড়ায় ৩৩ ও কালিয়া উপজেলায় ৩০টি পদে নিয়োগ কার্যক্রম চলছে। নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষা ও বাছাইয়ের দায়িত্বে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হবেন নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি, স্কুলের প্রধান শিক্ষক হবেন সদস্য সচিব এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতিনিধি সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। প্রত্যেক স্কুলে আগ্রহী প্রার্থীদের নিয়ে মৌখিক পরীক্ষা এবং তাৎক্ষনিক ফলাফল জানিয়ে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এ নিয়ম না মেনে কয়েকদিন পরে ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর গ্রামের দুইজন জানান, তারা দপ্তরী পদে চাকরির জন্য স্কুলের সভাপতির কাছে ২ লাখ টাকা এবং জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার কাছে আড়াই লাখ টাকা দিয়েছেন। জানা গেছে, দপ্তরী নিয়োগে অধিকাংশ পছন্দের প্রার্থীদের কাছ থেকে এভাবে দুই থেকে তিন লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এ বিশাল অংকের অর্থ আদায়ের সাথে জড়িত রয়েছেন, সরকারি দলের বিভিন্ন নেতা, কয়েকজন শিক্ষক নেতা, শিক্ষা কর্মকর্তা, অধিকাংশ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কোন কোন স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার দিন আমি শুধু প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছি। আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি সম্পর্কে জানা নেই। উল্লেখ্য, এই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সদর উপজেলার ৯০টি সরকারি প্রাইমারী বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ ক্রয়সহ ৫টি অনিয়মের বিরূদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে। অনুমোদন কমিটির উপদেষ্টা সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ হুমায়ুন কবির বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় পর্যায়ে দপ্তরি কাম প্রহরী পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, ঘুষ ও দূর্নীতি হওয়ায় ১৪টি স্কুলের নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ আব্দুল সাদী বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রাইমারী শিক্ষা অফিসার ও দপ্তরী নিয়োগে অনিয়ম তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব জেছের আলী জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠায় নিয়োগ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। তদন্তে দূর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে পূনরায় দফতরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
(আরএম/এএস/জুন ১০, ২০১৪)