স্টাফ রিপোর্টার : একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদনের শুনানি আগামী রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আজ বুধবার সকাল পৌনে ১০টায় সময় আবেদন খারিজ করে তা শুনানির নির্দেশ দেন আদালত। পরে মীর কাসেম আলীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন রিভিউ শুনানি শুরু করেন। কিছুক্ষণ পরেই রিভিউ আবেদনের কার্যক্রম আগামী রবিবার (২৮ আগস্ট) পর্যন্ত মুলতবি করেন সর্বোচ্চ আদালত।

মীর কাসেমে আলীর আবেদন খারিজ করে রিভিউ শুনানি রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ। আদালতে আজ রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় আদালতে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষে শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

আজ মীর কাসেম আলীর আপিলের রায়ের রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদনটি বুধবারের কার্যতালিকায় (কজলিস্ট) ৫ নম্বরে ছিল। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে খন্দকার মাহবুব হোসেন আবারও সময় আবেদনের বিষযটি উত্থাপন করেন।

আদালত বলেন, ‘আমরা অপারগ। আপনারা প্রস্তুতির জন্য সময় নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আসতে পারেন।’

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমার কাছে কোনো পেপার বুক নেই। যার কাছে মামলার নধিপত্র ছিল তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছেন (মীর কাসেম আলীর ছেলে)। মামলার সকল ডকুমেন্ট তার কাছে ছিল।

আদালত বলেন, ‘আপনি তো সিনিয়র, আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি। আপনি রবিবার পর্যন্ত সময় পাবেন। শুরু করেন, আপনার মেমোরি যথেষ্ঠ সার্ব। পরে খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানি শুরু করলে কয়েক মিনিট পরে তা রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত।

এর আগে গত ২৫ জুলাই মীর কাসেমের রিভিউ আবেদন শুনানি পিছিয়ে ২৪ আগস্ট নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ। আদালতে মীর কাসেমের পক্ষে সময় আবেদনের শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

গত ১৯ জুন ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন মীর কাসেম আলী।

মোট ৮৬ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি দেখিয়ে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়েছে। গত ৬ জুন মীর কাসেমের ২৪৪ পৃষ্ঠার ফাঁসির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

গত ৮ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ৬ জনকে নির্যাতন করে হত্যার দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড থেকে বেকসুর খালাস চেয়ে আপিল করেন মীর কাসেমের আইনজীবীরা। আপিলে তার খালাসের পক্ষে ১৮১টি যুক্তি তুলে ধরা হয়।

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা জসিম ও জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে হত্যার দায়ে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এর মধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে রায় প্রদান করা হয়।

এ ছাড়া ২ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে সাত বছর করে এবং ১৪ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। অপরদিকে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ থেকে মীর কাসেমকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

(ওএস/এএস/আগস্ট ২৪, ২০১৬)