ফজলুল বারী


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত স্বার্থে বা কারনে কখনো কারও প্রতি আক্রোশ ঝেড়েছেন, কাউকে হয়রানি করেছেন, এটি আমি জানিনা বা কারও মুখে শুনিনি। জমি-সম্পত্তি সংক্রান্ত কোন লোভ অথবা মন্ত্রণালয়ের দূর্নীতি এমন কোন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে তার শত্রুও দিতে পারবেনা। কিন্তু এর সবই আছে তার বেয়াই স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনীয়ার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে।

ফরিদপুরে একটি হিন্দু সম্পত্তি দখলকে কেন্দ্র করে গত বছর তার এই বেয়াই সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে গ্রেফতার করিয়ে হয়রানি করেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী, শহীদের সন্তান এই সাংবাদিককে তার এই রাজাকার বেয়াইর হয়রানি নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদের মুখে এক সকালে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী যাবার আগে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় তার জামিনে মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়। আক্রোশমূলক হয়রানির মামলাটি এখনও চলছে প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে।

ইঞ্জিনীয়ার মোশাররফ হোসেনের আক্রোশে ফরিদপুরের অনেকের মতো সর্বশেষ জেল খাটছেন ফরিদপুরের ছাত্রলীগ নেতা, মন্ত্রীর সাবেক এপিএস সত্যজিৎ মুখার্জি। মূলত মন্ত্রীর ভাগ্নি জামাইর সঙ্গে বিরোধে টিকতে না পেরে এর আগে সত্যজিৎ ভারতে পালিয়ে যান। তখন তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা দেয়া হয়। তখন সত্যজিতকে না পেয়ে গ্রেফতার করে হয়রানি করা হয় তার মুক্তিযোদ্ধা বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মানস মুখার্জিকে। একজন রাজাকারের হাতে একজন মুক্তিযোদ্ধার হয়রানি নিয়ে আমি এর আগে বিভিন্ন সময়ে লিখেছি। পরবর্তিতে তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়।

বোকা সত্যজিৎ কিছুদিন আগে দেশে এসেছিল। মন্ত্রী অথবা তার প্রভাবশালী ভাগ্নি জামাই সত্যজিতকে ডিবি পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে ফরিদপুর জেলে নিয়ে যান। সেখানে ২৬ আগষ্ট জেলখানার ভিতরে তার ওপর হামলা চালানো হয়। মন্ত্রীর প্রভাবশালী ভাগ্নি জামাইর দাপটে এর আগে জনশক্তি মন্ত্রণালয় ছিল দূর্নীতির আখড়া। বিদেশগামীদের টোকেনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিতে হতো। সৈয়দ আশরাফুল অফিসে যান না এই অভিযোগে তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বেয়াইকে সেখানকার মন্ত্রী করা হয়। কিন্তু বেয়াই সেখানকার মন্ত্রী হবার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে কিভাবে আজান দিয়ে দূর্নীতি চলছে এটি সর্বশেষ চট্টগ্রামের মেয়রের অভিযোগের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ওই অভিযোগটি আসার পর আমি অনুসন্ধান চালিয়ে জেনেছি এসবের নেতৃত্বেও আছেন মন্ত্রীর সেই ভাগ্নি জামাই! যিনি এক সময় প্রথম আলোয় কাজ করতেন। বয়স অনেক কম। কিন্তু এরমাঝে ফুলেফেঁপে দেশের বিশিষ্ট কলাগাছদের অন্যতম!

এখন আমার প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী তার বেয়াইর এসব দুষ্কর্ম জানেন কীনা! অথবা যিনি দেশের সব খবর রাখেন, এই খবরগুলোও তার জানার কথা। প্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ, সামগ্রিক বিষয়গুলো একটু তদন্ত করে ব্যবস্থা নিন। আপনার মেয়ে পুতুল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাতনি। অটিজম নিয়ে তার কাজকর্ম দেশেবিদেশে প্রশংসনীয়। তার বিরুদ্ধে কোথাও কারও কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু তার লোভী শ্বশুরের কারনে যে দাগগুলো পড়ছে তা নিয়ে সতর্ক না হলে একদিন এর দায়ভার প্রধানমন্ত্রীর ওপর চলে আসবে। কারন শেখ হাসিনার বেয়াই না হলে এই মানুষটির এমপি-মন্ত্রী হবার কোন যোগ্যতা ছিলোনা, সে সুযোগও হতোনা। প্লিজ প্রধানমন্ত্রী, প্লিজ।

লেখক : অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক।