পরিতোষ দাস : নেত্রকোণার মদন উপজেলার সরকারি ডাক বাংলো, মদন ইউনিয়ন পরিষদ ও মদন থানার প্রাঙ্গণের কয়েকটি গাছ এখন বিলুপ্তপ্রায় পানকৌড়ি পাখিদের নিরাপদ আবাস স্থলে পরিণত হয়েছে। আর এ পাখিগুলো দেখতে প্রতিদিন ভীড় জমাচ্ছেন পাখি প্রেমিকরা।

জানা গেছে, প্রতিবছর বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে প্রজননের উদ্দেশ্যে পাখিগুলো হাওড় থেকে এই স্থানে এসে বাসা বাঁধে। আবার অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে বাচ্চা নিয়ে হাওড়ে চলে যায়। সরজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে কয়েক’শ পাখি বাচ্চাসহ এখানে বসবাস করছে। বিলুপ্তপ্রায় পানকৌড়ির এই সমারোহ এলাকার অনেককেই আকৃষ্ট করছে। প্রতিদিন এলাকার শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ এবং পাখি প্রেমিকরা এসে পাখির এই সমারোহ দেখছেন। শৌখিন ফটোগ্রাফার এবং সাংবাদিকরা ছবি তুলছেন।

মদন উপজেলার পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মামুনুর রহমান জানান, পানকৌড়ি আমাদের দেশীয় একটি বিলুপ্তপ্রায় পাখি। এ পাখিগুলো সাধারণত হাওড়াঞ্চলে থাকে। কিন্তু হাওড়াঞ্চলে দিন দিন গাছপালা কমে যাবার কারণে বাধ্য হয়ে এরা লোকালয়ে চলে আসছে। প্রজননের জন্য এরা এই স্থানটিকে নিরাপদ ভেবে বেছে নিয়েছে। তাই পাখিগুলোর মানবসৃষ্ট কোন ক্ষতি যেন না হয়, সেদিকে সবারই লক্ষ্য রাখা উচিত। জীববৈচিত্র রক্ষার জন্য এ ধরণের পাখির গুরুত্ব অপরিসীম।

মদন থানার অফিসার ইনচার্জ মাজেদুর রহমান জানান, মানুষের নিরাপত্তার জন্য থানা, তবে থানায় এত অস্ত্র থাকার পরও পাখিগুলো থানাকে নিরাপদ ভেবেই গাছগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। পাখির বিষ্টা দুর্গন্ধ ছড়ায়। আমি রাস্তাগুলোকে প্রতিনিয়ত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করিয়ে রাখি। পাখিগুলোকে কেউ যাতে উত্ত্যক্ত করতে না পারে সেদিকে প্রতিনিয়তই নজর রাখি।

মদন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান শেখ মানিক জানান, পাখিগুলোর এখানে বিচরণ ও বসবাস করতে যাতে কোন ধরণের অসুবিধা না হয়, আমরা সেদিকে লক্ষ্য রাখছি। শিকারীদের আক্রমণ করতে দিচ্ছি না। পাখির বিষ্ঠার কারণে ডাকবাংলো ও ইউনিয়ন পরিষদ এলাকাটিতে কিছুটা পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। তবুও আমরা পাখির কলরবে অন্যরকম আনন্দ উপভোগ করছি।

ডাক বাংলোর কেয়ারটেকার ইছহাক মিয়া জানান, পানকৌড়ি পাখিগুলো হাওড় থেকে মাছ ধরে এনে বাচ্চাদের খাওয়ায়। মাঝে মাঝে এসব মাছ মাটিতে পরে যায়। আমার স্ত্রী এসব মাছ কুড়িয়ে ৪ কেজি শুঁটকি তৈরি করেছে।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক সমীর কুমার দাস জানান, এখানে পাখিগুলোর জন্য আরো কিছু লাগিয়ে জায়গাটিকে ‘পাখির নিরাপদ প্রজনন কেন্দ্র’ হিসাবে গড়ে তুললে বিলুপ্তপ্রায় পাখির সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। সরকারীভাবে এই পাখিগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।

ডাকবাংলোতে গিয়ে কথা হয় স্কুলছাত্রী অপুর সঙ্গে। সে জানান, ‘আমি প্রায়দিনই বিকালে পাখিগুলো দেখতে আসি। পাখির কিচিরমিচির শব্দ আমার খুবই ভাল লাগে’। শুধু অপুই নয়, এলাকার অনেক শিশু-কিশোরকেই বাড়তি আনন্দ জুগিয়েছে এই পাখিগুলো। প্রতিদিন তারা পাখি দেখতে ভীড় করছে সেখানে।

(পিডি/এএস/আগস্ট ২৯, ২০১৬)