রাজশাহী প্রতিনিধি : পদ্মা নদীতে পানি কিছুটা কমে যাওয়ায় অপাতত বিপদমুক্ত রাজশাহী নগরবাসী। তবে কিছুদিন আগে পদ্মা নদীতে পানি বিপদসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শহর রক্ষাকারী `টি` বাঁধে ভাঙন শুরু হয়। বর্তমানে নদীতে পানি কমলেও স্রোত প্রবল থাকায় বাঁধের ধস কিছুতেই বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছেনা।

যেকোনো কৌশলে বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

তবে দীর্ঘদিন ধরে শহর রক্ষাকারী ‘টি’ বাঁধের কোনো সংস্কার কাজ না হওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডে কয়েকজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে শ্রমিকদের দিয়ে বড় বড় সিমেন্টের ব্লক বাঁধের ভাঙন অংশের সামনে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু নদীতে পানির স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজে চরম বাধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে শ্রমিকদের। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

এ ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল হান্নান, রাজশাহী জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা “টি” বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। সেইসঙ্গে বাঁধ রক্ষায় সব ধরনের চেষ্টা চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের।

এসময় রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কয়েকজন শ্রমিক জানান, ভাঙনের শুরুতে জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু পরের দিনই পানির স্রােতে জিও ব্যাগ ভেসে যাওয়ায় আবারো ভাঙন দেখা দেয়। পরে শ্রমিকদের দিয়ে বড় বড় পাথর ভাঙন কবলিত অংশে ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চালানো হয়। পাথর ফেলার একদিন পরেই বাঁধের কিছুটা সামনের দিকে আবারো ভাঙন দেখা দেয়।

বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বড় বড় ব্লক বাঁধের সামনের অংশ ফেলা হচ্ছে। নৌকায় করে বাঁধের সামনে গিয়ে ব্লকগুলো ফেলা হলে বেশি উপকার পাওয়া যেত। কিন্তু তীব্র স্রােতের কারণে বাঁধের কাছে নৌকা ভেড়ানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তারা।

এদিকে, রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার শহিদুল ইসলাম জানান, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটা পর্যন্ত পানি কমেছে আট সেন্টিমিটার। এভাবে সামনের দিনগুলোতেও ধীরে ধীরে পানির মাত্রা কমতে থাকবে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মখলেসুর রহমান জানান, সব ধরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সর্বশেষ বাঁধের ভাঙন রক্ষায় সিমেন্টের ব্লক ফেলা হয়েছে। ফলে বর্তমানে বাঁধের ভাঙন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু নদীতে স্রােত বেশি থাকায় শেষ পর্যন্ত কী হবে তা নিশ্চত বলতে পারছি না।

তবে বাঁধ রক্ষায় তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। সামনের শুকনা মৌসুমে শহর রক্ষাকারী সব বাঁধগুলোর সংস্কার কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল হান্নান জানান, বাঁধ রক্ষায় চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন তিনি। হঠাৎ করে ভারত ফারাক্কার সব গেট খুলে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফারাক্কার অভিশাপ এখন শুধু আমরা না ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গও বুঝতে পেরেছে। আলোচনার মাধ্যমে ফারাক্কা বাঁধ সরিয়ে না ফেলার কোনো বিকল্প নেই।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে টি বাঁধ নিয়ে আপাতত শঙ্কা নেই বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট থেকে রাজশাহী ‘টি’ বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। এরপর থেকে টানা প্রতিরক্ষার কাজ চলছে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধে।

(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৬)