নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইলে জেলা প্রশাসন ও বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্টের আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী পালিত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় র‌্যালিসহকারে তাঁর নিজ বাড়ি নূর মোহাম্মদ নগর (মহিষখোলা) স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় এবং এরপর বাংলাদেশ পুলিশ নড়াইল কর্তৃক স্বশ্রদ্ধ সালাম দেয়া হয়। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো: হেলাল মাহমুদ শরীফ, জেলা পরিষদের প্রশাসক সুবাস চন্দ্র বোস, পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম, নড়াইল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাছিমা খাতুন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মোল্যা কওছার উদ্দিন, কাজী হাফিজুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরদার আব্দুল মজিদ, কলেজের শিক্ষক ও ছাত্র/ছাত্রীবৃন্দ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এর আগে সকাল ৭টা থেকে নড়াইলে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ স্মৃতি পাঠাগারে কোরনখানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটিতে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন নূর মোহাম্মদ। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।

নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন (বর্তমানে নূর মোহাম্মদনগর)। বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মা জেন্নাতুন্নেছা। মতান্তরে জেন্নাতা খানম। বাল্যকালেই তিনি বাবা-মাকে হারান। লেখাপড়া করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত।

১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর, বর্তমানে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ-বিজিবি) যোগদান করেন। দিনাজপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই বদলি হন যশোর সেক্টরে। পরবর্তীতে তিনি ল্যান্স নায়েক পদোন্নতি পান। মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধ করেন।

যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন নড়াইলের এ সাহসী সন্তান (নূর মোহাম্মদ)। এ সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর এস এ মঞ্জুর। এদের নেতৃত্বেও প্রাণ-পণ লড়েছেন নূর মোহাম্মদ। ৫ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলেও সহযোদ্ধাকে কাঁধে নিয়েই এলএমজি হাতে শত্রুপক্ষের সাথে যুদ্ধ করেছেন। গুলি ছুঁড়েছেন। হঠাৎ করে পাকবাহিনীর মর্টারের আঘাতে নূর মোহাম্মদের হাঁটু ভেঙ্গে যায়। তবুও গুলি চালান। শক্রমুক্ত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান।

(টিএআর/এএস/সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৬)