সাধু ও বাসন্তী রঙের চন্দ্রমল্লিকা

পানগুছিয়া নদীতে একটি যুবতীর লাশ ভেসে এসেছে। যুবতীর রূপ দেখে গাঁয়ের বৃদ্ধ-যুবকের সবার মুখে একই আহাজারি- 'আহারে এমন সুন্দর মাইয়েডা কিরাম করে মরলো? কেডা মারলো? কোন দুঃখে নদীতে ডুইবে এলি রে মা?'
সবাই মিলে ছুটে এল সাধু বাবার আস্তানায়। দীর্ঘ নিরবতা ভেঙে সাধু বাবা বলে, 'এ লাশের ভাগ্যে নদীর জল লেখা। পানগুছিয়ার বুকে মা জননীর ঠিকানা হয়েছে। তোরা কেন মিছেমিছি চিন্তা করছিস। যা আপন কাজ কর গে।'
এরপর আর কথা চলে না। অচেনা লাশের দায় কেউ নিতে চাইল না। যে যার ঘরে ফিরে গেল।
সন্ধ্যা নামে। রাত বাড়ে। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ ওঠে। পানগুছিয়া নদীর শান্ত বুকে চাঁদের আলো পড়ে।
সাধু বাবা প্রহর গুনছে। চাঁদ মাথার ওপর এলে তার অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে। আজকের রাতটি বড় মায়াবী। সাধু বাবা আকাশের দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইল।
সময় পেরিয়ে যায়। মাঝ রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে শিমুল গাছের নিঃসঙ্গ পেঁচাটি ডেকে ওঠে-একবার, দুইবার। হাসি ফুটে ওঠল সাধু বাবার মুখে। আস্তানার বাইরে এসে দাঁড়ালো সে। তারপর জোছনা ভেঙে পানগুছিয়া নদীর দিকে এগিয়ে যায় সাধু।
নির্জন, স্তব্ধ নদীর দুই পাড়। সাধু এসে দাঁড়াল। পরনের একমাত্র শাদা কাপড়ের টুকরাটি খুলে রেখে নদীতে নামে। ডুব দেয়। দীর্ঘ সময় পরে মাথা তুলল সাধু। তারপর বাঁশের খুটির সঙ্গে আটকে থাকা যুবতীর লাশটিকে তুলে এনে মাটিতে শুইয়ে দিল। গায়ের লোক মোটেও মিথ্যে বলেনি, যুবতী খুবই রূপবতী। শরীরে বাসন্তী রং। সাধু বাবা আকাশে মুখ তোলে। তারপর মুখ নামিয়ে যুবতীর মুখের দিকে চেয়ে বলে, 'পূর্ণিমার চান মাটিতে শুইয়া আছে।'
এ সময় সাধু বাবা দেখল- যুবতী চোখ মেলে তার দিকে চেয়ে আছে।
সাধু বাবা তড়াক করে উঠে দাঁড়ালো। ভয়ে শরীর অসাড়। তবু সাধু স্থির রইল। যুবতী তার ডান হাতটি সাধুর দিকে বাড়িয়ে বলল, 'নাও, আমাকে তোলো।'
সাধুর ভয় কেটে গেছে।
বাসন্তী রঙের যুবতীকে আস্তানায় নিয়ে এল। যুবতীকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল, 'জানো চন্দ্রমল্লিকা, তুমিই আমার জীবনে প্রথম নারী। আমি এতদিন তোমার অপেক্ষায় ছিলাম...!'
যুবতীর খিলখিল হাসিতে রাতের করিডোর ভাঙল । হচকচিয়ে গেল সাধু। যুবতীর মুখে অাঙুল চাপা দিয়ে- চোখ জোড়াও বন্ধ করে দেয়। ধীরে ধীরে যুবতীর শরীর থেকে ভেজা কাপড় খুলে ফেলে। সাধু যুবতীর ভেজা ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দিতে দিতে বলল, 'ও আমার বাসন্তী রঙের চন্দ্রমল্লিকা, তুমিই আমার প্রথম নারী, প্রথম শরীর...'
রাত ভোর হয়।
গায়ের সমস্ত লোক সাধু বাবার আস্তানার সামনে জড়ো হয়েছে। তারা হতবিহবল। যুবতীর লাশটিকে জড়িয়ে শুয়ে আছে সাধু বাবা। সাধু বাবার দেহেও প্রাণ নেই।