সিয়াম সারোয়ার জামিল : যান্ত্রিক জীবন থেকে কয়েকটি দিন দূরে চলে গেলে কেমন হয়! ঈদের ছুটিটা কাজে লাগিয়ে ঘুরে আসতে পারেন কোনো রিসোর্টে। অল্প সময়ের ছুটিতেও দুদণ্ড প্রকৃতির সান্নিধ্য পেলে মন্দ হয় না।

রাজধানীর আশপাশে প্রত্যন্ত এলাকায় গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক বেসরকারি রিসোর্ট। এখানে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা থাকে সবসময়। আর হাতের কাছে এমন সুন্দর, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে রাজধানীসহ দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে এখন জনপ্রিয় রিসোর্টগুলো। ঈদের সময় ভিড় থাকায় এখনই বুকিং দিয়ে দিতে পারেন আপনার পছন্দের রিসোর্টে।

পদ্মা রিসোর্ট : ছুটির দিন কিংবা ঈদের বন্ধ ছাড়া বুকিং না করে গেলেও সাধারণত কটেজ খালি পাওয়া যায়। বুকিংয়ের জন্য পদ্মা রিসোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইটে সব তথ্য পাওয়া যাবে। রিসোর্ট যদি শুধু দিনের বেলা ভাড়া করতে চান, তাহলে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত থাকতে পারবেন এবং সেক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ২৩০০ টাকা। আর যদি দিনসহ রাতও কাটাতে চান, তাহলে ভাড়া লাগবে ৩৪০০ টাকা। মোট ১৬টি কটেজ। এই কটেজগুলোই মূল আকর্ষণের জায়গা। নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা কটেজগুলোতে বেশ আরামদায়ক এবং নিরিবিলি সময় কাটাতে পারবেন। কটেজগুলোর নামকরণও করা হয়েছে বেশ সুন্দরভাবে। ১২টি কটেজের নাম রাখা হয়েছে বাংলা বছরের ১২টি মাসের নামানুসারে। আর বাকি চারটির নাম নেওয়া হয়েছে চারটি ঋতু থেকে। যদি ভরা বর্ষায় আসেন তাহলে কটেজগুলোর সামনে পানি টলটল করবে। এর ওপর কাঠের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করতে হয়। মনে হয় কটেজগুলো যেন ভেসে আছে পানিতে।

কটেজগুলোর মান খুব যে আধুনিক না, তবে আধুনিকতার একটা মেলবন্ধন করার চেষ্টা করা হয়েছে। কটেজটি দুই তলা বলা হলেও একে তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়। কটেজের প্রথম তলায় একটি খাটের সাথে কয়েকটি সোফা রাখা হয়েছে গল্প-আড্ডা করার জন্য। এর পাশেই কয়েকটি সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে ওপরে উঠলেই দ্বিতীয় স্তরে পৌঁছে যাবেন। সেখানে বাথরুম ছাড়াও একটি বিশাল বারান্দার মতো রয়েছে, যেখান থেকে একেবারে সরাসরি নদী দেখা যায়। নদীর নির্মল বাতাস আর নদীর জলে ভরা জোছনার আলো উপভোগ করতে চাইলে এই জায়গার জুড়ি নেই। আর একদম ওপরের স্তরে আছে শোয়ার জন্য দুটি সিঙ্গেল বেড, একটি ওয়ারড্রোব এবং একটি সেন্টার টেবিল। ওপরে ছনের ছাউনি দিয়ে একটু গ্রামীণ পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে। বেশ আরাম করেই সময় কাটানো সম্ভব এখানে। তবে আটজনের বেশি এক কটেজে থাকা যাবে না।

যেভাবে যাবেন : পদ্মা রিসোর্ট ঢাকা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি অবস্থান করছে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার লৌহজং থানার পাশে পদ্মার বুকে। যদি নিজের প্রাইভেট গাড়ি থাকে তাহলে যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে। আর বাস দিয়ে গেলে প্রথমে গুলিস্তান যেতে হবে। সেখান থেকে গাংচিল পরিবহনে করে সরাসরি লৌহজংয়ের আসতে পারবেন। ভাড়া নেবে ৭০টাকা। অথবা মাওয়া ঘাটে নেমে তারপর লৌহজং আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে গুলিস্তান থেকে বাসের অভাব হবে না। নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি পার্ক করতে চাইলে থানার পাশেই জায়গা রয়েছে। দরকার হলে থানার লোকজনকে একটু জানিয়ে নিন। না হয় রিসোর্টের ম্যানেজারকে বলুন।

নক্ষত্রবাড়ি : নক্ষত্রবাড়ি প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় নাম। প্রকৃতিপ্রেমীদের সব সুযোগ-সুবিধাসহ ঢাকার খুব কাছে এই রিসোর্টের মালিক অভিনেতা তৌকীর আহমেদ ও বিপাশা হায়াত দম্পতি। তারা ১৪ বিঘা জমির ওপর ‘নক্ষত্রবাড়ি’ নির্মাণ করেন। ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, পুকুরের পানির ওপর কাঠ-বাঁশের সমন্বয়ে নির্মিত ১১টি কটেজ। যার বারান্দায় বসে রাতের জোছনা বা পূর্ণিমা দেখা যায়। শুধু তাই নয়, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে, অতি সৌন্দর্যের কটেজগুলো। এখানে বসে শোনা যায় ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, জোনাকির আলো ছড়ানো টিপ টিপ বাতি জ্বলা-নিভা। পুকুরের পশ্চিম পাশের পানির ওপর গজারি গাছ দিয়ে নির্মিত এসব কটেজ। কটেজগুলোর ওপর রয়েছে ছনের ছাউনি। পুকুরের পূর্বপাশে ব্রিটিশ আমলের দরজা-জানালা সংবলিত একটি ঘর রয়েছে। রয়েছে সুইমিং পুল, বিল্ডিং কটেজ, কনফারেন্স রুম ও খাবার হোটেল, গাছ-গাছালি। নক্ষত্রবাড়ি কর্তৃপক্ষ সবসময়ই অতিথিদের সব ধরনের সেবা দেওয়ার চেষ্টায় থাকে। এখানে আগতদের বেশির ভাগই প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে চাইলে নক্ষত্রবাড়ি চলে আসতে পারেন। পানির ওপর কটেজগুলো ২৪ ঘণ্টার ভাড়া ১০ হাজার ৭৫২ টাকা। বিল্ডিং কটেজের ভাড়া কাপড়বেড ৮ হাজার ২২২ টাকা এবং টু-ইন বেড ৬ হাজার ৯৫৮ টাকা। দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫০০ টাকা।

যেভাবে যাবেন : নিজস্ব পরিবহন বা যাত্রীবাহী বাসে করে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে ঢাকা-কাপাসিয়া মহাসড়কের রাজাবাড়ী বাজারে নামতে হবে। পরে রাজাবাড়ী বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে চিনাশুখানিয়া গ্রামের বাঙালপাড়া এলাকায় নক্ষত্রবাড়ির অবস্থান, যা কাপাসিয়া-শ্রীপুরের সীমানাবেস্টিত এলাকা।

এলেঙ্গা রিসোর্ট : এলেঙ্গা রিসোর্ট যাত্রা শুরু করে ২০০৮ সালে। টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি উপজেলার এলেঙ্গা এলাকায় এই রিসোর্ট প্রতিষ্ঠিত। রিসোর্টের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী। রাজধানী ঢাকা থেকে গাড়িযোগে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে রিসোর্টে পৌঁছতে। টাঙ্গাইল শহর থেকে সাত কিলোমিটার উত্তরে এলেঙ্গায় গড়ে ওঠেছে ১৫৬.৬৫ হেক্টর জুড়ে এই রিসোর্ট। চারপাশজুড়ে বিভিন্ন গাছের সারি। একটা ছায়াঢাকা গ্রামীণ পরিবেশে অবস্থিত। পাঁচটি ভিআইপি এসি স্যুট ছাড়াও আছে ১০টি এসি ডিলাক্স স্যুট, ১৬টি এসি কক্ষ, পাঁচটি পিকনিক স্পট, সভাকক্ষ, ছোট জাদুঘর ও প্রশিক্ষণ কক্ষ। খেলাধুলার জন্য রয়েছে টেনিস, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন কোর্ট। বাড়তি সুযোগ হিসেবে রয়েছে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। কিডস রুম ছাড়াও রয়েছে ঘোড়ায় চড়ার ব্যবস্থা ও হেলথ ক্লাব। বিভিন্ন ধরনের দেশি খাবারের পাশাপাশি রয়েছে চিনা, ভারতীয় ও কন্টিনেন্টাল খাবার। নৌ ভ্রমণের জন্য রয়েছে ট্রলার, দেশিনৌকা ও স্পিডবোড। কাছেই টাঙ্গাইলের তাঁতিবাজার। ইচ্ছে করলে সেখান থেকে কেনাকাটাও করতে পারেন কোনো পর্যটক। এছাড়া রিসোর্টের নিজস্ব গাড়িতে বেড়ানো যায় করটিয়া জমিদারবাড়ি, মধুপুরের গড় আর ধনবাড়ির জমিদারবাড়ি। মোট ৪০টি রুম আছে। ৩২টি রুমে এসি এবং ৮টি রুম নন এসি। রিসোর্টের ভিতরে দুইটি সুইমিংপুল, ১টি জিম হেলথ ক্লাব, ১টি ম্যাসেজ পার্লার, ১টি রেস্টুরেন্ট, ১টি বেকারি, ১টি বার ও ২টি ডিসকোর ব্যবস্থা আছে। আউটডোরে ফুটবল, ক্রিকেট, ক্যারাম, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, মিউজিক্যাল চেয়ার, হাড়িভাঙ্গা খেলার সুবিধাও রয়েছে। যেকোনো সময়ে রুম বুকিং করা যায়। এর জন্য ভাড়ার ৪০ শতাংশ টাকা অগ্রিম জমা দিতে হয়। বুকিংয়ের ক্ষেত্রে দেশি ও বিদেশি উভয়ের বেলায় একই নিয়ম অনুসরণ করা হয়। বুকিংয়ে সময় বিদেশিদের জন্য পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দিতে হয়। এসি ৪ বেডের কটেজের ভাড়া ১২,০০০ টাকা। এসিসহ ৩ বেডের কটেজের ভাড়া ১১,০০০ টাকা। এসিসহ ২ বেডের কটেজের ভাড়া ৯,০০০ টাকা। এসিসহ ডিলাক্স রুমের (দুই জন) ভাড়া ৩,৬০০ টাকা। এসিসহ ডিলাক্স রুমের (তিন জন) ভাড়া ৪,২০০ টাকা। এসিসহ ডিলাক্স রুমের (একজন) ভাড়া ৩,০০০ টাকা।

যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে দুরত্ব ১১০ কিলোমিটার। গাবতলী থেকে দুই ঘণ্টাতেই পৌঁছে যাবেন। জনপ্রতি বাস ভাড়া ১৫০ টাকা।

ছুটি : ছুটি রিসোর্টটি ৫৪ বিঘা জমির ওপরে। ছনের ঘর, রেগুলার কটেজ, বার্ড হাউস, মাছ ধরার ব্যবস্থা, হার্বাল গার্ডেন, বিষমুক্ত ফসল, দেশীয় ফল, সবজি, ফুলের বাগান, দুটি খেলার মাঠ, আধুনিক রেস্টুরেন্ট, দুটি পিকনিক স্পট, গ্রামীণ পিঠাঘর, বাচ্চাদের জন্য কিডস জোনসহ পাখির কলরব, সন্ধ্যায় শিয়ালের হাঁক, বিরল প্রজাতির বাঁদুড়, জোনাকি পোকার মিছিল ও আতশবাজি, ঝিঁঝিঁ পোকার হৈচৈ। রয়েছে নৌ-ভ্রমণের ব্যবস্থা, বিরল প্রজাতির সংরক্ষিত বৃক্ষের বনে রয়েছে টানানো তাঁবু। আর ভরা পূর্ণিমা হলে তো কথাই নেই। রিসোর্টের নিয়ম অনুসারে চাঁদনি রাতে বিদ্যুতের আলো জ্বালানো হয় না। ভরা পূর্ণিমা এবং রিমঝিম বর্ষা উপভোগ করার জন্য এই ছুটিই হচ্ছে অন্যতম রিসোর্ট। এখানে আগত দর্শনার্থীদের নানা ধরনের মৌসুমি ফল সম্পূর্ণ ফ্রি দেওয়া হয়। অতিথিদের জন্য সকালে পরিবেশন করা হয় চালের নরম রুটি অথবা চিতই পিঠা, সঙ্গে দেশি নানা প্রকার সবজি, ডাল ভুনা ও মুরগির গোশত। একবারে কাছ থেকে বিল-ঝিলের আনন্দ উপভোগ করা যায় এখানে। ভেতরের বড় বড় ৩টি লেক দেখলে মনে হয় যেন একেকটি বিশালাকার বিল-ঝিল। আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডিমিন্টন খেলার মাঠ রয়েছে। এসি, নন-এসি ২১টি কটেজ রয়েছে। এখানে দুই ধরনের থাকার ব্যবস্থা আছে। পরিপূর্ণ গ্রামীণ আমেজের প্রাণময় লোকজ বসবাস অথবা ইটকাঠ বালুর কটেজ। রয়েছে সুইমিং পুল। রয়েছে দুটি কনফারেন্স রুম। খাবার হোটেলে বাংলা, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, থাই, কন্টিনেন্টাল খাবার পাওয়া যায়। কটেজগুলো ২৪ ঘণ্টার ভাড়া ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। কনফারেন্স রুম ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং পিকনিকের জন্য ১০০ থেকে ২০০ জনের ভাড়া ৯০ হাজার টাকা।

যেভাবে যাবেন : প্রথমে গাজীপুরের চৌরাস্তায় আসতে হবে। সেখান থেকে নিজস্ব পরিবহন বা যাত্রীবাহী বাসে করে গাজীপুর ডিসি অফিসের সামনে (রাজবাড়ী)। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে আমতলী বাজার থেকে একটু উত্তরে সুকুন্দী ছুটি রিসোর্টের অবস্থান।

ড্রিম স্কয়ার : মাওনার অজহিরচালা গ্রামে ১২০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট। এর প্রধান আকর্ষণ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সবুজের সমারোহ। ড্রিম স্কয়ারের আকর্ষণীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে তেলের ঘানি, ডেইরি ফার্ম, মৎস্য হ্যাচারি, কম্পোস্ট সার প্লান্ট, বায়োগ্যাস প্লান্ট। ড্রিম স্কয়ারের আলাদা বৈশিষ্ট্য হলো রেস্টুরেন্টের ভেতরেই সবজির চাষ। রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা কয়েকটি লেক। রয়েছে ১৬টি ছোট-বড় পুকুর। ভেতরে সবুজে বেষ্টিত বাগানের মাঝখানে রয়েছে জাতীয় মাছ ইলিশের দুটি প্রতিকৃতি। আর বিভিন্ন গাছে রয়েছে বানরের প্রতিকৃতি। এখানে নানান প্রজাতির পাখির অভয়াশ্রম রয়েছে। ড্রিম স্কয়ারে প্রতি বছর শীতের সময় অতিথি পাখির মেলা বসে। আছে একটি রেস্টুরেন্ট, ওয়াই-ফাই সুবিধা। এখানে সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা। ২০টি উন্নতমানের কটেজ রয়েছে। টু-ইন কেবিন, টেরাস, অনার্স, গ্রিন, ইকো এমন বিভিন্ন মানের কটেজ রয়েছে। পিকনিক বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ৫০ জনের জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা। ডিলাক্স কটেজ ভাড়া ৪০ হাজার আর রেগুলার কটেজ ভাড়া ৬ হাজার ৩২৫ টাকা।

যেভাবে যাবেন : নিজস্ব পরিবহন বা যাত্রীবাহি বাসে ঢাকা থেকে গাজীপুর হয়ে মাওনা যেতে হবে। মাওনা থেকে পশ্চিমের রাস্তা দিয়ে একটু সামনে গিয়ে উত্তরে সাড়ে ৫ কিলোমিটার যেতে হবে। সেখানে গেলেই চোখে পড়বে ড্রীম স্কয়ার। গাজীপুর জেলার সর্ব উত্তরে অবস্থিত।

ড্রিম হলিডে : ঢাকার পার্শ্ববর্তী নরসিংদিতে ২০১১ সালে গড়ে উঠে এই পার্ক। ছোটবড় সবার জন্যই রয়েছে আলাদা সব রাইড। ঢাকা থেকে যেতে সময় লাগে মাত্র একঘণ্টা। ৬০ একর জমির ওপর নির্মিত এ পার্কে রয়েছে নাগেট ক্যাসেল, এয়ার বাইসাইকেল, অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ইমু পাখি, মায়াবি স্পট, কৃত্রিম অভয়ারণ্য, ডুপ্লেক্স কটেজ, পার্কে শিশু-কিশোরদের জন্য একাধিক রাইডস, সুবিশাল লেক, হংসরাজ প্যাডেল ও জেট ফাইটার বোট, নয়নাভিরাম ক্যানেল, রকিং হর্স, ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা, নিজস্ব কটেজ ও সুপ্রশস্ত বাংলো। ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য ৩০০ জনের বেশি হলে ভাড়া গুনতে হবে ৮০ হাজার টাকা। ৫০০ জনের বেশি হলে ভাড়া দিতে হবে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে কার্যদিবসে ভাড়া কিছুটা কম। ৩০০ জনের বেশি হলে ভাড়া দিতে হবে ৭৫ হাজার টাকা। ৫০০ জনের বেশি হলে ভাড়া দিতে হবে ৯০ হাজার টাকা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ২ রুম সংবলিত একটি বাংলোর ব্যবস্থা আছে। দোতলা বাংলোর রয়েছে।

যেভাবে যাবেন : কমলাপুর, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে যাওয়া যায়। ৩০ মিনিট পরপর বাস পাবেন। আন্তঃনগর এগারসিন্দুর ও মহানগর গোধূলি ট্রেনেও যেতে পারেন। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রামের যেকোনো লোকাল ট্রেনে যাওয়া যায়। আন্তঃনগর ট্রেনে গেলে নরসিংদী স্টেশনে নেমে সেখান থেকে বাস অথবা সিএনজি চালিত অটোরিকশায় যেতে হবে। আর লোকাল ট্রেনে গেলে নরসিংদী স্টেশন ছাড়া ঘোড়াশাল স্টেশনেও নামতে পারেন। সেখান থেকে বাসে যেতে হবে।

রাঙামাটি : রাঙামাটি নাম শুনে হয়তো অনেকের মনে হবে এটি পার্বত্য এলাকার রাঙামাটি জেলা। আসলে এই রাঙামাটি সেই রাঙামাটি নয়, এটি ঢাকার পাশে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বেসরকারি একটি রিসোর্টের নাম। রাঙামাটি নাম রাখা হলেও এখানে রাঙামাটির মতো পাহাড়-পর্বত নেই। প্রকৃতি-বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।

কালিয়াকৈরের সিনাবহ এলাকার ভাওয়াল শালবনের ভিতর বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে রাঙামাটি রিসোর্ট। ৬০ বিঘা জমির ওপর রয়েছে বড় বড় ফুলের বাগান। ৭টি কটেজ, একটি সুইমিং ও লেক, শিশুদের থ্রি-ডি বিনোদনের ব্যবস্থা, কনফারেন্স রুম ও খাবার হোটেল। বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, ঔষধি, বনজ গাছের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে রাঙামাটি রিসোর্ট। ভিতরে একটি লেক রয়েছে। এই লেকের মাঝে একটি কাঠ-বাঁশের ঝুলন্ত সাঁকো রয়েছে। কটেজের প্রতি কক্ষ ২৪ ঘণ্টার ভাড়া ৭ থেকে ১২ হাজার টাকা। পিকনিক বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ভাড়া ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা।

যেভাবে যাবেন : নিজস্ব পরিবহন বা যাত্রীবাহী বাসে করে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা মোড়ে নামতে হবে। পরে চন্দ্রা মোড় থেকে সাড়ে ৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বদিকে সিনাবহ গ্রামে রাঙামাটির অবস্থান।

যমুনা রিসোর্ট : যমুনা রিসোর্ট ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রিসোর্টের ভেতরে সুইমিংপুল, জিম, হেলথ ক্লাব, বেকারি, স্যুভেনির শপ, ফরেন মানি এক্সচেঞ্জ এবং ইনডোর ও আউটডোর গেমসের ব্যবস্থা রয়েছে। আউটডোরে ফুটবল, ক্রিকেট এবং ইনডোরে ব্যাডমিন্টন, হকি ও দাবা খেলার সুবিধা রয়েছে। পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে আবাসন সুবিধা। ডিলাক্স এক্সিকিউটিভ সুইট, রয়েল সুইট, ২ বেডরুম কটেজ, ৩ বেডরুম কটেজ, এক্সট্রা বেড ও ডরমিটরি সুবিধা রয়েছে। প্রত্যেকটি কক্ষে এসি, টিভি, ফ্রিজ, লার্জ বাথ ও ট্যাপ, গরম ও ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা রয়েছে। রিসোর্টের ভেতরে রয়েছে ১৫০ জন ধারণক্ষমতার রেস্টুরেন্ট। হলরুম রয়েছে দুটি। যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র। প্রত্যেকটির ধারণক্ষমতা প্রায় ২০০ জন।

যেভাবে যাবেন : যমুনা রিসোর্টে কয়েকভাবে যাওয়া যায়। নিজের গাড়ি, বাস অথবা ট্রেনে। ঢাকার গাবতলী ও মহাখালী থেকে টাঙ্গাইলের বাসে গেলে তুলনামূলক ভাড়া কম লাগে। কমলাপুর অথবা বিমানবন্দর থেকে ট্রেনেও যাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সেতুর আগের স্টেশনে নামতে হবে। এরপর হেঁটে অথবা রিকশাযোগে কয়েক মিনিটের পথ। তবে অবশ্যই সবার জানা দরকার যে এই রিসোর্টটি থ্রি স্টার মর্যাদার।

আনন্দ : গাজীপুরের কালিয়াকৈরের পরিচিত রিসোর্ট হলো ‘আনন্দ’। শুধু চোখে দেখে নয়, বরং বিভিন্ন খেলার রাইডে চড়ে আনন্দের দেখা মিলবে এখানে। বিলঘেঁষা এই আনন্দ রিসোর্টের বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে সরাসরি বিল থেকে মাছ শিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। ছিপ ফেলে মাছের জন্য অপেক্ষায় কাটবে সময়। ৪২ বিঘা উঁচু-নিচু টিলা ভূমিতে গড়ে তোলা হয় আনন্দ রিসোর্ট। কালিয়াকৈরের সিনাবহের তালতলি এলাকায় এর অবস্থান। বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ গাছ ও ৬টি কটেজ রয়েছে এখানে। কটেজগুলোর প্রতিকক্ষ ২৪ ঘণ্টার ভাড়া ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। পিকনিক বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া পড়বে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।

যেভাবে যাবেন : নিজস্ব পরিবহন বা যাত্রীবাহী বাসে করে গাজীপুরের চৌরাস্তা হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উঠতে হবে। এই মহাসড়ক ধরে সফিপুর বাজার যেতে হবে। সেখান থেকে ২ কিলোমিটার উত্তরে সিনাবহ বাজারের পাশে এই রিসোর্টের অবস্থান।

(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৬)