বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : সেলিনা বেগমের বয়স ১৬ বছর। কিন্তু অজানা কারণে এখনো সে তিন-চার বছরের শিশুর বয়সে আটকে আছে। দারিদ্র্যের কারণে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি পরিবারের পক্ষে। এখনো তার চাওয়া, হাসি ও অঙ্গভঙ্গি সবই শিশুর মতো। বাক্-প্রতিবন্ধী এই শিশুটি অপরিচিত কাউকে দেখলেই হাসতে থাকে। সেলিনা বেগম মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের হিনাইনগর গ্রামের মৃত রকিব আলীর কনিষ্ঠ কন্যা। 

সেলিনার পরিবার, এলাকাবাসী ও সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। ২ বছর বয়সের সময়ও সে কথা বলা, উঠে দাঁড়াতে না পারায় চিন্তায় ফেলে দেয় বাবা-মাকে। এরপর বাবা-মা মেয়ের কথা বলতে ও দাঁড়াতে না পারায় নিয়ে যান ডাক্তারের কাছে। কিন্তু চিকিৎসায় কোন উন্নতি হয়নি। অভাব অনটনের সংসারে একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেও আর যাওয়া হয়নি।

এর মধ্যে তিন বছর পূর্বে রকিব আলী মারা গেলে অসহায় হয়ে পড়ে সেলিনার পরিবার। ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাবে মেয়েটির আর চিকিৎসা করাতে পারেননি মা আছিয়া বেগম। ২০১৩ সালে সেলিনাকে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে নিবন্ধন করে পরিচয়পত্র দেয় সমাজসেবা কার্যালয়। এখন সে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। রকিব আলী আলী ও আছিয়া বেগমের ৩ ছেলে ও ৬ মেয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ সেলিনা।

সেলিনার মা আছিয়া বেগম জানান, বড়ছেলে বিয়ে করে চলে গেছে অন্যত্র। ৫ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ২ ছেলেকে পরিবার চালাতে পড়ালেখা বাদ দিয়ে পেটের দায়ে কাজে যেতে হয়েছে। সেলিনার ১ বছরের বড় ভাই সাহেদ আহমদের বাইপাস অপারেশন হয়েছে গত বছর। এই অসহায়ত্বের মাঝে আর চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি সেলিনার। শারীরিকভাবে একা চলতে অক্ষম এই মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন মমতাময়ী মা আছিয়া। মায়ের ধারণা সঠিক চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো তার মেয়েটি সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে ওঠতে পারে। মেয়েটির চিকিৎসা ও সাহায়্যের জন্য সরকারসহ বিভিন্ন মহলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহমদ হোসেন বলেছেন, আমি খোঁজ নিয়েছি। সে জন্ম প্রতিবন্ধী। তাঁর যখন যে চিকিৎসার প্রয়োজন আমরা করবো।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, ও একটা অটিস্টিকি বেবি। প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। আমাদের যা যা সুবিধা আছে সবই দেওয়া হবে। তবে ওর প্রয়োজন চিকিৎসা। ঢাকায় পাঠাতে হবে। এর জন্য বিত্তবান ও প্রবাসীদের এগিয়ে আসা দরকার। ও নিজের মতো চলতে না পারলে মায়ের অনুপস্থিতিতে আরও অসহায় হয়ে পড়বে।

(এলএস/এএস/সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৬)