কুৎসিত লোকটা

অফিস থেকে যখন বের হচ্ছিলাম তখন রাত প্রায় নয়টা। আজকাল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। আট ঘণ্টার ডিউটি বারো ঘণ্টাকেও ছাড়িয়ে গেছে। তিন তলার সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামার সময় তপন দা’র সাথে দেখা। মুচকি হেসে তপন দা বলল,
-ছুটি হয়েছে আপা? বললাম -হ্যাঁ।
-আমার এখনও ঘণ্টা খানেক লাগবে। বলে তপন দা উপরে উঠে গেলো।

রাত বেশি হলে আমি বেসমেন্ট পার্কিং লট দিয়ে বের হই। দিনের বেলা এখানে বেশ কোলাহল থাকলেও সন্ধ্যা নামতেই জায়গাটা একেবারে নির্জন হয়ে যায়। একজন দারোয়ান অবশ্য প্রধান ফটকের সামনে সব সময় বসে থাকে। এই দারোয়ানটা নতুন এসেছে। আগের জন সন্ধ্যা লাগতেই বসে বসে ঘুমাত। একে এখনও ঘুমাতে দেখিনি। কাজে কর্মেও ভালো। অন্য দিনগুলোতে বেসমেন্টে দু’একজন ওয়ার্কারদের সাথে দেখা হয় কিন্তু আজ কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কাল মে দিবসের ছুটি তাই বুঝি এরা আজ একটু আগেই কর্মস্থল ত্যাগ করেছে। কোথাও কোনো সারা নেই। অফিসের সামনের ফটক দিয়ে বের হলেই সবচেয়ে বেশি সুবিধা হতো। সরাসরি রাস্তায় গিয়ে পড়া যেতো। চটজলদি রিকশা অথবা নম্বর লেখা বাসগুলো ধরে ফেলা যেতো। কিন্তু রাত আটটা বাজলেই অফিসের সামনের কম্পাউন্ডে দু’টো কুকুর ছেড়ে দেওয়া হয়। তপন দা বলেছিল, ওগুলো হাউন্ড টাইপের কুকুর। দিব্যি পাহারার কাজ করে। চোর,ছ্যাঁচড়,বদমাশ যাই হোক। দেয়াল টপকে অফিস কম্পাউন্ডে কেউ ঢুকলে তার আর রক্ষা নেই। ধরতে পারলে একেবারে জ্যন্ত অবস্থাতেই ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে।
তিন তলার বারান্দা থেকে কুকুর দু’টোকে দেখেছি কয়েকবার। কুকুর অত বড় হতে পারে! আর কী ভয়াবহ গর্জন! পিলে একেবারে চমকে যায়।
হঠাৎ কেমন যেন একটা শব্দ হলো। ঘড়-ঘড় জাতীয় শব্দ। আমি থমকে দাঁড়ালাম। অজানা ভয়ে বুকের মধ্যে কেমন করে উঠল আমার। হাত দু’টোকে বুকের কাছে ধরে চারিদিকটা দেখলাম একবার। পার্কিং লটের বাতিগুলোর স্বল্প আলোয় খুব বেশি কিছু দেখা গেলো না। সামনেই প্রধান ফটক। দারোয়ানকে পাব ভেবে দ্রুত পায়ে প্রধান ফটকের সামনে এসে পড়লাম। কিন্তু দারোয়ান কই? টুলটা যে খালি। বুকের ভেতরটা কেমন করতে শুরু করেছে। বেসমেন্টের পাশেই কারখানা থাকায় প্রধান রাস্তায় বের হবার জন্য এখানে সরু একটি গলি আছে। গলির দিকে তাকিয়ে দেখলাম কাউকে দেখা যায় কী না। নাহ্, কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এমন করে রাত হলে দারোয়ান আমাকে পথটুকু চলতে সাহায্য করে। কিন্তু দারোয়ান গেল কোথায়? তাকে ডাকতে গিয়ে বুঝলাম আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। তবু চেষ্টা করে তাকে ডাকলাম,
-দারোয়ান, দারোয়ান, দারোয়ান।
কোনো সারা এলো না। মিনিট দুয়েক এভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম। দারোয়ান এলো না। পার্কিং লট থেকে আবার সেই ঘড়-ঘড় শব্দটা শোনা গেলো বলে মনে হলো। মনকে বোঝালাম কুকুর দুটোর কথা মনে ভেবেছিলাম বলেই হয়তো এমন হচ্ছে। অনিচ্ছা স্বত্বেও পার্কিং লটের দিকে একবার তাকালাম। হঠাৎ ছায়ার মতো মানুষের কালো একটা অবয়ব দেখলাম বলে মনে হলো। মনের মধ্যে থেকে বলে উঠল, দারোয়ান আসছে। অবয়বটা একবার আলোর নিচে এসেই আবার সটকে পড়ল। ঐ এক মুহূর্তেই তার চেহারাটা দেখলাম। ওটা দারোয়ান নয়। অগোছালো দাড়িতে কালো কুৎসিত একখানা মুখ। বুকের মধ্যে কাঁপুনি দিয়ে প্রচণ্ড একটা ভয় আমার সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ল। পা দু’টোর উপর ভর করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। অজানা শঙ্কায় পা দু’টো প্রচন্ড ভাবে কাঁপতে শুরু করেছে। ভীত গলায় বললাম,
-কে? কে ওখানে? কোনো সারা এলো না। একবার ভাবলাম দৌড়ে গলির পথটা অতিক্রম করে রাস্তায় গিয়ে পড়ি। কিন্তু পা দু’টোর উপর এখন আর ভরসা হচ্ছে না। দারোয়ান নেই তাই এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটাও নিরাপদ বলে মনে হচ্ছে না। এখান থেকে গলির পথটা পারি দিতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ মিনিট। একলা গলির মধ্যে লোকটা যদি আমাকে ধরে ফেলে? কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটাও তো নিরাপদ নয়। অফিসে ফিরে যেতে হলেও পার্কিং লটটা পারি দিতে হবে। কি করব আমি? দু’হাতে মুখটাকে একবার রগড়ে নিলাম। অফিস থেকে বের হয়েছি প্রায় পনেরো মিনিট হতে চলল। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না। চারদিকটা একবার দেখে নিয়ে গলির দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। সুনসান গলি। ক্ষাণিক দুরে দুরে ল্যাম্প পোস্ট গুলো অসহায় ভাবে অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথম ল্যাম্প-পোস্টের নিচে গিয়ে একবার পেছন ফিরে তাকালাম। ও-কি! কুৎসিত লোকটা আমার পিছু নিয়েছে। হাঁটার গতি বাড়ালাম। পা দু’টো একেবারেই চলতে চাচ্ছে না। স্বপ্নে যেমন পালানো যায় না তেমন আমিও যেন ভয়াবহ কোনো স্বপ্নের মধ্যে আটকে গেছি। আরো একটি ল্যাম্প পোস্ট পেয়ে পেছন ফিরে তাকালাম। না, এবার আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘ একটা শ্বাস নিলাম। মনে হলো কত যুগ পরে বুক ভরে শ্বাস নিলাম। এবার হাঁটার গতিটা বারল। সামনের ল্যাম্প-পোস্টের পাশে পরিত্যক্ত একটা ওয়ার্কশপ আছে। এমনি করে বাড়ি ফিরতে রাত হলে এখান দিয়ে যেতে বেশ ভয় করতো। ভয়ে ভয়ে পরিত্যক্ত ওয়ার্কশপের দিকে না তাকিয়ে ল্যাম্প-পোস্টটা পারি দিচ্ছিলাম ঠিক তখন হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। আমাকে কেন্দ্র করে জমাট বাঁধা গভীর অন্ধকার চারিদিক থেকে যেন ধেয়ে এলো। কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। এমন অন্ধকার এক মুহূর্তেই মানুষকে দিশেহারা করে ফেলে। সামনে যাব না পেছনে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এমন কালো অন্ধকার বোধ করি আমার জীবনে আর কোনোদিন আসেনি। একবার মনে হল, আমি বুঝি অন্ধ হয়ে গেছি। দুই হাতে চোখ দু’টোকে রগড়ে নিয়ে চারিদিকটা দেখতে চেষ্টা করলাম। ক্ষাণিক বাদে অন্ধকার ভেঙে হালকা ভাবে ছায়া-ছায়া আলো ফুটে উঠলো। আলোটা আসছে গলির উঁচু দেয়ালের ওপার থেকে। বুঝলাম দূরে রাস্তার গাড়িগুলোর আলো আকাশে যে আলোর ফোয়ারা সৃষ্টি করে তার ক্ষাণিক ছটা হালকা ভাবে এদিকটায় এসে পড়েছে। আমি পেছন ফিরে একবার দেখবার চেষ্টা করলাম সেই কুৎসিত লোকটা আমাকে এখনও অনুসরণ করছে কিনা। নাহ্ কাউকে দেখা গেলো না। গলির পথটা অনুমান করে সামনের দিকে হাঁটতে যাব হঠাৎ কীশের সাথে যেন একটা ধাক্কা খেলাম। ভয়ে চিৎকার করে চার পা পেছনে ফিরে এলাম আমি। কুৎসিত লোকটা! হালকা আলোয় দেখলাম লোকটি তার পকেটে হাত ঢুকিয়েছে। বুঝলাম সে নিশ্চয় কোনো অস্ত্র বের করবে। কিন্তু মূর্তিটি তার মোবাইল ফোনের আলোটা জ্বালিয়ে বলল, -ম্যাডাম নাকি?
প্রায় কান্নার স্বরেই বললাম,
-হ্যাঁ, এতক্ষণ কোথায় ছিলেন আপনি? গেটে আপনাকে না পেয়ে খুব ভয় পেয়েছি আমি।
-কোনো ভয় নেই ম্যাডাম, কোনো ভয় নেই। গলির মাথায় একটা সাপ দেখা গেছে, তাই দেখতে গিয়েছিলাম। আপনি ভয় পাবেন না। বললাম,
-চলুন, আমাকে রাস্তায় পৌঁছে দিন।
-সেতো এখন হবে না ম্যাডাম।
-কেন? কেন হবে না?
-বিদ্যুৎ চলে গেছে। গলি অন্ধকার। তার উপর আমার টর্চটাও কাজ করছে না। সাপ যেহেতু দেখা গেছে তাই সাপে কাঁটার ভয়ও আছে। বাতি আসুক, আপনাকে এগিয়ে দেবো। চলুন ততক্ষণ আমরা ওয়ার্কশপের বারান্দায় গিয়ে অপেক্ষা করি। অগত্যা পুরাতন ওয়ার্কশপের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। এমন দুর্যোগে পূর্ণ বয়স্ক একটি লোকের সাথে নির্জনে দাঁড়িয়ে থাকাটা মোটেও নিরাপদ নয়। অফিসের চেনা দারোয়ান হলেও সে একজন পুরুষ। মিনিট দশেক হলো আমরা দাঁড়িয়ে আছি। কারো মুখে কোনো কথা নেই। বিদ্যুতের জন্য অপেক্ষা। ল্যাম্প পোস্টের আলোর জন্য অপেক্ষা। কিন্তু এই বিদ্যুৎ কতক্ষণে ফিরেবে তা কে জানে। এদিকে সময় বয়ে যাচ্ছে। একলা মেয়ে মানুষ এত রাত করে বাড়ি ফেরা মোটেও ঠিক না। কিন্তু কী করবো আমি। চাকরিটা ছাড়লে চলবে কী করে? এইসব ভাবনার মধ্যে খেয়ালই করিনি দারোয়ান আমার খুব কাছে গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ ভাবেই আমি একটু সরে দাঁড়ালাম। ক্ষাণিক বাদে বুঝলাম সে আবার আমার গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। আমি আবার সরে দাঁড়াতে যাব হঠাৎ দারোয়ান আমার হাত ধরে ফেলল। বললাম, -কী? কী করছেন কী? ছাড়ুন, হাত ছাড়ুন।
-ভয় পাবেন না ম্যাডাম। যেভাবে আছেন সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকুন। বেশি নড়াচড়া করবেন না। পুরোনো জায়গা। তার উপর সাপের বড় উপদ্রব। গোখরো নয়তো কেউটে কোন কোণে কী লুকিয়ে আছে তা কে জানে। বুঝলেনতো কেউটে একবার কাটলে কিন্তু আর রক্ষা নেই।
দারোয়ান আমার গা ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে রইল। শরীরের মধ্যে কেমন ঘিন ঘিন করছিলো আমার কিন্তু উপায়ও তো নেই। হালকা আলোয় দারোয়ানের দাঁতগুলো দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে সে তার মুখ খুলছে আবার বন্ধ করছে। দারোয়ানের সেই সরু দাঁতগুলো দেখে মনে হচ্ছিলো কেউটের দাঁতও বুঝি এমনি হয়। পরিস্থিতিটা কেমন যেন দম বন্ধ করা তাই অবস্থাটা স্বাভাবিক করতে বললাম,
-আপনার হাতে কী?
দারোয়ান ঝোলার মতো একটা বস্তু নিচে নামিয়ে বলল,
-তেমন কিছু না। বাজারের ব্যাগ। ম্যাডাম আপনাকে একটা কথা বলব কিছু মনে করবেন না তো?
-বলুন।
-এত রাত পর্যন্ত অফিসে কী করেন?
-এটা কেমন ধরনের প্রশ্ন? অফিসে মানুষ কী করে? কাজ করি। দারোয়ান তার সরু দাঁতগুলো বের করে বিশ্রী হেসে বলল, -না, তা ঠিক আছে, তবে একটা মেয়ে মানুষ এত রাত পর্যন্ত অফিসে কী কাজ করে তা কেন যেন আমার মাথায় আসে না। হঠাৎ রাস্তায় কার যেন পা ফেলে চলার শব্দ হলো। বুঝলাম শব্দটা এদিকেই আসছে। বুকের মধ্যে আবার সেই ভয়টা সঞ্চারিত হল। সেই লোকটা! কুৎসিত লোকটা ! দারোয়ানকে লোকটার কথা বলতে যাব ঠিক তক্ষুনি সে আমার গলা আর মুখ ভীষণ শক্ত করে চেপে ধরলো। নিজেকে ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছি তখন দারোয়ান আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল,
-শব্দ করবেন না ম্যাডাম। ওটা ডাকাত। রাস্তার ডাকাত। ডাকাতি করতে গলির মধ্যে ঢুকে পড়েছে। শব্দ করলেই আমাদের উপর এসে পড়বে। আমি চুপ করে গেলাম। দারোয়ান আমার মুখের উপর থেকে তার শক্ত হাতটা সরিয়ে নিতেই খস করে একটা কাশির মতো শব্দ বেড়িয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে গলির ধারে থাকা কুৎসিত লোকটিকে সতর্ক হতে দেখলাম। এতক্ষণ অন্ধকার সয়ে যে আলো চোখের তারায় ভেসে উঠেছে তারই আলোয় দেখলাম লোকটি তার কোমর থেকে লম্বা একটা ছুড়ি বের করেছে। এমন অন্ধকারেও ছুড়িটার চমকে ওঠা তিক্ষ্ম ধার আমার চোখ দু’টোকে এক মুহূর্তের জন্য যেন ঝলসে দিল। ভাবলাম আজ আমার জীবনের বুঝি এখানেই ইতি। দারোয়ান আমাকে হাতের ইশারায় ওয়ার্কশপের ভেতরে ঢুকতে বলে দরজাটা একটু খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ল। উপায় না দেখে আমিও ভেতরে ঢুকলাম। দারোয়ান তার ঝুলির মতো ব্যাগটা দেয়ালের একপাশে নামিয়ে রেখে মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙা একটা কাঠ তুলে নিল। হঠাৎ দরজায় প্রচ- একটা শব্দ। এক মুহূর্তেই পুরোনো কাঠের দরজাটা ভেঙে একেবারে গুঁড়িয়ে গেলো। ছুড়ি হাতে কুৎসিত লোকটা ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকছে। বাইরের চেয়ে এখানকার অন্ধকারটা আরো বেশি নিরেট তাই হয়তো সে আমাদেরকে দেখতে পেল না। দারোয়ান আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সজোরে তার হাতে থাকা কাঠটি দিয়ে লোকটির গায়ে আঘাত করল। যন্ত্রণায় মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল সে। দারোয়ান পর-পর আরো কতগুলো আঘাত করল। লোকটির মধ্যে এখন আর কোনো সারা লক্ষ করা যাচ্ছে না। বললাম, -মরে গেল নাকি?
দারোয়ান তার মোবাইল ফোনের আলোটি জ্বেলে এগিয়ে গেলো লোকটির কাছে। সেই আলোয় তার মুখটি দেখলাম। এমন কুৎসিত মুখ আমি আমার জীবনে কোনোদিন দেখিনি। কালো আর তেল চিটচিটে বিশ্রী নোংরা একখানা মুখ। মুখের একপাশে গভীর বীভৎস একটি কাঁটা দাগ একেবারে গলা পর্যন্ত নেমেছে। ভয়ে আমি দু’পা পিছিয়ে এলাম। দারোয়ান কুৎসিত লোকটির নাকের কাছে হাত রেখে বোঝার চেষ্টা করল তার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কিনা আর তক্ষণী লোকটি তার হাতে থাকা ছুরিটি সজোরে দারোয়ানের বুকে চালিয়ে দিল। একবার, দু-বার, তিনবার, বারবার।
পরে থাকা মোবাইল ফোনের আলোয় দেখলাম ফিনকি দিয়ে দারোয়ানের বুক থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। বুঝলাম এবার আমার পালা। হাত দু’টোকে বুকের কাছে ধরে দেয়ালের সাথে মিশে দাঁড়ালাম। লোকটি শোয়া থেকে এবার উঠে দাঁড়াল। দারোয়ানের রক্ত তার সমস্ত শরীরটাকে একেবারে ভিজিয়ে দিয়েছে। অমন অন্ধকারেও আমি যেন তাকে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার দেখতে পেলাম। খোলা ছুরিটি ধরে ধীরে ধীরে সে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ভাবলাম এক্ষুনি ঐ ধারালো ছুড়িটি আমার জীবন শেষ করে দেবে। এমন একটি মৃত্যুই কি আমার কপালে ছিল!
-ভয় নেই চোখ খুলুন। বলিষ্ঠ সুন্দর একটি কণ্ঠ। অমন কুৎসিত চেহারার পেছনে এত সুন্দর কণ্ঠ থাকতে পারে !
আস্তে আস্তে চোখ খুললাম আমি। লোকটি একটি টর্চ জ্বেলেছে। তার কুৎসিত মুখটি দেখে আমি আবার চোখ বন্ধ করে ফেললাম। লোকটি আবার বলল,
-ভয় নেই। আমি আপনার কোনো ক্ষতি করব না। ওই শয়তানটা একজন খুনি। ছদ্মবেশে এই শহরের অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজের বাহানায় সে নিরীহ নারীদেরকে খুন করেছে। দারোয়ানের ফেলে রাখা ব্যাগটা তুলে নিয়ে তার মধ্যে থেকে আরো একটি ব্যাগ বের করে আমাকে দেখিয়ে বলল, -এই দেখুন বডি ব্যাগ। আপনাকে খুন করে এই ব্যাগে ভরে গুম করে ফেলতো।
আমি আমতা আমতা করে বললাম, -আপনি কী পুলিশের লোক?
লোকটি আমার প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে বলল,
-চলুন আপনাকে রাস্তায় পৌঁছে দেই।